একুশ শতকের ভয়াবহ মহামারী করোনা ভাইরাস সংক্রমণরোধে চট্টগ্রামে মানুষকে ঘরে রাখার কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রশাসন কঠোর হচ্ছে। জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী এবং পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত দশটি টিম নগরীতে সকাল থেকে রাত অব্দি অভিযান শুরু করেছে। গতকাল দিনভর নগরীর অলিগলি এবং রাজপথে অভিযান চালিয়ে এগারটি মামলায় বিশ হাজার টাকারও বেশি অর্থ জরিমানা করা হয়েছে। মানুষকে ঘরে রাখার এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়ে বলা হয়েছে যে, মানুষ ঘরে থাকছে না। অকারণে ঘরের বাইরে বহু মানুষ। এদেরকে ঘরে পাঠাতে মামলা এবং জরিমানা করা হচ্ছে। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে মামলা দায়ের এবং জরিমানা আদায় করা হলে রাস্তাঘাটে লোকজন কমতে শুরু করে। অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও সূত্র জানিয়েছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা এবং লোকজনকে ঘরে থাকার আহ্বান জানায়। কিন্তু করোনা নিয়ে প্রথম কয়েকদিন তীব্র আতঙ্ক থাকলেও দিন গড়ানোর সাথে সাথে আতঙ্ক কমতে শুরু করে। গত দুই তিনদিন রাস্তায় হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি দেখা যায়। রাস্তার মোড়ে মোড়ে এবং অলিতে গলিতে শত শত মানুষ আড্ডা দিতে থাকে। বিভিন্ন দোকান এবং বাজারে ভিড় করে, কেনাকাটা চলে। মানুষকে ঘরে রাখা দায় হয়ে উঠেছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি চরম আকার ধারণ করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্র তীব্র সমালোচনা সৃষ্টি হয়। প্রশাসনের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠে। এই অবস্থায় গতকাল প্রশাসন বেশ কঠোর হয়ে উঠে। ক্রমে আরো কঠোর হবে বলেও সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটেরা জানিয়েছেন।
গতকাল শুক্রবার সকাল নয়টা থেকে বিকেল তিনটা এবং বিকেল তিনটা থেকে রাত নয়টা অব্দি পৃথক পৃথক ভাবে নগরীতে দশটি মোবাইল টিম কাজ করে। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও পুলিশ কঠোরভাবে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা, অযথা ঘরের বাইরে ঘোরাঘুরি নিয়ন্ত্রণ, ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরবাইক নিয়ে চলাচল নিয়ন্ত্রণ, যত্রতত্র বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থা কর্তৃক বিশৃঙ্খলভাবে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ এবং বাজার মনিটরিংয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। এরমধ্যে কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি), নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ, খুলশী, বাকলিয়া এলাকায়, বাকলিয়া সার্কেল সহকারী কমিশনার (ভূমি) ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুল হাসান ডবলমুরিং, বন্দর, ইপিজেড এলাকা, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ রানা চকবাজার, বায়েজিদ, সদরঘাট, কোতোয়ালী এলাকা, জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট আশিকুর রহমান হালিশহর, পাহাড়তলী, আকবর শাহ এলাকা, চান্দগাঁও সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মামনুন আহমেদ অনীক চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ, খুলশী এলাকা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুল আলম বাকলিয়া, ডবলমুরিং এলাকা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক বন্দর, ইপিজেড, পতেঙ্গা এলাকা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রেজওয়ানা আফরিন সদরঘাট এবং কোতোয়ালী এলাকা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিরীন আক্তার ও এস এম আলমগীর চকবাজার, বায়েজিদ এলাকা এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আলী হাসান হালিশহর, পাহাড়তলী, আকবরশাহ এলাকায় সকাল থেকে অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানকালে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা খুলশী, চান্দগাঁও, বায়েজিদ, পাচলাইশ, চকবাজার, পাহাড়তলী, আকবর শাহ, পতেঙ্গা, লালখান বাজার মোড়, জিইসি মোড়, বন্দর এলাকা, হালিশহর এলাকায় চেকপোস্ট স্থাপন করে মানুষের অবাধ চলাফেরা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন। এই সময় অলিগলিতে আড্ডাবাজি থামাতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। বিনা কারণে ঘরের বাইরে ঘোরাঘুরি করছেন এমন মানুষকে জরিমানা করা হয়। সরকারি আদেশ ও আইন ভঙ্গ করার অপরাধে রুজুকৃত এসব মামলায় ২০
হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা করা হয়। জেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযান কঠোর হওয়ার প্রেক্ষিতে গতকাল রাস্তায় মানুষের চলাচল কমেছে বলে উল্লেখ করে সূত্র বলেছে, আজ অভিযান আরো কঠোর করা হবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে কঠোর হওয়ার কোনো বিকল্প নেই বলেও সূত্রগুলো মন্তব্য করেছে।