বিভাগ সারাবাংলা

নেটওয়ার্ক নাই গাছে উঠে ক্লাস করা লাগছে

সাম্প্রতিক সংবাদ
মুনতাহা মিহীর
Sponsored

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসাইন। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের পর থেকেই ঝিনাইদহে গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছেন তিনি। গেলো জুন মাসে তার বিভাগে অনলাইন ক্লাস চালু হওয়ার পর বিপাকে পড়েছেন তিনি। কারণ তার এলাকায় ইন্টারনেটের দুর্বল নেটওয়ার্ক।

আমি কয়েকটা ক্লাস করেছি। কিন্তু নেট এতো দুর্বল যে, ঠিকমতো টিচারদের লেকচার দেখা কিংবা শোনা যায় না। একদিন এমনও হয়েছে যে, ক্লাসের মাঝামাঝি সময়ে হঠাৎ করে বাফারিং শুরু হলো। নেটওয়ার্ক নাই। তখন বাকি ২৫ মিনিট আমাকে গাছে উঠে ক্লাস করা লাগছে।

এখন তিনি বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে যেখানে ইন্টারনেট তুলনামূলক ভালো পাওয়া যায়, সেখানে গিয়ে ক্লাস করছেন। কিন্তু এখন তার নতুন চিন্তা ইন্টারনেটের খরচ। সপ্তাহে যদি ২০টা ক্লাসও হয়, আমি হিসেব করে দেখলাম আমার ছয় থেকে সাতশত টাকা খরচ হবে, বলেন এই শিক্ষার্থী। এইসময়ে এসে এই টাকা আমার পারিবারের পক্ষে যোগান দেয়া সম্ভব নয়। ঢাকায় টিউশনি করে আমি আমার নিজের খরচ নিজেই চালাতাম। এখন সেটাও বন্ধ।

গেলো মে মাসে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ১৯ হাজার শিক্ষার্থীর ওপর একটি জরিপ পরিচালনা করে।

জরিপে তারা দেখতে পেয়েছেন ৮৭ শতাংশ শিক্ষার্থীর কাছে অনলাইন ক্লাসের জন্য স্মার্ট ফোন রয়েছে।

কিন্তু যাদের স্মার্টফোন নেই কিংবা থাকলেও নেটওয়ার্কের দুর্বলতা বা ইন্টারনেটের ব্যয় বহন করার মতো অবস্থায় নেই, তারা ক্লাস করতে না পারায় পিছিয়ে পড়বে বলেই অভিযোগ করছেন শিক্ষার্থীরা।

দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রায়হানা সুলতানা জানাচ্ছেন, তিনি এখনো পর্যন্ত কোনো ক্লাসেই অংশ নিতে পারেননি।

কিন্তু পুরো এলাকায় ভালো নেটওয়ার্ক নেই। সবসময় টু’জি স্পিড। তাছাড়া আমাদের মতো নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে ইন্টারনেটের খরচ জোগানোও অসম্ভব। আমাদের ক্লাসে এরকম আরো অনেকে আছে যারা প্রত্যন্ত এলাকায় থাকে। আমরা তো ক্লাস করতে না পেরে পিছিয়ে পড়ছি, অভিযোগ তার।

আরেকজন শিক্ষার্থী নাজাহ নাহিয়ান বলেন, তাদের অনেক সহপাঠি ক্লাস করতে না পেরে পিছিয়ে পড়ছেন। আমাদের ক্লাসে ২শ শিক্ষার্থী আছেন। এখন ৫০ জন ক্লাস করতে পারছেন না। এটা কি তাদের শিক্ষাজীবনে ক্ষতি হচ্ছে না? এখানে তো অনলাইন ক্লাস বৈষম্য তৈরি করছে। আমাদের কাছে মনে হচ্ছে, আমরা যেনো অনলাইন কোর্স করছি। যাদের টাকা আছে বা সুবিধা আছে তারাই এটা নিতে পারছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আরো আগেই অনলাইন ক্লাস চালু করলেও সেখানকার শিক্ষার্থীরাও নানা অভিযোগ করছেন। ঢাকার আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মুমু মমতাজ বলছেন, নেটওয়ার্ক সমস্যা ছাড়াও পড়া বুঝতেও অসবিধা হচ্ছে।

তিনি বলছেন, সরাসরি ক্লাসে যেভাবে পড়া বোঝাতেন টিচাররা, এখানে সেভাবে হচ্ছে না। তাছাড়া সিনিয়র টিচার যারা আছেন, তাদের অনেকেরই অনলাইনের প্রযুক্তিতে ঘাটতি আছে। তারাও চেষ্টা করছেন, কিন্তু সমস্যা হচ্ছেই। এছাড়া ঢাকার বাইরে আমাদের যেসব বন্ধুরা আছে, তারাও নেটওয়ার্কজনিত সমস্যায় ভুগছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, ল্যাপটপ না থাকায় তাকে হাজার দুয়েক শব্দের অ্যাসাইনমেন্ট মোবাইলেই লিখতে হচ্ছে। যেটা খুবই কষ্টকর।

উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান জানান, শিক্ষার্থীদের সমস্যা তারাও অবহিত আছেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, কাউকে বেশি সুবিধা দেয়া বা কাউকে বঞ্চিত রাখা- এমন উদ্দেশ্য তাদের নেই।

তিনি বলেন, আমাদের এতোগুলো ছেলে-মেয়ে তাদের কী কী সাপোর্ট লাগবে? কাউকে হয়তো স্মার্টফোন লাগবে, কোথাও হয়তো আর্থিক সাহায্য লাগবে। এগুলো লাগবে। কিন্তু তারপরেও বলছি, এগুলোর ব্যবস্থা করে তারপরে কি অনলাইনে যাবো? নাকি আগেই যাবো আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমাদের যতটুকু সামর্থ্য আছে তা নিয়েই আমরা শুরু করি। তাহলে কোথায় ঘাটতি আছে, কতটুকু কী লাগবে সেটি বুঝে নিরূপণ করা সহজ হবে।

তিনি বলছেন, ক্লাস শুরু হলেও অনলাইনে পরীক্ষা নেয়া হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় খুললে তখন পর্যাপ্ত রিভিউ ক্লাস নিয়ে ঘাটতি পূরণ করার চেষ্টা হবে।

তবে এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য আইটি অবকাঠামো, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য সরকারের অর্থ সাহায্য লাগবে বলে মত দিচ্ছেন তিনি। একই মত দিচ্ছেন, বেসরকারি ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম এম শহিদুল হাসান।

তিনি বলছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ঋণ সাহায্য দরকার। প্রত্যেক ইউনিভার্সিটিতে একটা আইটি সেক্টর আছে। সেই আইটি সেক্টর একটা ধারণা দিতে পারবে, তাদের কী করতে হবে। এখানে কিছু প্রবলেমও আছে।

যেগুলোর ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণের জন্য ইউজিসি’র মাধ্যমে সরকারের কাছে যেতে হবে। যার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে। এখানে ইউজিসিকে একটা কো-অর্ডিনেশনের ভূমিকা নিতে হবে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কাজী শহীদুল্লাহ জানিয়েছেন, কমিশনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের যে বৈঠক হয়েছে সেখানে নানারকম দাবি-দাওয়া, পরামর্শ এসেছে।

শিক্ষার্থীদের সহায়তা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য ঋণের ব্যবস্থা, ফ্রি ইন্টারনেট এ ধরনের দাবিগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে।

Sponsored
Leave a Comment

সর্বশেষ

পিটিয়ে হত্যা: ভিডিওতে শনাক্ত ছাত্রদলের ৫ নেতাকর্মী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে…

September 21, 2024

২০২৩ এর সফল ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ড পেলেন সাইমন সাদিক

সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…

March 4, 2024

ডিআর কঙ্গোতে শান্তিরক্ষী মিশনে  সেনাবাহিনীর ‘আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ মোতায়েন

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো…

March 3, 2024

প্রধানমন্ত্রীকে পুতিনের অভিনন্দন

পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…

January 12, 2024

আওয়ামী লীগের বিজয় উৎসব উদযাপন করলো রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন

রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…

January 10, 2024

পর্যবেক্ষণে গিয়ে সন্তুষ্ট যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড ও সুইস পর্যবেক্ষকরা

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…

January 7, 2024
Sponsored