বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, অনেকগুলো দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে বিমান চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। বাংলাদেশিদের ইতালিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। বিদেশে বাংলাদেশিদের বাঁকা চোখে দেখা হচ্ছে। বাংলাদেশিদের বহনকারী বিমানকে বলা হচ্ছে ‘করোনা বোমা’। এটা একটা বিব্রতকর পরিস্থিতি।
শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে এক ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এসব কথা বলেন।
শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশি যারা গত বুধবার ইতালির রোমের বিমানবন্দরে গিয়ে পৌঁছেছিলেন, সেখানে তাদের অনেকের করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় প্রায় সবাইকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ইতালির মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতে বাংলাদেশে করোনার ভুয়া সার্টিফিকেট কেনাবেচা নিয়ে নেতিবাচক খবর প্রকাশিত হয়েছে। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ বড় ধরনের বিপদের মুখে পড়তে যাচ্ছে।
করোনা মোকাবিলায় সরকার শুরু থেকেই যে ধরনের ঢিলেঢালা মনোভাব প্রদর্শন করছিল, তার সমূহ বিপদ আঁচ করতে পেরে আমরা সরকারকে আগেই সতর্ক করে বলেছিলাম, করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার ব্যাপারে সরকারের সিরিয়াস হওয়া দরকার। গত ২২ মে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান করোনা পরীক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে স্পষ্ট করেই বলেছিলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কম দেখিয়ে নিজেদের কাগুজে সাফল্য দেখানোর চেয়ে বেশি জরুরি টেস্ট নিয়ে দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন। কারণ, গ্লোবাল ভিলেজের এই সময়ে করোনা টেস্টের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশ বিশ্বাসযোগ্যতা হারালে ভবিষ্যতে নাগরিকদেরকে অত্যন্ত চড়া মূল্য দিতে হতে পারে। নাগরিকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে দেশে যেমন ভয়ংকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, অদূর ভবিষ্যতে আমাদের নাগরিকদের বিদেশের শ্রম বাজারে থাকা না থাকার বিষয়টিও বেশ ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
আজকের বাস্তবতায় দেখতে পাচ্ছি, বিএনপির এই আশঙ্কাটি এখন দুঃখজনকভাবেই সত্য হতে চলেছে। ইতালি, চীন, জাপান, ভিয়েতনাম, তুরস্ক, কাতার, আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নাগরিকদেরকে তাদের দেশে ঢুকতে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করছে। ইতালিতে পৌঁছানোর পর ১৫২ জন বাংলাদেশিকে ঢুকতে না দিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে ফেরত দেয়া প্রমাণ করে, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকার দেশের জনগণের স্বার্থের প্রতি কতটা উদাসীন। সরকারের দৃষ্টি শুধুই যেন প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের প্রতি, প্রবাসীদের স্বার্থের প্রতি নয়।
তিনি আরও বলেন, আমরা বারবার বলে আসছি, করোনা ‘ করোনা ট্রেস ও ট্রিটমেন্ট’ নিয়ে সরকার কী করছে, কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে এগুলো জনগণকে জানাতে হবে। এমনকি করোনা মোকাবিলায় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে প্রয়োজনে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করার জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল। সরকার সেই দাবি কানে নেয়নি। বরং এখন খবর প্রকাশ হচ্ছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করোনা মোকাবিলায় ‘জেকেজি হেলথ কেয়ার এবং রিজেন্ট হাসপাতাল নামে’র কিছু ভুয়া প্রতিষ্ঠানকে ‘করোনা টেস্ট ও ট্রিটমেন্টের’ অনুমোদন দিয়েছে। তাদের একমাত্র যোগ্যতা ছিল, এইসব ভুয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্ণধাররা ক্ষমতাসীন দলের নেতা কিংবা ঘনিষ্ঠ। অনুমোদন পেয়ে এইসব প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিবাজরা টাকার বিনিময়ে হাজার হাজার মানুষকে রক্ত পরীক্ষা না করেই ‘করোনামুক্ত সার্টিফিকেট’ ইস্যু করতো। এদের সার্টিফিকেট নিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়ে আটক কিংবা ফেরত আসতে শুরু করায় এখন সরকারের টনক নড়েছে।
কখনো হলমার্ক কেলেঙ্কারি, কখনো রিজার্ভ ফান্ড লুট, কখনো ক্যাসিনো কেলেঙ্কারি আর এখন করোনা পরীক্ষা এবং চিকিৎসা নিয়ে কেলেঙ্কারি চলছে। প্রতিটি কেলেঙ্কারির হোতা সরকারি দলের নেতা কিংবা সরকারের বিশেষ আনুকূল্যপ্রাপ্ত দুর্নীতিবাজরা। বাংলাদেশে ভোট ডাকাত, ব্যাংক ডাকাত, দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ, করোনার ভুয়া প্রত্যয়নপত্রবাজে এখন দেশ ভরে গেছে।