গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে পুর্ব শত্রুতার জের ধরে বাড়ি-ঘরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে উভয় পক্ষই মুকসুদপুর থানায় মামলা করেছে।
এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করতে আসা ৬৫ বছর বয়সী সিদ্দিক সরদার নামের এক মুক্তিযোদ্ধাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রতিকার চাইতে থানায় এসে গ্রেফতার হওয়ায় মুকসুদপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
মুকসুদপুর থানার ওসি (তদন্ত) আবদুল্লাহ আল মামুন বিশ্বাস জানান, পুর্ব শত্রুতা ও অধিপত্যকে কেন্দ্র করে মুকসুদপুর উপজেলার গোপালপুর গ্রামে বাচ্চু মুন্সী গ্রুপ ও তৈয়াব আলী সরদার গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এরই জের ধরে শুক্রবার সন্ধ্যায় উভয় পক্ষের হামলা ভাঙ্চুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে মুকসুদপুর থানা পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
উপজেলার গোপালপুর গ্রামের মহিউদ্দীন সরদার জানান, পুর্ব শত্রুতার কারণে বাচ্চু মুন্সী গ্রুপের ২০-২৫ জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে তৈয়াব আলী সরদারের বাড়িতে হামলা করে। ভাঙ্চুর ঠেকাতে গেলে তৈয়াব আলী সরদারকে কুপিয়ে আহত করে। আহত তৈয়াব আলী সরদার জীবন বাঁচাতে তুহিন সরদারের ঘরে আশ্রয় নিলে আক্রমনকারীরা ওই ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তাদের প্রায় আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি হয়। বিষয়টি আইনগত প্রতিকার পাওয়ার জন্য তাৎক্ষনিকভাবে তৈয়াব আলীর চাচা মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিক সরদার থানায় উপস্থিত হয়ে মৌখিক ভাবে অভিযোগ দেয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে পুলিশ তাকে বসিয়ে রাখে এবং অপর পক্ষের মামলায় তাকে গভীর রাতে আটক দেখায়।
জিল্লুর রহমান টুটুল জানান, একই দিন এক ঘন্টা সময়ের ব্যবধানে তৈয়াব আলী সরদারসহ ৫০ জনের বেশি লোক পূর্বশত্রুতা ও প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে হামলা করে। এতে আক্রমণকারীরা ১৫ বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে ৩ লাখ ৩৯ হাজার টাকা ও মালামাল লটু করে নিয়ে যায়। ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে। তাদের ক্ষতির পরিমান ১১ লাখ টাকা। এ বিষয়ে থানায় ৩১৭নম্বর মামলা হয়েছে এবং একজন গ্রেফতার হয়েছে।
প্রতিকার চাইতে থানায় এসে মুক্তিযোদ্ধা গ্রেফতার হওয়ায় মুকসুদপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা জাফর আহমেদ মল্লিক জানান, দু’পক্ষের বিরোধ এবং অগ্নিকােণ্ডর খবর জানাতে এসে গ্রেফতার হয়েছেন বীরমুক্তিযোদ্ধা। আর তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন এক রাজাকারের সন্তান। এ বিষয়টি মুকসুদপুর থানার ওসিকে জানানোর পরেও আমাদের প্রতি কোনো আন্তরিকতা বা শ্রদ্ধাবোধ দেখায়নি। মুকসুদপুর থানার ওসি ও সংশ্লিস্ট পুলিশ অফিসারের আচরণে তিনিসহ পুরো মুক্তিযোদ্ধা সদস্য হতবাক ও বিস্মিত। তিনি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এর প্রতিকার দাবি করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হায়াতুর রহমান জানান, মামলা হওয়ার পর ওসি সাহেবের নির্দেশে বাদীর দেখিয়ে দেয়া থানায় বসে থাকা ২০ নম্বর আসামিকে গ্রেফতার করি। পরে জানতে পারি তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। এ কারণে আমি তাকে সম্মানের সাথে কোর্টের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছি।
মুকসুদপুর থানার ওসি মির্জা আবুল কালাম আজাদ হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও মুক্তিযোদ্ধা গ্রেফতারের কোনো ঘটনা ঘটে নাই বলে জানান। পরে স্থান ও বর্ণনা দেওয়ার পরে জানান ওই ঘটনায় মামলা হয়েছে, তদন্ত চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।