চট্টগ্রামে দুই দিনে আরো ১৬ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এর মধ্যে গতকাল বুধবার ৫ জনের এবং আগেরদিন (মঙ্গলবার) ১১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তবে বুধবার শনাক্ত ৫ জনের মধ্যে একজনের আগেই মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর পর নমুনা পরীক্ষায় তার শরীরে করোনার উপস্থিতি পাওয়া যায়। ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডিতে গতকাল ১০৯টি এবং মঙ্গলবার ১১৮টি নমুনা পরীক্ষা হয়। এর মধ্যে মোট ১৬ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি আজাদীকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে এই দুই দিনে বিআইটিআইডির ল্যাবে নোয়াখালীর ২ জনেরও করোনা শনাক্ত হয়।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার শনাক্ত ৫ জনের তিনজন মহানগরীর। আর ২ জন উপজেলা পর্যায়ের। মহানগরীতে শনাক্ত ৩ জনের মধ্যে দুজন দামপাড়া পুলিশ লাইনের পুলিশ সদস্য। তাদের বয়স যথাক্রমে ২৫ ও ২৬। এর আগে ট্রাফিক উত্তর বিভাগের এক সদস্যের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের পর থেকেই ব্যারাকটি লকডাউন করা আছে। নতুন শনাক্ত হওয়া এই দুজনও একই বিভাগের কনস্টেবল বলে সিএমপি সূত্রে জানা গেছে। অন্যদিকে, নিমতলা এলাকার ৩০ বছর বয়সী এক নারীর করোনা শনাক্ত হয়েছে। তবে তিনি দুদিন আগেই (১৩ এপ্রিল) মারা যান। মৃত্যুর পর বিআইটিআইডির টিম গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে। নমুনা পরীক্ষায় গতকাল ওই নারীর করোনা শনাক্ত হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই নারী মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। তবে মৃত্যুর ২/৩ দিন আগে শরীরে জ্বর দেখা দেয়। আর তেমন কিছু উপসর্গ ছিল না। এরপরও মৃত্যুর পর সন্দেহবশত নমুনা পরীক্ষা করা হয়। আর বুধবার উপজেলা পর্যায়ে শনাক্তদের মধ্যে একজন আনোয়ারা থানাধীন ওষখাইন গ্রামের বাসিন্দা। ৪০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি বন্দরে চাকরি করেন বলে জানা গেছে। আরেকজন পটিয়ার কাগজি পাড়ার ৪৫ বছর বয়সী এক নারী। অন্যদিকে, মঙ্গলবার শনাক্ত হওয়া চট্টগ্রামের ১১ জনের ৫ জন নগরীর। আর ৬ জন উপজেলার বাসিন্দা। নগরীতে শনাক্তের মধ্যে ৪ জনই সাগরিকা হাক্কানী পেট্রোল পাম্প এলাকার। তাঁরা সকলেই গত ১১ এপ্রিল ওই এলাকায় করোনা শনাক্ত হওয়া এক ব্যক্তির পরিবারের সদস্য। পেশায় ব্যবসায়ী ওই ব্যক্তির স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তাদের বয়স যথাক্রমে ১৮, ২১, ২৪ ও ৪৯ বছর। ১১ এপ্রিল থেকে ওই এলাকার বেশ কয়েকটি ভবন লকডাউন করেছে প্রশাসন।
আরেকজন পাঁচলাইশ কাতালগঞ্জ আবাসিক এলাকার। ২৮ বছর বয়সের ওই ব্যক্তি একজন চিকিৎসক। বাঁশখালী উপজেলা হাসপাতালে কর্মরত। অন্যদিকে, উপজেলা পর্যায়ে শনাক্তদের মাঝে ৫ জন সাতকানিয়ার ইছামতি আলী নগরের বাসিন্দা। আক্রান্তদের বয়স যথাক্রমে ৩১, ৩০, ২৭, ৩০ ও ২৭ বছর। সাতকানিয়ায় এর আগে করোনা শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের মাধ্যমে এরা সবাই আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন বলে এলাকাবাসীর ধারণা। সাতকানিয়ায় এরই মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। উপজেলাটি গতকাল বুধবার সন্ধ্যা থেকে লকডাউন ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন। আরেকজন বোয়ালখালী উপজেলার। তাঁর বয়স ৭০ বছর। তিনি গত শনিবার বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি হয়েছিলেন। পরে নমুনা পরীক্ষায় তাঁর করোনা শনাক্ত হয়।
এদিকে, নতুন করে করোনা শনাক্ত হওয়া রোগীদের নির্ধারিত দুটি হাসপাতালের আইসোলেশনে নেয়ার কথা জানান সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। মঙ্গলবার শনাক্ত রোগীদের আইসোলেশনে নিয়ে আসা হয়েছে এবং বুধবার শনাক্ত রোগীদের আইসোলেশনে নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে গতকাল রাত এগারটার দিকে সিভিল সার্জন জানান। এছাড়া আক্রান্তদের বাসা-বাড়ি লকডডাউন ও তাদের সংস্পর্শে আসাদের খুঁজে বের করার কাজ চলছে বলেও জানান সিভিল সার্জন।
এদিকে, দুদিনে শনাক্ত ১৬ জনসহ এ নিয়ে চট্টগ্রাম জেলায় করোনা আক্রান্ত শনাক্তের মোট সংখ্যা দাঁড়ালো ৩২ জনে। আর করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৪ জনে। এর আগে (সোমবার পর্যন্ত) সবমিলিয়ে ১৬ জন রোগী শনাক্ত হয়। যদিও লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা দুজন এবং নোয়াখালীর ২ জনেরও করোনা শনাক্ত হয়েছে বিআইটিআইডির পরীক্ষায়।
উল্লেখ্য, গত ৩ এপ্রিল নগরীর দামপাড়ার বাসিন্দা ৬৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তির প্রথম করোনা শনাক্ত হয় চট্টগ্রাম জেলায়। এরপর ৫ এপ্রিল ওই ব্যক্তির ছেলের শরীরেও করোনার সংক্রমণ পাওয়া যায়। তারা দুজনই চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন। গতকাল সবমিলিয়ে ৩৩ জন আইসোলেশনে ভর্তি আছেন বলে জানান সিভিল সার্জন। এর মধ্যে জেনারেল হাসপাতালে ২২ জন এবং বিআইটিআইডিতে ১১ জন ভর্তি আছেন বলে সিভিল সার্জন জানিয়েছেন। সূত্রঃ দৈনিক আজাদী