রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি কার্ড) ব্লক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সাহেদের তথ্য সংশোধনে জালিয়াতির অভিযোগও তদন্ত করা হচ্ছে। তিনি শিক্ষা সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে এনআইডি সংশোধন করেছেন। এই ঘটনায় ইসি কার্যালয়ের জড়িতদের চিহ্নিত করা গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ইসি। গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইসি কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর এসব তথ্য জানান। এদিকে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, সাহেদের রিজেন্ট হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছে মানুষের টাকা মেরে। ইসি সচিব সাংবাদিকদের বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে জাতীয় সংসদের শূন্য আসনগুলোর উপনির্বাচন নিয়ে ইসি কোনো তাড়াহুড়া করতে চাইছে না। পাবনা-৪ ও ঢাকা-৫ আসনের উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণার বিষয়ে আগস্টের মধ্য বা শেষ সপ্তাহে কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ ছাড়া ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচন নিয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
সাহেদের জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম ছিল সাহেদ করিম। পরবর্তীকালে তিনি এটি সংশোধন করে মোহাম্মদ সাহেদ হয়ে যান। প্রথমে তার জন্ম সাল ছিল ২ জুন ১৯৭৮। পরবর্তীকালে তিনি সেটি ১৯৭৫ সালের ২ জুলাই করে নেন। সংশোধনের সপক্ষে তিনি ও-লেভেলের কাগজপত্র দাখিল করেন। যদিও প্রথমে তিনি সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস দেখিয়েছিলেন। ইসি সচিব বলেন, ইসির মাঠ পর্যায়ের কেউ হয়তো সাহেদের এই কাজে সহায়তা করতে পারে। যে কোনো প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া তার পক্ষে সম্ভব।
এদিকে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদের জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংশোধন প্রসঙ্গে ইসির সিনিয়র সচিব বলেন, সাহেদ বিদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সনদ দিয়ে এনআইডি সংশোধন করেছেন। কমিশন ব্রিটিশ কাউন্সিলের মাধ্যমে কিংবা সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিচ্ছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার সংশোধিত এনআইডি বাতিল করা হবে। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। ইতোমধ্যে এ ধরনের ঘটনায় অনেকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে, অনেকে শাস্তিও পেয়েছেন।
ওই সভায় পাবনা-৪, ঢাকা-৫ ও ১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ শূন্য আসনে ভোটগ্রহণের বিষয়ে আলোচনা হয়। ওই সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা সভাপতিত্ব করেন। এ বিষয়ে ইসির সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে সচিব বলেন, আগস্টের মধ্য বা শেষ সপ্তাহে পাবনা-৪ ও ঢাকা-৫ আসনের উপনির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন। সিরাজগঞ্জ-১ ও ঢাকা-১৮ আসনে এই মুহূর্তে নির্বাচন হবে না। এসব আসনে নির্বাচন করার সময় আছে। ইসি করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকায় ধীরে চলো নীতিতে থাকবে ইসি।
অন্যের টাকায় সাহেদের রিজেন্ট হাসপাতাল :প্রতারক সাহেদের রিজেন্ট হাসপাতাল তৈরি হয়েছে অন্যের টাকা মেরে। এসি, ফ্রিজসহ অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনায়ও জালিয়াতি করেছেন তিনি। রিজেন্টের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় এসি লাগানো বাবদ এফআর করপোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান তার কাছে ১৯ লাখ ৫১ হাজার টাকা পাবে। দীর্ঘদিনেও সেই টাকা পরিশোধ করেননি সাহেদ। নানাজনের কাছে ধরনা দিয়েও তার কাছ থেকে টাকা আদায় করতে পারেনি কোম্পানি। এদিকে সাহেদের প্রতারণার অনেক পুরোনো মামলা আবার পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে। দীর্ঘদিন এসব মামলা প্রভাব খাটিয়ে ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিলেন সাহেদ।
সাহেদের রিজেন্ট হাসপাতালে এসি সরবরাহ করেন এফআর করপোরেশনের কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান। তিনি জানান, এসি লাগানো বাবদ সাহেদ দুই লাখ টাকার চেক দেন। হাসপাতালে ৩৮টি এসি লাগানো হয়। এ ছাড়া সাহেদের বাসা, আত্মীয় ও অফিস কর্মকর্তাদের বাসায়ও এসি সরবরাহ করেন তিনি। এ বাবদ তিনি প্রায় ২০ লাখ টাকা পেতেন। তবে দুই লাখ টাকার চেক দিলেও তা ডিজঅনার হয়।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেছেন, গতকাল সোমবার দুপুর পর্যন্ত র্যাবের কাছে ফোন এসেছে ১৮০টি, ই-মেইলে অভিযোগ এসেছে ৩০টি। সব অভিযোগই প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া ও পাওনা টাকা পরিশোধ না করা প্রসঙ্গে। বেশ কিছু ই-মেইল এসেছে বিদেশ থেকে। আরও দু-তিন দিন সেবা সংযোগটি চালু রাখবে র্যাব।
টাকা না দিয়ে সাহেদ টালবাহানা করতে থাকলে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে উত্তরা পশ্চিম থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা করতে যান হাবিবুর রহমান। গতকাল র্যাব সদর দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সাহেদ এই টাকা মেরে দেওয়ায় আমার জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। আমি তো সেখানে চাকরি করি। দীর্ঘ সময় পর হলেও এর প্রতিকার চাই। টাকা ফেরত চাই। সাহেদের বিচার চাই।’
্যাবের চালু করা হটলাইন নম্বরে গত কয়েক দিনে এভাবে অনেক ভুক্তভোগী অভিযোগ জানাচ্ছেন। হটলাইনে ফোনকল এবং ই-ইমেইল ছাড়াও কেউ কেউ সরাসরি গিয়েও অভিযোগ জমা দিচ্ছেন। এসব ভুক্তভোগীকে আইনি সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে র্যাব।
সাহেদ রাজউকের চেয়ারম্যান পদে বসানোর জন্য প্রতিষ্ঠানটির সাবেক এক কর্ণধারের কাছ থেকে পাঁচ কোটি টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এক পুলিশ সুপারকে বিপদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য নিয়েছেন এক কোটি টাকা। এ ছাড়া চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে একজন মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে নিয়েছেন প্রায় এক কোটি টাকা।