চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) তিনি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এই পদে যোগ দিয়েছেন তিনি।
ডা. সারওয়ারের বিরুদ্ধে পাঁচ করোনা রোগীকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি দেখিয়ে সরকারের তিন লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
অথচ এই রোগীরা বাড়িতে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। শুধু তাই নয়, ডা. সারওয়ার বরাদ্দের ৬০০ পিপিই বিক্রি করে ১২ লাখ আত্মসাৎ করেছেন বলেও অভিযোগ।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রেসিডেন্ট মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) তাঁর বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
এর অনুলিপি জেলা সিভিল সার্জন, জেলা প্রশাসক ও রাজশাহী স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালকসহ কয়েকজনের কাছে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ তদন্তে জেলা সিভিল সার্জনকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার এ কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির অন্যরা হলেন সদর উপজেলার ইউএইচএফপিও আব্দুল মাতিন ও সদর হাসপাতালের চিকিৎসক নাহিদুল ইসলাম মুন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত মার্চ ও এপ্রিল এই দুই মাসে বরাদ্দের ৬০০ পিপিই (প্রতিটি সর্বনিম্ন দুই হাজার টাকা ধরে) বিক্রি করে ১২ লাখ আত্মসাৎ করেছেন ডা. সারওয়ার। অন্য সুরক্ষাসামগ্রী বিক্রি করে আরো প্রায় পাঁচ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি।
সম্প্রতি উপজেলার রহনপুর বাজারের ইউনুস আলী মাস্টার কেন্দ্রে কোনো সুরক্ষাসামগ্রী ছাড়াই শিশুদের টিকা দিতে দেখা গেছে স্বাস্থ্য সহকারীদের। একই চিত্র কাজীহাটাসহ উপজেলার ৩৩টি কমিউনিটি ক্লিনিকের।
১৯ মে থেকে ২৭ মের মধ্যে পাঁচ করোনা রোগীকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি দেখিয়ে তিন লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন ডা. সারওয়ার। এ ছাড়া লেবার রুম, ওটি, এক্স-রে ও আল্ট্রাসনোগ্রাফি রুম থেকে পাঁচটি এসি খুলে নিজের অফিস রুম, বাসভবন, ডাক্তারদের রেস্ট রুম ও আরএমওর রুমে লাগিয়েছেন তিনি।
অথচ সরকারিভাবে নিজ অফিস রুম ও বাসভবনে এসি ব্যবহারের অনুমতি নেই। এমনকি এসিগুলো মেরামতের কথা বলে কোটেশন দেখিয়ে দুই লাখ ৬৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। এ ছাড়া ফুলগাছ লাগানোর জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেষজ বাগান থেকে প্রায় ৫০ জাতের গাছ কেটে ফেলেছেন।
ডা. সারওয়ারের বিরুদ্ধে সাময়িকভাবে বরখাস্ত হওয়া দুই উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার ফারিকুল ইসলাম ও আব্দুস সামাদকে টাকার বিনিময়ে স্বপদে বহাল করারও অভিযোগ আছে।
জঙ্গি মামলার আসামি হওয়ায় ফারিকুলকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা চলছে। দুই দফায় জেলও খেটেছেন তিনি। এ ছাড়া গত বছরের ডিসেম্বর মাসে রহনপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনে অনিয়মের দায়ে সাময়িকভাবে বরখাস্ত হয়েছেন সামাদ।
এর বাইরে সরকারি গাড়ির অপব্যবহার, মিথ্যা অভিযোগে স্টাফদের বদলি, হুমকি-ধমকি, টেন্ডার ছাড়াই আম বিক্রিসহ আরো অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ আছে ডা. সারওয়ারের বিরুদ্ধে।
বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সভাপতি নিয়ামতুল্লাহর অভিযোগ, সুরক্ষাসামগ্রী ছাড়া টিকাদান খুবই ঝুঁকিপূর্ণ
। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার বলার পরও তারা সুরক্ষাসামগ্রী দেয়নি। অথচ ঠিকই বরাদ্দ এসেছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাগানের দায়িত্বে থাকা হারবাল অ্যাসিস্ট্যান্ট তরিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ১৭ বছর ধরে গড়ে তোলা ভেষজ বাগানটি অসৎ উদ্দেশ্যে একক ক্ষমতাবলে ধ্বংস করে ফুলের বাগান গড়ে তুলেছেন ডা. সারওয়ার।
আরএমও ডা. সালাহউদদীন অভিযোগ করেন, কোটেশন বিলে স্বাক্ষর না করায় ডা. সারওয়ার তাঁকে সংশ্লিষ্ট কমিটি থেকে বাদ দেন। পরে তাঁর পছন্দের লোককে কমিটির সদস্য বানিয়ে দুই লাখ ৬৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন।
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ডা. সারওয়ার। তাঁর দাবি, সব কার্যক্রমই সিভিল সার্জনকে জানানো হয় এবং তাঁর নির্দেশেই আমি এসব কাজ করেছি।
অন্যদিকে ডা. সারওয়ারের দাবির বিষয়ে প্রশ্ন করলে এড়িয়ে যান জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী। তবে লিখিত অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। খুব শিগগির তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।