বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে শুক্রবার বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রথমবারের মতো ভার্চুয়াল আর্ট, ফটোগ্রাফি ও মাল্টিমিডিয়া প্রদর্শনী ‘ব্রেভ হার্ট’ শুরু হয়েছে।
৪২ প্রখ্যাত শিল্পীর কাজ নিয়ে গ্যালারি কসমস আয়োজিত এ বিশেষ ভার্চুয়াল প্রদর্শনী ভিডিও, ফটো ও বই স্থান পাওয়া এ বহুমাত্রিক প্রদর্শনীতে সহযোগী হিসেবে থাকছে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান কসমস গ্রুপের জনহিতকর সংস্থা কসমস ফাউন্ডেশন।
চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খানের সভাপতিত্বে এ প্রদর্শনীর অনলাইন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি মফিদুল হক এবং প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ডেনভার বিশ্ববিদ্যালয়ের জোসেফ কর্বেল স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের অর্থনীতি বিভাগের বিশিষ্ট অধ্যাপক হায়দার আলী খান।
কসমসের পরিচালক তাহমিনা এনায়েতও অনুষ্ঠানে যোগ দেন এবং এতে সমাপনী বক্তব্য রাখেন।
মিডিয়া ও নলেজ পার্টনার হিসেবে থাকছে ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশ এবং এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ঢাকা ক্যুরিয়ার।
এনায়েতুল্লাহ খান বলেন, রেভ হার্ট শব্দটি লায়ন হার্ট’র অর্থকে পুনর্নির্দেশ করে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন আমাদের দেশ ও জাতির জন্য সেই সিংহের প্রতীক।
স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র তিন বছরের মধ্যে তিনি সফলভাবে বাংলাদেশকে উদাহরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন এবং সমগ্র বিশ্ব থেকে সম্মান অর্জন করেছিলেন।
জাতির পিতার ঘটনাবহুল জীবন ও কর্ম সম্পর্কে দেশ এবং জনগণকে অবশ্যই জানতে হবে। তিনি বলেন, ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড নিঃসন্দেহে মানবজাতির ইতিহাসের অন্যতম বর্বর এবং নিকৃষ্টতম ঘটনা।
স্বাধীনতার পর বিশ্বাসঘাতকরা বঙ্গবন্ধুকে খুব বেশি সময় দেয়নি, তবে তিনি উজ্জ্বলতার সঙ্গে দেশের গৌরবকে অস্পৃশ্য উচ্চতায় ধরে রাখতে পেরেছিলেন।
১৫ আগস্ট জাতির পিতা, তার পরিবারের সদস্য এবং তার সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল উদ্দিন আহমদসহ সকল শহীদের স্মরণে অনুষ্ঠানে দশ সেকেন্ড নীরবতা পালন করা হয়।
বিশ্বাসঘাতকরা আমাদের জাতির পিতাকে হত্যা করেছিল, কিন্তু এ ধরনের আয়োজনের মধ্য দিয়েই তিনি সর্বদা আমাদের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রথম ভার্চুয়াল প্রদর্শনী আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে আমরা বিশ্বজুড়ে মহামারির এ সংকটময় সময়েও শিল্পের মাধ্যমে একতাবদ্ধ হতে পারি।
বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রটি ছিল আমি তোমাদেরই একজন যা তিনি তার সারা জীবন ধরে সত্যিকার অর্থেই বোঝাতে চেয়েছিলেন।
হায়দার আলী খান এ প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের অংশ হতে পেরে নিজেকে গর্বিত বলে অভিহিত করে বলেন, এ সত্যিকারের প্রথম ভার্চুয়াল গ্যালারিতে যেকোনো ব্যক্তি জাতির জনককে সত্যিকার অর্থেই অনুভব করতে পারবে।
একজন নেতা হলেন যিনি পথ জানেন, পথ দেখান, সেই পথে চলেন- এবং বঙ্গবন্ধু এ আদর্শের এক প্রতিমূর্তি। তিনি স্বাধীনতার অনেক আগে থেকেই নিজেকে বাংলাদেশের আদর্শ নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।
তিনি তার জীবদ্দশায় কতটা অনুসরণীয় নেতা ছিলেন তা জানতে বঙ্গবন্ধুর তিনটি উল্লেখযোগ্য বক্তৃতা- ১৯৭০ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের বক্তব্য, ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ এবং জাতিসংঘ অধিবেশনে তার বক্তব্য এগুলো সবারই জানা উচিত।
প্রতিটি জাতির বঙ্গবন্ধুর মতো নেতা এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিলের মতো একজন সত্যিকারের সহযোগী প্রয়োজন, যিনি একজন বীর দেশপ্রেমিক।
অনেকে প্রায়শই শহীদ কর্নেল জামিলের ত্যাগ ভুলে যান, যিনি একজন দেশপ্রেমিক এবং সাহসী ব্যক্তি ছিলেন। কর্নেল জামিলই একমাত্র ব্যক্তি যিনি ১৫ আগস্ট ভোরে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন এবং মহান এ নেতা ও তার পরিবারকে বাঁচাতে নির্ভীকভাবে এগিয়ে গিয়েছিলেন।
জামিলের পরিবারের সকল সদস্যের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা এবং আন্তরিক শ্রদ্ধা যারা প্রতিটি সম্ভাব্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নান্দনিক উন্নতির জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমাদের জাতির পিতাকে হারিয়েছিলাম এবং আমি সেদিন আমি আমার বাবাকেও হারিয়েছি। বঙ্গবন্ধু জনগণের নেতা ছিলেন যিনি নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী ছিলেন এবং তিনি সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছিলেন। ফিদেল কাস্ত্রো বলেছিলেন ‘আমি হিমালয় দেখিনি তবে বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি’ এবং এ বক্তব্যই প্রমাণ করে যে বঙ্গবন্ধু সত্যিকার অর্থেই কেমন মানুষ ছিলেন।
অংশ নেওয়া শিল্পীরা হলেন- এএইচ ঢালী তমাল, আবদুল গফফার বাবু, আবদুল্লাহ আল বশির, আফরোজা জামিল কনকা, আহমেদ শামসুদ্দোহা, অলকেশ ঘোষ, আলপ্তগীন তুষার, আমিরুল মোমেনিন চৌধুরী, অমিত নন্দী, আনিসুজ্জামান আনিস, অনুকুল চন্দ্র মজুমদার, আজমির হোসেন, আজমল হোসেন, বীরেন সোম, বিশ্বজিত্ গোস্বামী, ধীমান কুমার বিশ্বাস, দিলীপ কুমার কর্মকার, ফরহাদ হোসেন, হামিদুজ্জামান খান, ইকবাল বাহার চৌধুরী, জামাল আহমেদ, জয়ন্ত মন্ডল, জয়ন্ত সরকার জন, কামরুজ্জোহা, কুহু কুহু প্লামন্দন, মানিক বনিক, মো. আজমল উদ্দিন, মো. জসিম উদ্দিন, নাজিব তারেক, নাসিম আহমেদ নাদভী, নাসির আলী মামুন, নাজিয়া আন্দালিব প্রিমা, নিসার হোসেন, প্রশান্ত কর্মকার, রত্নেশ্বর শুত্রধর, রুহুল করিম রুমী।
প্রদর্শনী আয়োজনের জন্য গ্যালারি কসমস, কসমস ফাউন্ডেশনের পরিচালক নাহার খান, ইউএনবি এবং ঢাকা কুরিয়ারকে ধন্যবাদ জানান। পরে অতিথিরা প্রদর্শনীর উদ্বোধন ঘোষণা করেন।