আরিফকে তালাক দেওয়ার যেসব কথা ডা. সাবরিনা এত দিন বলে আসছিলেন সেটা সম্পূর্ণ বানোয়াট। তালাকনামাও সাজানো। আমরা মনস্তাত্ত্বিক কৌশল হিসেবে সাবরিনার সামনে আরিফকে জিজ্ঞাসাবাদের নানা কৌশল প্রয়োগ করি। এ সময় তাঁরা একে অপরকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন”। জিজ্ঞাসাবাদকারী এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা এমনই তথ্য দিলেন। তিনি আরও বলেন, এর আগের জিজ্ঞাসাবাদে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গেছে বলে দুজন জানিয়েছিলেন। এ ছাড়া প্রথম দফায় রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে ডা. সাবরিনা আরিফের সঙ্গে উগ্র মেজাজে কথা বলেছিলেন। কিন্তু এখন ব্যবহার উল্টো।
আগে বিবাহবিচ্ছেদের কথা বললেও ডা. সাবরিনা এখন ব্যক্ত করছেন ‘ভালবাসা’। ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা ও অপরাধ তদন্ত বিভাগের (ডিবি) কার্যালয়ে গতকাল শনিবার ছিল দ্বিতীয় দফা জিজ্ঞাসাবাদের দিন। রিমান্ডের টেবিলে বসে জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা চৌধুরী স্বামী আরিফুল হক চৌধুরীর জন্য ‘ভালোবাসা’ দেখান। তিনি বলেন, ‘আরিফ অসুস্থ। প্লিজ, তাঁকে একটু রেস্টে থাকতে দেন। আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। ওকে পরে।
করোনা সনদ জালিয়াতির মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে তাঁরা দুজন বর্তমানে দ্বিতীয় দফা পুলিশ রিমান্ডে রয়েছেন।
এদিকে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, করোনা টেস্টের সনদ জালিয়াতি করে বিপুল টাকা আত্মসাতের কথা স্বীকার করেছেন ডা. সাবরিনা চৌধুরী ও তাঁর স্বামী জেকেজির প্রধান নির্বাহী আরিফুল চৌধুরী।
এ ব্যাপারে ডিবির আরেক কর্মকর্তা বলেন, তাঁরা করোনা টেস্টের জন্য সরকারি বরাদ্দের টাকা হাতিয়ে নিয়ে বেশি নমুনা সংগ্রহ ও ভুয়া করোনা সনদ দেওয়ার তৎপরতা শুরু করেন। সরকারি বরাদ্দ হাতিয়ে নিতে তাঁরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চার কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। ওই সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা তাঁদের আরো বেশি নমুনা সংগ্রহের পরামর্শ দেন। দ্রুত করোনার সনদ দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কাছে একটি পিসিআর মেশিন চেয়েছিলেন জেকেজির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আরিফুল চৌধুরী। সেটা না পেয়ে তাঁরা দ্রুত সনদ দেওয়ার জন্য যাদের পাঁচটির কম উপসর্গ ছিল তাদের ‘নেগেটিভ’ এবং যাদের পাঁচ বা তারও বেশি উপসর্গ ছিল তাদের ‘পজিটিভ’ সনদ দেওয়া শুরু করেন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আব্দুল বাতেন বলেন, ‘জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা তাঁর ফেসভ্যালু ক্যাপিটালাইজড করে অধিদপ্তর থেকে সুবিধা নিয়েছেন। চিকিৎসক হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন স্থানে তাঁর যে পরিচিতি রয়েছে সেটা ব্যবহার করেই তিনি প্রতারণা করেছেন।’
ডা. সাবরিনা ওভাল গ্রুপের কাছ থেকে দুটি চেক নিয়েছিলেন। তার একটি ছিল পাঁচ লাখ টাকার। আরিফ যখন বিপদে পড়েন, সাবরিনা নিজেই ওই চেকটি প্রত্যাহার করে নেন। ডা. সাবরিনা জেকেজি ও ওভাল গ্রুপ থেকে মাসে ৫০ হাজার টাকা করে বেতন নিতেন। তার প্রমাণও আমরা পেয়েছি।’
সাবরিনা ও তাঁর স্বামী আরিফুল চৌধুরী করোনার এই সময় একটি প্রজেক্ট তৈরি করেছেন। তবে যেভাবে নমুনা সংগ্রহ করে সেবা দেওয়ার কথা ছিল তাঁরা সেভাবে দেননি। এ ব্যাপারে আরো তদন্ত চলছে। আমরা তদন্ত করে যদি ক্রিমিনাল অফেন্স পাই তবে সে বিষয়ে ক্রিমিনাল রেকর্ড নিয়ে আসব। আর যেগুলো বিভাগীয় অপরাধ ও অনিয়ম সেগুলো আমরা লিখিত অবস্থায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে জানাব।’
জিজ্ঞাসাবাদকারী এক ডিবি কর্মকর্তা বলেন, ‘সাবরিনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন সূত্রের প্রভাব খাটিয়ে স্বামী আরিফুল চৌধুরীকে জেকেজি হেলথকেয়ারের সরকারি আদেশ পাইয়ে দিতেন। পরে জেকেজি মানুষের ক্ষতি করে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এখন ডা. সাবরিনা ও তাঁর স্বামী আরিফের তথ্যে গোয়েন্দা অনুসন্ধান চলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
গত ২৩ জুন ডা. সাবরিনার স্বামী আরিফ চৌধুরীসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে তেজগাঁও পুলিশ। এরপর গ্রেপ্তার করা হয় ডা. সাবরিনাকে। তাঁদের সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া হিরুও এখন ডিবি কার্যালয়ে আছেন। করোনার ভুয়া সনদের ডিজাইন করতেন হিরু।