সাম্প্রতিক শিরোনাম

শহীদ বুদ্ধিজীবীর সন্তানের জীবন চলে চা বিক্রি করে

রাজশাহীর শহীদ বুদ্ধিজীবী সাংবাদিক এমএ সাঈদ। দেশের জন্য জীবন দিলেও স্বাধীন দেশে ভালো নেই এই শহীদের পরিবারটি। ফুটপাতে চা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে এমএ সাঈদের ছেলে এসএম আলমগীর বাবলুকে। তার চায়ের স্টল নগরীর শিরোইল বাস টার্মিনালে। জানা গেছে, আলমগীর বাবলু এর আগে রিকশা চালাতেন।

বাবাকে নিয়ে বাবলু বলেন, ‘বাবা কৃষি বিভাগে চাকরি করতেন। সাংবাদিকতা করতেন। নাটক করতেন। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর ভুবন মোহন পার্কে স্বাধীনতার পক্ষে যেসব মিছিল-সমাবেশ হতো, উপস্থিত থেকে নেতৃত্ব দিতেন সেখানেও। ওই মিছিলে জাতীয় নেতা শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান হেনাসহ থাকতেন অনেকেই। তারা আমাদের বাসায়ও আসতেন। মায়ের গরুর মাংস রান্না পছন্দ করতেন খুব। ওনাদের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল আমাদের।’

বাবলু বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জুন মাসের মাঝামাঝিতে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। তখন ষষ্ঠীতলা এলাকার একটি বাড়িতে থাকতাম আমরা। খান সেনাদের একটি গাড়ি এল একদিন। তারা উর্দুতে বলল, ‘এই লাড়কা, সাঈদ রিপোর্টার ক্যা মাকান কিধার হ্যায়?’ আমাদের বাসা না দেখিয়ে তখন আমি ইউনিক টেইলারের মালিকের বাসা দেখিয়ে দিলাম। গাড়ি ওই দিকে চলে যাচ্ছিল। হঠাৎ এক পিস কমিটির সদস্য পড়ল সামনে। তাকে একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করল, ‘সাঈদ রিপোর্টার ক্যা মাকান কিধার হ্যায়?’

তিনি বলেন, ভয়ে মসজিদের পাশে লুকিয়ে গেলাম আমি। দেখছি সবকিছু। আটজন খান সেনা বাড়িতে ঢোকে আমাদের। আমার চোখের সামনেই গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় বাবাকে। বাড়িতে এসে দেখলাম মা কাঁদছেন। জিজ্ঞেস করতেই জানালেন, খান সেনারা মোহন পার্কের মিছিলের ছবি দেখিয়ে বাবাকে বলল, ‘এটা কার ছবি?’ আব্বা উত্তর দিলেন, ‘এটা আমার ছবি।’ খান সেনারা বলল, ‘আমাদের বিরুদ্ধে আপনারা কেন এসব করছেন? মেজর পারভেজ আপনাকে ডেকেছেন, সার্কিট হাউসে যেতে হবে।’

বাবলু আরো বলেন, বাবার সহযোগী স্টার স্টুডিওর মালিক মোতাহার হোসেন, ঘড়ি ঘরের মালিক নাসির আহমেদ বাবাকে খুঁজতে বের হলেন তারপর। বিভিন্ন জায়গায় খুঁজলেন, পেলেন না কোথাও। কিছু দিন পর শাহ মখদুম ইনস্টিটিউটের পিয়ন কাদের মিয়া এসে আমাদের জানালেন- ‘সাঈদ ভাইকে আর খুঁজবেন না। ওনাকেসহ ১৩ জনকে জোহা হলে খান সেনারা গুলি করেছে। সেখানে আমিও ছিলাম। গুলি লাগার আগেই আমি মাটিতে পড়ে যাই। মরার ভান করেছিলাম। খান সেনারা ভেবেছে আমিও মরে গেছি। তারপর সবাইকে গর্তে ফেলে দেয়। খান সেনারা চলে গেলে আমি লাশভর্তি গর্ত থেকে পালিয়ে আসি।’

আরও পড়ুনঃ ৪৮ বছর পর মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পেলেন ১০ ‘বীরাঙ্গনা’

তিনি জানান, বড়ই অসহায় অবস্থায় দিনযাপন করছেন এখন বাবলু। সংসার আর চলে না। চার ছেলে ও চার মেয়েকে নিয়ে চরম অভাব-অনটনে বাস তার। আগে রিকশা চালাতেন। শিরোইল বাস টার্মিনালের সামনের ফুটপাতে চা বিক্রি করেন এখন। মাঝে মাঝেই ফুটপাত উচ্ছেদ হয়। বেকার হয়ে পড়েন তখন।

বাবলু আরো বলেন, ‘শহীদ সাংবাদিকের ছেলে হলেও আমার কোনো নিজস্ব ঘরবাড়ি নেই। মালদা কলোনিতে দুটি রুম ভাড়া নিয়ে বসবাস করি। প্রতিমাসে ভাড়া লাগে চার হাজার টাকা।স্টল চালিয়ে সংসারের খরচ জোগাড় হয় না। তাই টাকার অভাবে সন্তানদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে। তারাও এখন আমার সঙ্গে ফুটপাতে চা বিক্রি করে। তাদের চাকরি দরকার। কিন্তু কে দেবে?’

তিনি জানান, দেশ স্বাধীনের সময় এমএ সাঈদ ছিলেন তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। রাজশাহীতে আর্ট কাউন্সিল বর্তমানে পদ্মা মঞ্চ ও রাজশাহী প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন ছিলেন তিনি। রাজশাহী বেতার প্রতিষ্ঠাকালে বাংলা খবর পাঠক ও অভিনেতা ছিলেন। তিনি শহীদ হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু তার পরিবারকে সাড়ে তিন হাজার টাকা এবং একটি সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন। পরে সার্টিফিকেটটি হারিয়ে যায়।

মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় যে ভাতা পান তা ১৩ ভাইবোনের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। ফলে বাবলু পরিবার নিয়ে এখনো অসহায় জীবনযাপন করছেন।

সর্বশেষ

প্রধানমন্ত্রীকে পুতিনের অভিনন্দন

পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো এক পত্রে পুতিন বলেন ‘রাশিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্ক ঐতিহ্যগতভাবে বন্ধুত্বের...

আওয়ামী লীগের বিজয় উৎসব উদযাপন করলো রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন

রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, আল খারজ বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন ও আল কাসিম বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন...

পর্যবেক্ষণে গিয়ে সন্তুষ্ট যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড ও সুইস পর্যবেক্ষকরা

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের ও সুইস পর্যবেক্ষক দল।দুপুর একটার দিকে উপজেলার কয়েকটি ভোট...

ভিডিও কনফারেন্সে মিটিং করে ট্রেনে আগুন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি নেতারা

নির্বাচনের আগে দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিদেশি সংস্থা, মিডিয়া ও বিভিন্ন দেশের মনোযোগ নেয়ার উদ্দেশ্যই ট্রেনে আগুন দেয়া হয় বলে জানায় ডিবি। বিএনপি...