পুলিশ অফিসার এবং বাহিনীর জন্য বাস্তবসম্মত বদলি ও পদায়ন নীতিমালা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের মাধ্যমে বদলির তদবির কালচার বিদায় করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।
আইজিপি জানান, ইতোমধ্যে গতানুগতিক ধারা পাল্টে বদলিতে আনা হয়েছে নতুনত্ব। অধিকাংশ পুলিশ অফিসার এবং সদস্য সন্তানদের লেখাপড়ার সুবিধার কথা বিবেচনা করে ঢাকার বাইরে যেতে চান না, এই সংকট নিরসনের লক্ষে ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরে মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের উদ্যোগের কথা জানান আইজিপি।
আজ শনিবার বিকেলে রাজারবাগে পুলিশ অডিটোরিয়ামে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) আয়োজিত বিশেষ অপরাধ ও আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা জানান। ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ডিএমপির সব থানার ওসিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দেশের বিভাগীয় পর্যায়ে পুলিশের চাকরিকে আর্কষণীয় করতে বিভাগীয় শহরগুলোতে পুলিশ সদস্যদের জন্য মানসম্মত চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের পর পুলিশ এতো সম্মান, এতো মর্যাদা আর কখনো পায়নি, গত তিনমাসে যা পেয়েছে। এখন জনগণ পুলিশের পক্ষে কথা বলছে, পুলিশের জন্য লিখছে, যারা কথায় কথায় পুলিশের সমালোচনা করতেন, তারাও আজ পুলিশের পক্ষে হৃদয় উজাড় করে বলছেন, পুলিশকে সমর্থন করেছেন। যে সম্মান-মর্যাদা আমরা গত তিন মাসে পেয়েছি তা টাকা দিয়ে কেনা যায় না, মানুষের ভালোবাসা পেতে হলে মানুষের সাথে থাকতে হয়, তাদের কাছে যেতে হয়, মানুষকে ভালোবাসতে হয়।
বেনজীর আহমেদ বলেন, করোনাভাইরাসের এ সময়ে গত তিন মাসে পুলিশ বদলে গেছে। পুলিশ জনগণের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন ও বিশ্বাস অর্জন করেছে। করোনায় পুলিশ জনগণের পাশে গিয়ে যেভাবে সেবা দিয়েছে, এর বেশিরভাগই পুলিশের কাজ ছিল না। কিন্তু পুলিশ এ কাজটি করেছে একান্তই নিজের দায়িত্ববোধ থেকে।
করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের সর্বোচ্চ চিকিৎসায় গৃহীত পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালকে মাত্র দুই সপ্তাহে ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল থেকে ৫০০ শয্যার কভিড হাসপাতালে পরিণত করা হয়েছে। করোনা পরীক্ষার জন্য মাত্র ১২ দিনে পিসিআর মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। ঢাকায় একটি হাসপাতাল ভাড়া করা হয়েছে। ঢাকার বাইরে বিভাগীয় হাসপাতাল আধুনিকায়ন করা হয়েছে।
জনগণের পুলিশ হতে হলে এ বাহিনীকে সব ধরনের দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে। পুলিশে কোনো দুর্নীতিবাজের ঠাঁই নেই। মাদকের সাথে কোনো পুলিশ সদস্যের সম্পর্ক থাকবে না। পুলিশকে হতে হবে মাদকমুক্ত। পুলিশকে যেতে হবে জনগণের দোরগোড়ায়।
আইজিপি আশা প্রকাশ করে বলেন, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে, ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে আরও ভালো কিছু করা সম্ভব। আসুন, আমরা পরিবর্তিত হই, দেশকে পরিবর্তন করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলি।
তিনি বলেন,শুধু তাই নয়, পুলিশ সদস্যদের সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে আবাসন ব্যবস্থা এবং ডিউটিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। ফলে পুলিশ সদস্যদের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা কমেছে এবং মৃত্যু হার হ্রাস পেয়েছে।
আইজিপি বক্তব্যের শুরুতে করোনায় দায়িত্ব পালনকালে জীবন উৎসর্গকারী ৪৬ পুলিশ সদস্যের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনাও জানান। আইজিপি এসব পরিবারের অংশ হিসেবে সুখে-দুঃখে তাদের সাথে থাকার দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।