স্বামীকে খুন করার অভিযোগের মামলায় গাজীপুরের শ্রীপুরে নিজ বাসায় নিহত রফিকুল ইসলামের স্ত্রী জীবন্নাহারকে জামিন দেননি হাইকোর্ট।
তার জামিন আবেদন উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করেছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেন।
আদালতে জীবন্নাহারের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মোহাম্মদ তাফসিরুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষ ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ।
গতবছর ২৪ জানুয়ারি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গিলার চালায় নিজ বাসায় রফিকুল ইসলাম খুন হন। এরপর তার লাশ টুকরা টুকরা করে বিভিন্ন জায়গায় ফেলা হয়। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় পুলিশ নিহতের স্ত্রী জীবন্নাহারকে গ্রেপ্তার করে।
এই জীবন্নাহার গত ২৬ জানুয়ারি গাজীপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে রফিকুল ইসলামকে খুনের বর্ণনা দেয়।
ময়মনসিংহের তারাকান্দা থানার উলামাকান্দি এলাকার আব্দুল লতিফের ছেলে রফিকুল ইসলামের সঙ্গে নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার বিষমপুর গ্রামের চাঁনমিয়ার মেয়ে জীবন্নাহারের বিয়ে হয় কয়েকবছর আগে।
তাদের ঘরে মারিয়া আক্তার রোজা নামের চার বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। রোজা বেশিরভাগ সময়ই তার নানীর বাড়ি থাকতো। ঘটনার দিন রোজা বাসায় ছিল না।
চাকরির সুবাদে স্বামী রফিকুল ইসলাম, জীবন্নাহারকে নিয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গড়গড়িয়া মাস্টার বাড়ির মেঘনা কারখানার সীমানা প্রাচীরের পাশে গিলার চালা এলাকার আব্দুল হাই মাস্টারের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।
রফিকুল স্থানীয় ‘হাউ আর ইউ’ টেক্সটাইল কারখানায় লোডার পদে এবং স্ত্রী স্থানীয় মেঘনা নিট কম্পোজিট লিমিটেড কারখানায় সুয়িং অপারেটর পদে চাকরি করতেন। স্বামী বেতন পেতেন সাত হাজার টাকা আর স্ত্রী পেতেন ১৩ হাজার টাকা।
বিভিন্ন সময় স্বামী তার স্ত্রীর বেতনের টাকা চাইতেন। কিন্তু জীবন্নাহার বেতনের টাকা স্বামীকে না দিয়ে মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই কলহ হতো। ঘটনার সপ্তাহখানেক আগে স্ত্রী জীবন্নাহার স্বামী রফিকুলকে ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকিও দেয়।
ঘটনার দিন সকালে এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথা কাটাকাটি হয় এবং এক পর্যায়ে স্ত্রীকে থাপ্পর মেরে স্বামী খাটে শুয়ে থাকেন। এসময় কিছু বুঝে ওঠার আগেই জীবন্নাহার ইট দিয়ে রফিকুলের মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করে। একপর্যায়ে গামছা দিয়ে স্বামীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর ঘরে থাকা ওয়ার্ডরোবে মরদেহটি লুকিয়ে রেখে জীবন্নাহার কারখানায় চলে যান।
পরে কারখানা থেকে রাতে বাসায় ফিরে মরদেহটি ওয়ার্ডরোব থেকে বের করে বটি দিয়ে দুই হাত কনুই থেকে, দুই পা হাঁটু থেকে এবং ঘাড় থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। পরে মাথা-হাত-পা বিচ্ছিন্ন দেহাংশটি বস্তায় ভরে পাশের বাঁশ ঝাড়ে, পা দু’টি অদূরে টয়লেটের পাশে এবং মাথা, দুই হাতের অংশগুলো ময়লার ড্রেনে ফেলে দেয়। পরদিন সকালে এলাকাবাসী বাঁশ ঝাড়ের নিচে রক্তমাখা বস্তা ও মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়।
পরে দুপুরে শ্রীপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ওই খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করেন এবং স্ত্রী জীবন্নাহারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদকালে জীবন্নাহার খুনের ঘটনা স্বীকার করে।