বিভাগ সারাবাংলা

দেশের মানুষের জন্য কিছু করার খুব চেষ্টা করছি : ড. আসিফ মাহমুদ

সাম্প্রতিক সংবাদ
মুনতাহা মিহীর
Sponsored

করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের মাধ্যমে আমরা দেশের এবং দেশের মানুষের জন্য কিছু একটা করার খুব চেষ্টা করছি। ভ্যাকসিন তৈরির প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকেই আমাদের মধ্যে সেই আবেগ কাজ করছে। ভ্যাকসিন তৈরির জন্য আমরা আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করছি। গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টের প্রধান ড. আসিফ মাহমুদ

গবেষণার নতুন কোনো কাজ কিন্তু একবারে হয় না। এর ব্যর্থতা থাকে, আবার সফলতাও আসে। গত শুক্রবার যখন আমরা করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করলাম তখন আমাদের সবার মধ্যেই আবেগ কাজ করছিল। আমি যখন প্রেজেন্টেশন করছিলাম তখন সøাইডে এমন কিছু আবেগপূর্ণ কথা ছিল যে তা বলতে গিয়ে আমি কিছুটা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ি। ভ্যাকসিন তৈরির গবেষণা কীভাবে শুরু হয়েছিল, তা জানতে চাইলে ড. আসিফ মাহমুদ বলেন, গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের সিইও ড. কাকন নাগ ও সিওও ড. নাজনীন সুলতানার উদ্যোগে ভ্যাকসিন তৈরির প্রকল্প শুরু করি। তারা ২০১৫ সালে এ সংক্রান্ত প্রকল্প দেশে নিয়ে আসেন। আমাদের চেয়ারম্যান স্যার মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আমাদের সঙ্গেই ছিলেন।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে আমরা এই কোম্পানিতে একটি টিম হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজে যোগদান করি। গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড প্রধানত একটি ড্রাগ ডিসকভারি কোম্পানি। আমাদের চেয়ারম্যান ও সিইও আমাদের এখানে কাজের জন্য রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আর অ্যান্ড ডি) ফ্যাসিলিটিসহ প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিয়েছেন। আমরা ২০১৬ সাল থেকে পুরো টিম মিলে এ পর্যন্ত ১৮টি বায়োসিমিলার আর অ্যান্ড ডি থেকে তৈরি করেছি। যার মধ্যে ৬টি বায়োসিমিলার সব ফেইজ পার করার পর এনিমেল ট্রায়াল করে বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি)-তে হিউম্যান ট্রায়ালে অনুমোদনের জন্য দিয়েছি। এর মাধ্যমে আমরা যে ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশের একটি ড্রাগ ডিসকভারি কোম্পানি হিসেবে পরিপূর্ণ সেটআপ নিয়ে ছিলাম সে হিসেবে নিজেদের সক্ষমতা বোঝালাম। আমরা একটা নতুন প্রকল্প নিয়ে কাজ করছিলাম কিন্তু এ বছরের মার্চের ৮ তারিখে জানতে পারলাম যে দেশে একজন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। তখন আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বললাম। তারা আমাদের বললেন যে, করোনাভাইরাস বাংলাদেশে চলে এসেছে এবং এ জন্য বিশ্বব্যাপী মহামারী হবে

ভ্যাকসিন তৈরির সঙ্গে কারা জড়িত জানতে চাইলে গবেষক বলেন, আমাদের করোনা ভ্যাকসিন তৈরির এই প্রকল্পটিকে একটি কোড দিয়ে নামকরণ করেছি। অন্য প্রকল্পগুলোর মতো এটিও একটি গোপনীয় প্রকল্প। আমরা মোট ছয়জন এ প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত। আর গোপনীয়তা রক্ষার জন্য এ ছয়জনের বাইরে আর কাউকেই এ সম্পর্কে জানাইনি। তবে আমাদের সিইও ড. কাকন নাগ ও সিওও ড. নাজনীন সুলতানা সবসময়ই আমাদের কাজ তত্ত্বাবধান করছেন। প্রতিদিন সকালে আমাদের করণীয় সম্পর্কে সিইওর কাছ থেকে দিকনির্দেশনা পেতাম। আবার সন্ধ্যায় কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানাতাম। যেহেতু আমাদের সিইও এইচআইভির ভ্যাকসিন প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এ জন্য আমাদের সব ধরনের দিক নির্দেশনাই আমরা তার কাছ থেকে পাই।

ভ্যাকসিন তৈরির অগ্রগতি সম্পর্কে ডা. আসিফ মাহমুদ বলেন, আমরা ছয় থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে প্রিলিমিনারি ট্রায়ালের ডাটাগুলোকে রেগুলেটেড ট্রায়ালে রূপান্তরিত করতে পারব বলে আশাবাদী। আর সেই ডাটা নিয়েই আমরা বিএমআরসিতে এথিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদনের জন্য আবেদন করব। আর এই আবেদন সেপ্টেম্বরের শুরুতে করব বলে আশা করছি। আমরা বিএমআরসির কাছে এথিক্যাল ট্রায়ালের জন্য আবেদন করব থার্ড পার্টি কন্ট্রাক রিসার্চ অর্গানাইজেশনের (সিআরও) মাধ্যমে। কারণ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের বিষয়টি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান করতে পারে না। এটা থার্ড পার্টির মাধ্যমেই করতে হয়। তাদের মাধ্যমেই আবেদনটি বিএমআরসির কাছে যাবে। বিএমআরসি সেটা যখন অনুমোদন করবে তখন সিআরও তাৎক্ষণিক ভলেন্টিয়ার রিক্রুটমেন্ট করে ট্রায়ালের ফেইজ ১, ২ ও ৩ ধাপ সম্পন্ন করবে। আর এই ট্রায়াল শেষ হলে সম্পূর্ণ ডাটা নিয়ে আমাদের ডাইরেক্টর জেনারেল অব ড্রাগ এডমিনিসট্রেশন (ডিজিডিএ)-তে মার্কেট অথরাইজেশনের জন্য সাবমিশন করতে হবে। ভ্যাকসিন বাজারজাত করা হলে তা সাশ্রয়ী হবে কিনা এমন প্রশ্নে ড. আসিফ বলেন, মার্চ মাসে এই প্রকল্পটি শুরু করার পেছনে আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ যেন এই ভ্যাকসিনটি পায়। আমাদের কোম্পানির স্লোগানও ‘ইনোভেশন থ্রু এক্সিলেন্স’। আর এই কোম্পানির মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে বায়োলজিক্যাল ড্রাগ তথা জীবন রক্ষাকারী দামি ওষুধগুলোকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এই ধারণা থেকেই আমরা করোনার ভ্যাকসিন তৈরির প্রকল্প শুরু করি। ডা. আসিফ মাহমুদ আরও বলেন, হিউম্যান ট্রায়ালে কি ধরনের ভলান্টিয়ার হবে, তার খরচ কেমন হবে এবং সিআরও ঠিক করাসহ তাদের খরচও জানতে হবে আর তার ওপর ভিত্তি করেই ভ্যাকসিনের মূল্য নির্ধারণ করা হবে। আর যেহেতু ভ্যাকসিনটি দেশের মানুষের জন্য বানানো হবে এ কারণে এটি সাধারণের ক্রয়সীমার মধ্যেই থাকার কথা। ভ্যাকসিন তৈরিতে কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন কিনা তা জানতে চাইলে আসিফ মাহমুদ বলেন, আমরা যে উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি তা দেশের মানুষের জন্যই কাজ করে যাচ্ছি। আর এ ব্যাপারে সরকারি বা রেগুলেটরি অথরিটির কাছ থেকে আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা পাব বলেই আশা করছি। ভ্যাকসিনটিকে মানুষ আস্থায় রাখতে পারেন কিনা এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর বিশ্বে সুনাম আছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এদেশের তৈরি ওষুধ যাচ্ছে। যে দেশের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির এত সুনাম বিশ্বে আছে সে রকম একটি দেশ থেকে যখন একটি ওষুধ আবিষ্কারক কোম্পানি হিসেবে কোনো একটি ভ্যাকসিন তৈরি হবে সেটি অবশ্যই গুণগত মান বজায় রেখেই তৈরি করা হবে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক রেগুলেটরি গাইডলাইন অনুসরণ করেই আমরা এই ভ্যাকসিন তৈরি করব। আর এতগুলো ধাপ পার করে যে পণ্যটি আসবে তাতে সবার আস্থা থাকবে বলেই আমি বিশ্বাস করি।

এজন্য তাৎক্ষণিক তিনটি নতুন প্রকল্প শুরু করার সিদ্ধান্ত নেই। এর মধ্যে একটি ছিল কিট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প, দ্বিতীয়টি ভ্যাকসিন প্রকল্প এবং তৃতীয় প্রকল্পটি হচ্ছে বায়োলজিক্যাল ড্রাগের প্রকল্প। সেই সূত্র ধরে একটি ডায়াগনস্টিক কিটের প্রকল্প জমা দেই। এর কিছু পর্যবেক্ষণ আমরা পেয়েছি। এ নিয়ে কাজও করছি। খুব শিগগিরই কিটটি আবার জমা দেব। কিন্তু কিটের কাজটি করতে করতে বুঝতে পারি যে কিটের চেয়ে আমাদের বেশি দরকার ভ্যাকসিন। কারণ যেভাবে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে তাতে ভ্যাকসিন না হলে দেশের মানুষের ভ্যাকসিন পেতে অনেক সময় লেগে যাবে। এজন্য কিটের প্রকল্পটির গতি সামান্য কমিয়ে ভ্যাকসিন প্রকল্পে গুরুত্ব বেশি দেওয়া শুরু করলাম। সেই ধারাবাহিকতায় মার্চ মাসের ৮ তারিখে শুরু হওয়া গবেষণাটির একটি প্রাথমিক এনিমেল ট্রায়ালের ডাটা হাতে পাওয়ার পর ২ জুলাই আমরা সংবাদ সম্মেলন করি।

Sponsored
Leave a Comment

সর্বশেষ

পিটিয়ে হত্যা: ভিডিওতে শনাক্ত ছাত্রদলের ৫ নেতাকর্মী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে…

September 21, 2024

২০২৩ এর সফল ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ড পেলেন সাইমন সাদিক

সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…

March 4, 2024

ডিআর কঙ্গোতে শান্তিরক্ষী মিশনে  সেনাবাহিনীর ‘আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ মোতায়েন

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো…

March 3, 2024

প্রধানমন্ত্রীকে পুতিনের অভিনন্দন

পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…

January 12, 2024

আওয়ামী লীগের বিজয় উৎসব উদযাপন করলো রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন

রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…

January 10, 2024

পর্যবেক্ষণে গিয়ে সন্তুষ্ট যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড ও সুইস পর্যবেক্ষকরা

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…

January 7, 2024
Sponsored