করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে পৃথিবীর প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ আজ ঘরবন্দি। স্থবির হয়ে পড়েছে অর্থনীতির চাকা। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বলছে, করোনা সংকটে আড়াই কোটি মানুষ তাদের চাকরি হারাবেন। আর দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। সংস্থাটি বলছে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে কয়েক মাসের মধ্যে ৩ কোটিরও বেশি মানুষ না খেয়ে মারা যাবেন। তবে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে পারে তার সমৃদ্ধ কৃষি।
সে লক্ষ্য নিয়ে চট্রগ্রামের মীরসরাইয়ে কৃষকদের নিয় ‘কৃষকবন্ধু কৃষি উন্নয়ন’ নামে একটি সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়েছে। উপজেলার সদর (৯ নং) ইউনিয়নের ৬নং ওর্য়াডের অন্তর্ভুক্ত রেল স্টেশন এলাকার কৃষকদের নিয়ে এই সংগঠনটির উদ্যোগ নেন চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের প্রভাষক সালাহ উদ্দিন।
গতকাল বৃহস্পতিবার মীরসরাই রেল ষ্টেশন এলাকায় পাওয়ার টিলার বিতরণ কর্মসূচি এবং সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভার মাধ্যমে সংগঠনটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।
এসময় উদ্বোধনের শুরুতে আলোচনা সভায় কৃষকবন্ধু কৃষি উন্নয়ন সংগঠনের উদ্যোক্তা চট্টগ্রাম সিটি কলেজের প্রভাষক সালাহ উদ্দিন সোহেলের সভাপতিত্বে ও জোরারগঞ্জ আর্দশ বন্ধু ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মো. নূর নবীর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সংগঠনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও মীরসরাই সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. এমরান উদ্দিন। সংগঠনটির উদ্বোধন ঘোষণা করেন মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা।
সংগঠনের উদ্যোক্তা প্রভাষক সালাহ উদ্দিন সোহেল বলেন, উন্নত দেশগুলোতে কৃষক সবসময় ধনী। কিন্তু একমাত্র বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশে কৃষকরা অবহেলিত। তাই কৃষকদের বিজ্ঞান নির্ভর চাষাবাদের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে এবং সার্বিক উন্নতির লক্ষ্যে আমি সংগঠনটির উদ্যোগ গ্রহণ করি।
মীরসরাই সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এমরান উদ্দিন সাম্প্রতিক মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন,‘মনে রাখতে হবে, কৃষি আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ। এখন সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক স্থবিরতা এসে গেছে। দুর্ভিক্ষও দেখা দিতে পারে। এই দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য নিজের দেশকেও যেমন বাঁচাতে হবে, পাশাপাশি অন্যান্য দেশকেও সাহায্য করতে হবে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি দেশ সাহায্য চেয়েছে এবং সরকার তাদের জন্য খাদ্যশস্যও পাঠিয়েছি। সে জন্য এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে।’
প্রধানমন্ত্রীর এ কথা এক বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। কারণ, এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ছুটছে সময়। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মানুষকে রক্ষার প্রধান হাতিয়ার হতে পারে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ধরে রাখা। খেয়ে বেঁচে থাকতে পারলে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা যাবেই।
কিন্তু যদি কোনো কারণে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হয়, সর্বনাশ হয়ে যাবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে টাকা থাকলেও খাদ্য আমদানি কঠিন। আমদানি করা গেলেও তা বেশি দিন করার সক্ষমতা আমাদের নেই। তাই খাদ্য উৎপাদন শুধু অব্যাহত রাখা নয়, আরও বাড়াতে হবে। বিষয়ের গুরুত্ব অনুধাবন করে বিশেষ প্রণোদনাও দিচ্ছে সরকার। দরকার যথাসময়ে তার যথাযথ বাস্তবায়ন।
অনুষ্ঠানে ৪০জন কৃষকের মাঝে একটি পাওয়ার টিলার বিতরণ করেন অতিথিবৃন্দ।