সাম্প্রতিক শিরোনাম

মধ্যরাতে আমার ছেলে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল

ঢাকার প্রসিদ্ধ স্কয়ার হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ)-এর প্রধান এবং হাসপাতালের পরিচালক (মেডিকেল সার্ভিস) অধ্যাপক ডা. মির্জা নাজিম উদ্দিন (৫৭) করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৭ জুন ইহধাম ত্যাগ করেন। তিনি একজন জনহিতৈষী চিকিৎসক ও সেবক হিসেবেই মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাকে আমি আমার চিকিৎসক ও বন্ধু হিসেবে প্রায় এগারো বছর ধরে চিনি। বয়সে তিনি ছিলেন আমার তিরিশ বছরের ছোট।

তবে সেই ইচ্ছা আমার আম্মা, ফুফু ও বড় বোনের জারিজুরিতে টিকল না। আশ্চর্যের বিষয় হলো যে সেদিন থেকেই আমার আর্টিকেরিয়া বিদায় নিল। আমি স্বাভাবিক মানুষের মত গোশত খাওয়া আবার শুরু করলাম। পরবর্তী অসুখ হলো ১১ বছর পর ১৯৬৪ সালে। আমি এক বছর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে দেশে ফিরেছি এবং করাচিতে আমার পদায়ন হওয়ায় সেখানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সহসা ভাইরাস ফিভার আমাকে পেয়ে বসল। ডাক্তার ওয়াকিল আহমদ ওষুধ পথ্য দিলেন আর বললেন যে জ্বর কমিয়ে রাখতে হবে। বাড়লেই পানি মাথায় ঢেলে জ্বর নামাতে হবে। প্রায় ১০ দিন আমার স্ত্রী সাবিয়া মুহিত চব্বিশ ঘণ্টা আজরাইলের সঙ্গে যুদ্ধ করে আমাকে সুস্থ করে তুললেন। এই হলো রোগ-বালাইয়ের আমার সারা জীবনের কাহিনি

শৈশবে ৫/৬ বছর বয়সে হাঁটু ভেঙে একটি সার্জারি হয়েছিল বলে জানি। তার একটি দাগ সব সময়েই নজরে পড়ে। এরপরে ছাত্রাবস্থায় আর্টিকেরিয়াতে কয়েক বছর ভুগি। গরু বা ছাগলের গোশত খেলেই গায়ে চুলকানি হতো আর রং লাল হয়ে যেত। এই ঝামেলা একেবারেই অকস্মাৎ বিদায় পেল। ১৯৫৩ সালে আমার দাদার চল্লিশাতে মেহমান খাওয়ানোর দোয়াতে আমি কিছু খাব না বলে ঠিক করেছিলাম।

অবশেষে ২০০৯ সালে আমি দ্বিতীয়বার মন্ত্রী হয়েছি। জননেত্রী শেখ হাসিনার অর্থমন্ত্রী। জুন মাসে বাজেট দিব। তারই প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। আমরা বিপুল ভোটে জিতেছি তাই জনগণের আশাও গগনচুম্বী। মে মাসের মধ্যে আমি নানা গোষ্ঠীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা প্রায় শেষ করে এনেছি। এখন প্রস্তাব সব গ্রহণের পালা। প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক জরুরি। ১১ মে দুপুর রাতে আমার হলো স্ট্রোক। আমি দেখলাম যে আমার মুখ হয়ে গেছে অপরিচিত। স্ট্রোকে তা বেঁকে গেছে। আমার বাড়িতে, হেয়ার রোডের ‘তন্ময়’ বাড়িতে আমার চল্লিশোর্ধ্ব বয়সের ছেলে সাহেদ আমার বিটল ফক্সওয়াগনে আমাকে বসিয়ে নিয়ে গেল স্কয়ার হাসপাতালে। ওই হাসপাতালে তার বন্ধু ছিল সহকারী জনসংযোগ অফিসার। সেখানে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গেই আমাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সমঝে নিলেন। আমাকে আইসিইউ কর্মকর্তা ডাক্তার মির্জা নাজিম উদ্দিন নিয়ে গেলেন এবং নানা পরীক্ষা শেষে ঘুম পাড়িয়ে দিলেন। ভোরে প্রায় ৩টায় বোধ হয় আমি স্কয়ার পৌঁছি এবং ১১টার দিকে ঘুম ভেঙে চোখ মেলি। প্রথমেই আমার হুকুম হলো যে আমাকে একটি আয়না দিন। আমার উদ্দেশ্য হলো আমার বাঁকা মুখটি দেখা। দেখলাম যে না মুখটি আর বাঁকা নয়। ডাক্তার সাহেব বললেন, “আপনাকে আমরা নাশতা খাওয়াবো। কীভাবে ডিম খাবেন? চিনি কি খান? তারপর বললেন যে, প্রধানমন্ত্রী খোঁজ নিয়েছেন এবং তিনি আসতে চেয়েছিলেন। তাকে তারা জানিয়েছেন যে স্ট্রোক খুব সামান্য। তিনি ধীরে সুস্থে এলেই ভালো। তারা মনে করেন যে, সপ্তাহ দশ দিনে আমি হাসপাতাল ছাড়তে পারব।

আমি ১০ জুন, (২০১০) সংসদে বাজেট উপস্থাপন করলাম। প্রায় চার ঘণ্টা দুবার বিরতি নিয়ে বক্তব্য পাঠ করলাম। ডিজিটাল পদ্ধতিতে বাজেটের সারমর্ম সংসদ সদস্যদের সামনে তুলে ধরলাম। বক্তৃতা দেওয়ার সময় আমাকে সাজেদা চৌধুরী, মতিয়া চৌধুরী ও শেখ সেলিম সহায়তা করলেন আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উৎসাহ প্রদান সম্বন্ধে নাই বা বললাম। ভয় ছিল যে বক্তৃতা দানকালে আমি না কাহিল হয়ে পড়ি। আল্লাহতায়ালার মেহেরবানিতে তেমন কিছু হলো না। বরং বক্তৃতা যতই পাঠ করতে থাকলাম আত্মবিশ্বাস ততই জোরদার হতে থাকল। এবারেই বাংলাদেশের এবং পূর্ব পাকিস্তানের সর্বদীর্ঘ বাজেট বক্তৃতা পেশ হলো। আমি নিজেও এর আগে দুটি বাজেট বক্তৃতা দিই সেগুলো সোয়া ঘণ্টার বেশি কখনো ছিল না। আমার লম্বা বক্তৃতার খসড়া নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীরও মনে হয় কিছু দ্বিধা ছিল। কিন্তু বক্তৃতা যখন দিতেই থাকতাম তখন বোধ হয় এই দ্বিধা এমনি বিদায় নেয়।

আমার ডাক্তার মির্জা সাহেবও সংসদে হাজির ছিলেন এবং আমার মনে হয় আমার নির্বিঘ্নে বক্তৃতা দেওয়া তাকে খুবই উৎসাহিত করে। মির্জা নাজিম উদ্দিন শুধু একজন চিকিৎসক বা হাসপাতালের পরিচালকই ছিলেন না। তিনি ছিলেন সত্যিকার জনসেবক এবং তার রোগীকে চাঙ্গা রাখতে সব সময় মনোযোগী। আমি সামান্য অসুবিধা হলেই তাকে ফোন করে উপদেশ নিতাম অথবা তার দফতরে হাজির হয়ে যেতাম। আমি গেলেই তিনি তিনটি কাজ একই সঙ্গে সম্পন্ন করতেন। প্রথমে আমাকে এক কাপ কফি দিতেন। তার পর আমার ব্লাড প্রেসার নিতেন। তারপর আমার রক্তে কত চিনি আছে তা পরিমাপ করতেন। গত ফেব্রুয়ারিতে তার সঙ্গে শেষ ডাক্তারি পরামর্শ নিই। আমার চিনি নিয়ন্ত্রণের জন্য দিনে আমি একটি ইনজেকশন নিই। সম্ভবত ফেব্রুয়ারি মাসে বা তার সামান্য আগে তিনি আমার ২০ মাপের ইনজেকশনকে কমিয়ে ১৫ মাপে নামিয়ে দেন।

আমি সিঙ্গাপুরে যে ডাক্তারের পরামর্শ নিতাম বছর পাঁচেক আগে তা বন্ধ করে দিই। কারণ, আমার মনে হলো যে আমার অবস্থা স্থিতিশীল এবং ডাক্তার মির্জাই আমার জন্য যথেষ্ট। আমি মনে করি যে, আমাদের রোগীরা খামাকাই ভারত, থাইল্যান্ড বা সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিতে যান। আমরা দেশে যে চিকিৎসা ও সেবা পাই সেটাই উন্নত চিকিৎসার জন্য যথেষ্ট। তার চেয়ে বেশি কিছু বিদেশে আশা করা নিতান্তই অর্থহীন। ডা. মির্জা নাজিম উদ্দিন টাঙ্গাইলের মানুষ এবং আমাদের খ্যাতনামা শিক্ষক অর্থমন্ত্রী ও কয়েকদিনের জন্য গভর্নর ড. মির্জা নুরুল হুদার ভাইপো। তার স্ত্রীও স্কয়ার হাসপাতালেরই স্ত্রী ও প্রসূতি রোগবিদ্যা বিভাগের চিকিৎসক। তারা দুজনেই সৌদি আরবে জেদ্দায় ডাক্তারি করেছেন এবং সেখানে তিনি খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি আমার সঙ্গে একবার সৌদি আরব যান এবং তখনই আমি তার জনপ্রিয়তার নিদর্শন পাই। তিনি আরও কতিপয় চিকিৎসক ও এনজিওর সঙ্গে মিলে ঢাকায় এয়ারপোর্টের কাছে একটি ক্যান্সার রিসার্চ ইনস্টিটিউট স্থাপন করেছেন এবং এই ইনস্টিটিউটই আমার মনে হয়েছে তার শেষ জীবনের স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটি ভালোভাবে প্রতিষ্ঠা পাক। স্কয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বলব যে, আপনারা অধ্যাপক ডা. মির্জা নাজিম উদ্দিনের মতো একজন উপযুক্ত ডাক্তার ও ম্যানেজারকে খুঁজে নিয়ে আপনাদের সুনাম অক্ষুণœ রাখার প্রচেষ্টা নেন। ডা. মির্জা নাজিম উদ্দিনের স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ের জন্য রইল আমার শুভেচ্ছা।

 

 

 

 

সর্বশেষ

প্রধানমন্ত্রীকে পুতিনের অভিনন্দন

পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো এক পত্রে পুতিন বলেন ‘রাশিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্ক ঐতিহ্যগতভাবে বন্ধুত্বের...

আওয়ামী লীগের বিজয় উৎসব উদযাপন করলো রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন

রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, আল খারজ বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন ও আল কাসিম বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন...

পর্যবেক্ষণে গিয়ে সন্তুষ্ট যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড ও সুইস পর্যবেক্ষকরা

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের ও সুইস পর্যবেক্ষক দল।দুপুর একটার দিকে উপজেলার কয়েকটি ভোট...

ভিডিও কনফারেন্সে মিটিং করে ট্রেনে আগুন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি নেতারা

নির্বাচনের আগে দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিদেশি সংস্থা, মিডিয়া ও বিভিন্ন দেশের মনোযোগ নেয়ার উদ্দেশ্যই ট্রেনে আগুন দেয়া হয় বলে জানায় ডিবি। বিএনপি...