বিভাগ সারাবাংলা

গরিবের সাধ্যের মধ্যেই থাকবে: ড. আসিফ মাহমুদ

সাম্প্রতিক সংবাদ
মুনতাহা মিহীর
Sponsored

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দাবি, ‘অন্ধকারে আশার আলো’ দেখাচ্ছে। এবার নিজেদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে সফল হয়ে কবে আসবে কাঙ্ক্ষিত ভ্যাকসিনটি, সেই দিন গুনছে মানুষ।

সেগুলো সমাধান করতে পারলে চলতি বছরের বিজয়ের মাসে অর্থাৎ ডিসেম্বরেই এই ভ্যাকসিন বাজারে আনা সম্ভব হবে জানিয়েছে গ্লোব বায়োটেক। শুধু তা-ই নয়, বাজারে এলে সেটি দেশের ১৬ কোটি মানুষের কেনার সক্ষমতার মধ্যেই থাকবে বলেও জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির রিসার্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টের প্রধান ড. আসিফ মাহমুদ।

আমরা আপাতত ছয় থেকে আট সপ্তাহ সময় নিচ্ছি আমাদের রেগুলেটেড এনিমেল ট্রায়াল করতে। এরপর আমরা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রটোকল বিএমআরসিতে (বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ) জমা দেব। বিএমআরসির অথোরাইজেশন বোর্ড আমাদের অনুমতি দিলে সিআরও দিয়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে যাব। এরপর আমরা মার্কেট অথোরাইজেশনের জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কাছে যাব।

এক প্রশ্নের জবাবে ড. আসিফ বলেন, দামের বিষয়টি নিয়ে আসলে এখনই এভাবে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে আমার যেটা মনে হয়, যেহেতু এই টিকা বাংলাদেশে তৈরি করতে পারব, তাই দাম বিদেশ থেকে আনা ওষুধের চেয়ে অবশ্যই অনেক কম হবে। তবে সার্বিক খরচটা নির্ভর করছে হিউম্যান ট্রায়ালের ওপরে।

যেগুলো আমাদের হাতের নাগালে নেই। যেহেতু এই ভ্যাকসিনটা আমাদের দেশে প্রথম আবিষ্কৃত হয়েছে, সেহেতু এটা সবার জন্যই নতুন একটি অভিজ্ঞতা। এখানে পদে পদে যেসব প্রতিবন্ধকতা আসবে, সেগুলো আমরা যদি একে একে সমাধান করতে পারি, তাহলে আমি আশা করছি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই করোনা ভাইরাসের এই ভ্যাকসিন আমরা বাজারে আনতে পারব।

কারণ আপনারা জানেন ফেস-১, ফেস-টু, ফেস-৩ সহ আরও বিভিন্ন ধাপে এই কাজগুলো সম্পন্ন করতে হয়। যেহেতু একটা থার্ডপার্টি দিয়ে সিআরও করাতে হয়, তাদের খরচ কেমন, সার্বিকভাবে সবকিছু বিবেচনা করে একটি ড্রাগের মূল্য নির্ধারণ করা হয়। 

তবে আমরা বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরি করেছি একটা উদ্দেশ্য নিয়েই, যেন বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিনটা দিতে পারি। সুতরাং সাধারণ মানুষের কেনার সক্ষমতার মধ্যে দাম থাকবে বলে আশা করছি।

ভ্যাকসিনটির প্রাথমিক পর্যায়ের ট্রায়াল, অগ্রগতি, সামনে কী কী কাজ হবে, আরও কয় ধাপ পেরোতে হবে, কার্যকারিতা কেমন হতে পারে, এমনকি ডেলিভারি মেকানিজম কীভাবে হতে পারে, এ সংক্রান্ত সার্বিক বিষয় নিয়েও কথা বলেছেন ড. আসিফ মাহমুদ।

ভ্যাকসিনটি প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা পাঁচটি খরগোশের ওপরে ট্রায়াল করি। আমরা যেহেতু তিনটা ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট নিয়ে কাজ করছি, সে কারণে তিনটা ক্যান্ডিডেট আমরা তিনটি খরগোশের শরীরে প্রয়োগ করি। এরপর একটা খরগোশ কন্ট্রোলড থাকে, যেটাতে আমরা কোনো ভ্যাকসিন প্রয়োগ করিনি।

আমরা মোট চারটি ক্যান্ডিডেট এবং তিনটি ডিফারেন্ট ডেলিভারি মেকানিজম নিয়ে কাজ করছি।‌ আমাদের বর্তমান ট্রায়ালে তিনটি টার্গেট। একটি ডেলিভারি মেকানিজম নিয়ে। আমরা আরও ব্যাপকভাবে এনিমেলের ওপর ট্রায়াল করব। সেখানে আরও নয়টি ক্যান্ডিডেটের ট্রায়াল হবে। সার্বিক ফলাফল পর্যালোচনা করে যে ক্যান্ডিডেটের রেজাল্ট বেশি সুইটেবল হবে, আমরা সেটা নিয়েই হিউম্যান ট্রায়ালে যাব।’

আরেকটি খরগোশের শরীরে আমরা প্লাসিবো দিই, সেখানে ভ্যাকসিনের অ্যাক্টিভ ম্যাটারিয়াল ছিল না, শুধু ফর্মুলেশন বাফার দেওয়া হয়। কন্ট্রোলে যেটা ছিল, সেটাতে কোনো কিছুই ইনজেক্ট করা হয়নি। আর যে খরগোশটিকে প্লাসিবো দেওয়া হয়, সেটি নরমাল ছিল। এরপর ১৪তম দিনে আমাদের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা তিনটি খরগোশের শরীর থেকে রক্ত সংগ্রহ করি। রক্ত থেকে সিরাম আলাদা করে আমরা দেখতে পাই তিনটি খরগোশের শরীরেই যথেষ্ট পরিমাণে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে।

আসিফ মাহমুদ এও বলেন, আমি প্রথমেই বলেছি, আমরা একটি বায়ো ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি। বায়ো ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানি হিসেবে বায়োলজিকস প্রডাক্ট বিষয়ে কাজের অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। সেই অভিজ্ঞতা আমরা এখানে পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছি। বায়োলজিকস প্রডাক্ট কোয়ালিটি অত্যন্ত কঠিনভাবে মেইনটেইন করতে হয়। আমরা করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরি করতে গিয়েও সেই কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করেছি। 

টোটাল প্রসেসিং কোয়ালিফাইড করেই আমাদের ফাইনাল ফর্মুলেশন প্রোডাক্টটা তৈরি করতে পেরেছি। সে কারণে আমরা ইনিশিয়াল ট্রায়ালে কোনো ধরনের টক্সিসিটি পাইনি। সুতরাং আমরা বলতে পারি এটা মানুষের শরীরেও কোনো ধরনের টক্সিসিটি তৈরি করবে না। 

এখন মূল কথা, মানুষের শরীরে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারবে কি-না, সেটা শরীরে প্রয়োগ করলেই জানা সম্ভব। আমাদের আত্মবিশ্বাসের জায়গাটা হচ্ছে, বিশ্ববিখ্যাত যত ভ্যাকসিন কোম্পানির নাম শুনবেন, যেমন আমেরিকার মর্ডানা, তারা একটিমাত্র ক্যান্ডিডেট এবং একটি ডেলিভারি সিস্টেম নিয়ে কাজ করছে। কিংবা যুক্তরাজ্যের ড. সারাহ গিলবার্ট টিমের কথা শুনবেন, তারাও ভাইরাল ফ্যাক্টর ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছে। 

তবে আমরা একইসঙ্গে ১২টি ক্যান্ডিডেট নিয়ে কাজ করছি। তাই আমাদের টিকার সফলতার হার নিয়ে আমরা গভীর আত্মবিশ্বাসী।

গবেষক আসিফ মাহমুদ বলেন, করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রজেক্টটা তৈরি করেছি বায়োটেক লিমিটেডের পক্ষ থেকে। এটা একটা বায়ো ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি। আমরা বায়োলজিকস ড্রাগ তৈরি করি। কিন্ত গত ০৮ মার্চ যখন দেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়, তখন আমরা দৃষ্টি দিই কোভিড-১৯ রোগের দিকে। 

আমরা একসঙ্গে তিনটা প্রজেক্ট নিয়ে কাজ শুরু করি। রিসার্স এবং ডেভেলপমেন্ট টিমের নেতৃতে আমি রয়েছি। আর আমাদের ওভারঅল সবগুলো প্রোজেক্টের প্ল্যানিং এবং তত্ত্বাবধান করেন গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও গবেষক দলের প্রধান ড. কাকন নাগ এবং প্রতিষ্ঠানের সিওও ড. নাজনীন সুলতানা। এছাড়াও আমাদের কোম্পানির আরও অনেকেই বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করেছেন এবং করছেন।

আমরা যেটা করেছি, যখন টার্গেট সিলেক্ট করি, তখন ডাটাবেজে যতগুলো সিকোয়েন্স সাবমিটেড হয়েছিল, এর মধ্যে বাংলাদেশের সিকোয়েন্সও ছিল, সবগুলো সিকোয়েন্স এনালাইসিস করেই আমরা টার্গেট করি। প্রতিনিয়ত যত নতুন নতুন সিকোয়েন্স আসছে, সেগুলোকেও আমরা কনসিডার করছি।

ড. আসিফ আরও বলেন, আমরা কিন্তু পুরো ভাইরাসকে ভ্যাকসিনের টার্গেট হিসেবে গ্রহণ করিনি। টার্গেট হিসেবে আমরা করোনা ভাইরাসের একটি পোর্শন নিয়েছি। কোন পোর্শন নেব, সেটার জন্য আমাদের কিছু বায়োইনফরমেটিক্স সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হয়েছে।

আমরা যে টার্গেট সেট করেছি, সেটা কতটা অ্যাপ্রোপ্রিয়েট হলো, সেটাও দেখছি। ওই টার্গেটের মাঝখানে কোনো মিউটেশন হলো কি-না, সেটাও দেখছি। এসব আবার আমাদের ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি তৈরিতে কোনো ধরনের বাধা দেবে কি-না, সেটাও খেয়াল রাখছি। এরপরেও ভ্যাকসিন প্রতিনিয়ত আপডেট করার সুযোগ রয়েছে।

Sponsored
Leave a Comment

সর্বশেষ

পিটিয়ে হত্যা: ভিডিওতে শনাক্ত ছাত্রদলের ৫ নেতাকর্মী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে…

September 21, 2024

২০২৩ এর সফল ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ড পেলেন সাইমন সাদিক

সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…

March 4, 2024

ডিআর কঙ্গোতে শান্তিরক্ষী মিশনে  সেনাবাহিনীর ‘আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ মোতায়েন

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো…

March 3, 2024

প্রধানমন্ত্রীকে পুতিনের অভিনন্দন

পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…

January 12, 2024

আওয়ামী লীগের বিজয় উৎসব উদযাপন করলো রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন

রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…

January 10, 2024

পর্যবেক্ষণে গিয়ে সন্তুষ্ট যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড ও সুইস পর্যবেক্ষকরা

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…

January 7, 2024
Sponsored