মিয়ানমারের এনএলডি নেত্রী অং সান সু চিকে আটকের ঘটনায় রোহিঙ্গারা খুশি নয়। যদিওবা রাখাইনে ২০১৭ সালের সেনা নির্যাতনে দলে দলে রোহিঙ্গাদের বাস্তুচ্যুত করার কাজে অং সান সু চির সমর্থন ছিল।
এ কারণে গত তিন বছর ধরেই রোহিঙ্গারা অং সান সু চিকে ধিক্কার দিয়ে আসছিলেন।
তারপরেও রবিবার দিবাগত রাতের অন্ধকারে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপকে রোহিঙ্গারা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা বলছেন, মূলত ২০১৭ সালে যে সেনাবাহিনীর শীর্ষ কমান্ডাররা রোহিঙ্গা নির্যাতনে জড়িত তারাই এখন দেশটির পূর্ণ ক্ষমতা দখল করে নিয়েছে।
তাই দেশে ফিরে যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের সামনে আবারো এক অনিশ্চিত ভবিষ্যত এসে হাজির হয়েছে। এমন এক অনিশ্চিত দশা থেকে রোহিঙ্গাদের মুক্তিইবা কখন মিলবে সেটাই তাদের ভাবিয়ে তুলেছে।
মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নিয়ে টালমাটাল অবস্থা সম্পর্কে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি শিবিরে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের অনেকের সঙ্গে আলাপে এমন প্রতিক্রিয়া উঠে এসেছে।
কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ নূর এ বিষয়ে বলেন- মিয়ানমারে গত নভেম্বরের নির্বাচনে অং সান সু চির এনএলডি দল শতকরা ৮২ ভাগ সমর্থন নিয়ে গণতান্ত্রিক পন্থার দিকে হাঁটছিল।
দেশটিতে গণতন্ত্র আসলে অং সান সু চি ‘বিদেশি নাগরিক’ বলে ২০০৮ সালের আইনটিরও অবসান ঘটবে। তাই সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল।
রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ নূর বলেন, ২০১৭ সালে সেনা বাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর যে বর্বর নির্যাতন চালিয়েছে তাতে তারা (রোহিঙ্গা) সহ সারা বিশ্ব অং সান সু চির ওপর ক্ষিপ্ত-এতে কোনো সন্দেহ নেই।
কিন্তু একথাও ঠিক যে, মিয়ানমারে বাস্তবে অং সান সু চির কোনো ক্ষমতা কোনো সময়েই ছিল না। সেনাবাহিনী অং সান সু চিকে সামনে মূখপাত্র বানিয়ে সারা দুনিয়ার কাছে তাকেই নিন্দিত করেছে কেবল।
এমনকি সেনাবাহিনী সু চিকে দিয়ে রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ পর্যন্ত বলতেও বাধ্য করেছে।
মোহাম্মদ নুরের মতে সংসদে বর্তমানে শতকরা ২৫ ভাগ প্রতিনিধিত্ব রয়েছে সেনাবাহিনীর। কিন্তু এনএলডি নেত্রী অং সান সু চির দল পূর্ণ ক্ষমতা পেলে সেনাবাহিনীর সেই অংশীদারিত্ব বিলোপ হবার শংকায় ভুগছে সেনারা। তাই বিলম্ব না করেই মিয়ানমারের সেনা বাহিনীর এই ক্ষমতা দখল-বলেন রোহিঙ্গা নেতা নূর মোহাম্মদ।
মাষ্টার রুহুল আমিন নামের অপর একজন রোহিঙ্গা নেতা বলেন-‘অং সান সু চিকে সামনে দিয়ে সেনারা আমাদের নির্যাতনের মাধ্যমে দেশত্যাগে বাধ্য করায়।
গত কয়েক বছরে মিয়ানমারের যত আকাম-কুকাম সবই সু চিকে দিয়ে জায়েজ করিয়েছে সেদেশের সেনারা। সেই সু চি যখন নির্বাচনের মাধ্যমে জয় লাভ করে তখনই বর্বর সেনারা গর্জে উঠে এখন বসিয়ে দিয়েছে তাকে।
রোহিঙ্গা নেতা মাষ্টার রুহুলের মতে, মিয়ানমার সেনাদের এমন কাজটি থেকে তাবৎ দুনিয়ার মানুষের শিক্ষা নেওয়া দরকার। তিনি বলেন, বর্বর সেনাদের তল্পিবাহকের পরিণতি এমনই হয়ে থাকে।
এদিকে কক্সবাজারের কুতুপালং শিবির এলাকায় মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত চার শতাধিক রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় দেশে ফিরে যাবার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল তা নিয়েও শংকার সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে জগদীশ নামের একজন হিন্দু রোহিঙ্গা গতকাল জানান-আমরাতো বরাবরই আমাদের দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে অপেক্ষায় রয়েছি। দেশটিতে এখন যে অবস্থা হয়েছে তাতে আমাদের ফিরে যাওয়া কখন যে হবে তা বুঝতে পারছি না।