টেকনাফ-উখিয়া আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক ইসমাইল হোসেন রবিবার দুপুরে শুনানি শেষে এই আদেশ দিয়েছেন।
মামলাটি দায়ের করার প্রায় ১৩ বছর পর বিচার শুরু হলো। আগামী ১৫ অক্টোবর মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করেছে আদালত।
অভিযোগ গঠনের শুনানির সময় আদালতের কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন সাবেক, এই বিতর্কিত সংসদ সদস্য। যিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি তালিকায় শীর্ষ স্থানীয় গডফাদার ছিলেন। অবশ্য, দুর্নীতি দমন কমিশনের অন্য একটি মামলায় ইতোমধ্যে বদির বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণা করেছে ঢাকা একটি আদালত।
সেই মামলাটি তিনি কারাগারে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান। উচ্চ আদালতে মামলাটি এখন বিচারাধীন আছে।
মামলার বিচার শুরুর আদেশ দেওয়ার আগে আসামি বদিকে তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনীত অভিযোগ পড়ে শোনানো হয়। এরপর আদালত বদিকে প্রশ্ন করেছেন, আপনি দোষী নাকি নির্দোষ।
এই সময় বদি বলেন, আমি নির্দোষ, সুবিচার চাই। বদির এমন বক্তব্যের পর আদালত বিচার শুরুর আদেশ দিয়ে পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেন।
২০০৭ সালে দায়ের করা মামলায় বদির বিরুদ্ধে ৫৬ লাখ ১১ হাজার ৫০০ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন এবং জ্ঞাত আয়ের বাইরে ৭৯ লাখ ৩৭ হাজার ৭৯৭ টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে।
এই মামলাটি বদির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘদিন স্থগিত ছিল। সর্বশেষ ২০১৭ সালে উচ্চ আদালত সেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেয়। এরপর মামলাটি সচল হয়।
অভিযোগ গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের কৌসুলি সানোয়ার হোসেন লাভলু।
তিনি বলেন, সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ২০০৭ সালে চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানায় দুর্নীতি দমন কমিশন একটি মামলা দায়ের করেছিল। ওই মামলার তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ২৪ জুন আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছিলেন দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, আসামির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে মামলাটি প্রায় ১২ বছর অচল ছিল। এখন পুনরায় সচল হলো। আশা করি, সাক্ষ্যদের সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে মামলার বিচার কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করা শেষ হবে। তাহলে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা পাবে।
আবদুর রহমান বদি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে ২০০৮ ও ২০১৪ সালে দুই দফা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি আর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। শেষ দফায় মনোনয়ন পান তাঁর স্ত্রী।
বদি যখন সংসদ সদস্য থাকাকালীন সময়েই তাঁর বিরুদ্ধে ইয়াবা পাচারের অভিযোগ উঠে। মূলত তখন নিজের সাঙ্গপাঙ্গদের নানাভাবে কাজে লাগিয়ে তিনি ইয়াবা পাচারে জড়ান বলে অভিযোগ ছিল।
এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাদকপাচারকারী তালিকার শীর্ষে উঠে আসে আবদুর রহমান বদির নাম।
ইয়াবা গডফাদার খ্যাতি পাওয়া আবদুর রহমান বদির সম্পদের বাড়বাড়ন্ত অবস্থা হয়। তখন তিন কোটি ৯৯ লাখ ৫৩ হাজার ২৭ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের দায়ে অভিযুক্ত হন বদি।
ওই মামলাটিও করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন। সেই মামলায় ঢাকার আদালত বদিকে তিন বছরের কারাদ- দেয়। ২০১৬ সালে আদালতের দেওয়া ওই রায়ের পর তিনি পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকেট বঞ্চিত হন।
আর এর মাধ্যমে কপাল খুলে তাঁর স্ত্রী শাহীনা আক্তার চৌধুরী। বদির স্ত্রী এখন আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্য সদস্য।