রাবি সাবেক শিক্ষার্থী ওয়াহিদা সিফাত হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতের রায় বাতিল করে নতুন করে বিচারের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
দণ্ডবিধির পরিবর্তে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আইনে বিচার করতে বলা হয়েছে। ৩ মাসের মধ্যে এই বিচার সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে নিম্ন আদালতে খালাসপ্রাপ্ত তিন আসামিকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই তিন আসামি আত্মসমর্পণের পর জামিন আবেদন করলে সংশ্লিষ্ট আদালতকে তাদের জামিন দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া তিনমাসের মধ্যে বিচার সম্পন্ন না হলে আসামি জামিন আবেদন করলে তা বিবেচনা করতে বলা হয়েছে।
বিচারপতি মো. এমদাদুল হক ও মো. আকরাম হোসেন চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দিয়েছেন। নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আসামি মো. আসিফের সাজা বাড়াতে বাদীপক্ষের করা আবেদন এবং খালাস চেয়ে আসামির করা আবেদনের ওপর শুনানি শেষে এ আদেশ দেন আদালত।
আসামিপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট সারোয়ার আহমেদ ও মো. মুনসুর রহমান।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল গিয়াস উদ্দিন, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. শাহীন মীরধা। মৃত সিফাতের পিতা আমিনুল ইসলাম নিজেও আদালতের অনুমতি নিয়ে শুনানি করেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ওয়াহিদা সিফাতের সঙ্গে মো. আসিফের বিয়ে হয় ২০১০ সালে। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই তাদের সংসারে বিবাদ শুরু হয়। এর এক পর্যায়ে ২০১৫ সালে ২৯ মার্চ শশুর বাড়িতে মারা যায় সিফাত।
এরপর রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্ত করা হয়। এতে বলা হয়, সিফাত আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু ওইবছরের ২ এপ্রিল সিফাতের চাচা মিজানুর রহমান খন্দকার বাদী হয়ে রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
২০ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে সিফাতকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে সিফাতের মরদেহ কবর থেকে তুলে রংপুর মেডিক্যালে ময়না তদন্ত করা হয়।
ময়না তদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়, সিফাতের মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। পুলিশ তদন্ত শেষে আত্মহত্যা প্ররোচনার অভিযোগে সিফাতের স্বামী আসিফ প্রিসলি, আসিফের পিতা অ্যাডভোকেট মো. রমজান হোসেন, মা নাজমুন নাহার ও প্রথমদফা ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক ডা. জোবাইদুর রহমানকে আসামি করে ২০১৬ সালের ২২ মার্চ অভিযোগপত্র দেয়।
মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। এই আদালতে ২০১৬ সালের ১১ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এরপর বিচার শেষে একমাত্র আসিফকে (সিফাতের স্বামী) দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারায় আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে ২০১৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রায় দেয় আদালত।
রায়ে আসিফের বাবা, মা ও প্রথমদফা ময়না তদন্তকারী ডাক্তারকে খালাস দেওয়া হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে আসিফ এবং বাদীপক্ষ হাইকোর্টে পৃথক পৃথক আবেদন করেন। এ দুটি আবেদনের ওপর শুনানি শেষে গতকাল রায় দেন হাইকোর্ট।