চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ফেরদৌস হোসেন আরিফ তাঁর ২৪ তম বিবাহ বার্ষিকীতে ফেইসবুকে পোষ্ট দিয়েছেন, আজ আমার ২৪তম বিবাহবার্ষিকী! থানায় বাসররাত করার ২৪ বছর,আনন্দের না লজ্জার? তা হুবাহু তুলে ধরা হলো।
আজ আমার ২৪তম বিবাহবার্ষিকী! থানায় বাসররাত করার ২৪ বছর? আনন্দের না লজ্জার? গর্বের না কলংকের?
২৪ বছর আগে জন্ম নিয়ে বেড়ে উঠা, নতুন প্রজম্ম কিভাবে বিষয়টা মুল্যায়ন করবে, তা জানার আগ্রহ থেকেই আমার আজকের এই লিখাটা। শিরোনামটাও তাদের জন্য।
২৪ বছরে কোনদিনই, আমি দিনটি পালন করিনি। তাই বিবাহবার্ষিকীর কোন পোস্ট দিতে না পারলেও, আরফিন ও তারিফের মৃত্যুবার্ষিকীর পোস্ট দিয়েছি, কারন ওরা ছিল আমার ছোট ভাই… এবং রাজনৈতিক হত্যার শিকার….
সালটা ১৯৯৬, ৩১ মে। শুধু মাত্র একটা হাতে মেহেদির আঁকা নৌকার আল্পনা দিয়ে বিয়ে করতে যাই। কারন ১২ জুন ছিল জাতীয় নির্বাচন। বিয়ে করে ফেরার পথে অনেকটা সিনেমার দৃশ্যের মতো মিরসরাই থানার সামনে, নববধূর পাশ থেকে পুলিশ আমায় গ্রেফতার করে।
আমার সংগঠন আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও সর্বোপরি মিরসরাইবাসির বিক্ষোভ আর জনরোষের কারনে, সীতাকুণ্ড থানার হেফাজতে আমার বাসররাত করাতে বাধ্য হয়। ১ জুন আমি কোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি পাই।
মুজিবাদর্শে উজ্জীবিত হয়ে, স্বৈরাচার বিরোধী ৯০’ র গনঅভ্যুত্থানে, ৯১ পরবর্তী
নব্য স্বৈরাচারী বিরোধী অসহযোগ আন্দোলনে, কখনো মিরসরাইতে, কখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগর কর্মী হিসাবে আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে, অনেক হামলা মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছি। ৯৬’র গনতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে বিজয়ী হয়ে, বাস্তবতার কারনে প্রিয়নেতা মোশাররফ ভাইয়ের পরামর্শে, ৩১ মে বিয়ের দিন ঠিক হয়। তারপরের টাতো ইতিহাস।
চুরি, ডাকাতি বা ছিনতাইয়ের মতো কোন লজ্জাজনক মামলা আমার ছিলোনা। নীতি, আদর্শ ও সততার কারনে আমি সব সময় পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করতে চেয়েছি। দাপট, ক্ষমতা বা জোর দেখিয়ে কারো কাছ থেকে কোন অন্যায় সুবিধা আমি নেয়নি। বয়সের দোষকেও পরাজিত করার চেষ্টা করেছি।
ওমরাহ শেষ করে নির্বাচনী প্রচারনায় নেত্রী শেখ হাসিনা ৩ জুন নিজামপুর কলেজের পথসভার মঞ্চে, মোশাররফ ভাই নেত্রীকে বলে,” আরিফ থানা আওয়ামীলীগের জয়েন্ট সেক্রেটারি, ৩১ মে বিয়ে করে আসার সময় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে “। নেত্রী আর্চয্য হয়ে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে, আমার বুকে হাত রেখে বললেন, ” নার্ভাস হয়েনা, এর ফল তুমি পাবে ” ঐদিন মনে হয়েছিল,আমিই পৃথিবীর সুখী মানুষ। দুঃখ এটাই আমার বুকে নেত্রীর হাত রাখা ছবিটা ঘর পুড়িয়ে দেয়ার জন্য রক্ষা করতে পারিনি।( উপরের ছবিটা ৯৬’ র ৩ জুনের)
এই ২৪ বছরে দল ক্ষমতায় আছে সাড়ে ১৬ বছর। আমিও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলাম ৫ বছর। দল ও নিজের ক্ষমতা ব্যাবহার করে, আমি কি পরিমান অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছি, মিরসরাইবাসিই সেটা জানার কথা। আমি চেষ্টা করেছি নিজেকে সচ্ছ রাখার। কারন নীতি ও আদর্শের জন্য আমি রাজনীতি করি। কিন্তু সেটাই আজ আমাকে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে।
অপমান, অবহেলা, অবমুল্যায়ন মনে করিয়ে দেয় অতীতে অনেক পাপ ও অন্যায় করেছি। আর সেই অভিশাপেই আমি গ্রেফতার হয়েছিলাম।
একসময়ে আলো দেয়া জং ধরা হারিকেনটির মতো আমিও জং ধরে পড়ে আছি।
আলো দেয়ার ক্ষমতা আমার নেই। আলো দিতে হলে টাকার প্রয়োজন, যা আমার নেই। তবু্ও চেষ্টা করে যাব, আলো দেয়ার।
থানায় বাসররাত করা একজন অপরাধীর বিবাহবার্ষিকী পালন করা কি নিলর্জ্জাতার বহিঃপ্রকাশ নয়?
মুল্যায়নের বিষয়টা, এ নতুন প্রজম্মকে দিলাম…..
ধন্যবাদ সবাইকে।