গত মাসের শুরুতে সুমনের নিয়মিত গ্রাহক গাড়িচালক শামীম হাওলাদার সাতটি কাপড় ইস্ত্রি করতে দিয়েছিলেন। যেদিন কাপড় দিয়েছিলেন, সেদিনই পরে শামীম এক হাজার টাকা ধার চাইতে আসেন সুমনের কাছে। পরিচিত ব্যক্তি আর কাপড় তো রয়েছেই, এই ভেবে টাকাটা দিয়েছিলেন সুমন।
কিন্তু ক‘দিন বাদে এদের কারও দেখা আর না পেয়ে খুঁজতে বের হন সুমন, কিন্তু কাউকে পাননি। তাদের ঘরে গিয়ে শোনেন, এরা সবাই সপরিবারে গ্রামের বাড়ি চলে গেছে
এরপর শামীমকে ফোন করি। প্রথম কয়েকবার ফোন রিসিভ করে নাই। পরে রিসিভ করে বলে- ‘ভাই আমি এক ব্যবসায়ীর গাড়ি চালাতাম, বেতন পাইতাম ১২ হাজার টাকা, কিন্তু এপ্রিল মাসে মালিক আমারে মাত্র ৮ হাজার টাকা বেতন দিছে। ওই মাসে আমার বউয়ের গার্মেন্টের চাকরিটাও চলে যায়। এক মাস দেখছিলাম, কী হয়। ৭ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া, দুই বাচ্চাসহ সবার ভরণ-পোষণ করতে পারছিলাম না। তাই গ্রামের বাড়ি নওগাঁয় চলে আসছি।”
গ্রামে ফেরার গাড়ি ভাড়া না থাকায় ওই এক হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন বলে সুমনকে জানিয়েছেন শামীম; প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার ঢাকায় ফিরে টাকা পরিশোধ করবেন।
শুধু রূপনগর এলাকা ঘুরেই দেখা যায়, করোনাভাইরাস সঙ্কটের মধ্যে এমন অনেকে নীরবে ঢাকা ছেড়ে চলে গেছেন গ্রামের বাড়িতে।
মার্চে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর তার কমপক্ষে ৩৫ জন নিয়মিত গ্রাহক চাকরি হারিয়ে গ্রামে চলে গেছেন। তাদের কাছে পাওনা টাকা চেয়ে ফোন দিলেও তা ধরছেন না।
ওবায়দুল্লাহ বলেন, “এসব কাস্টমারের একেকজনের কাছে থেকে আমি ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত পাওনা আছি। আমার নিজেরই অনেক টাকা দেনা আছে। এই দেনা আমি কীভাবে পরিশোধ করব, তা চিন্তা করলে মাথা চক্কর দিয়ে উঠে।”
মিরপুর ইস্টার্ন হাউজিংয়ের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা মাহফুজুর রহমান মানিকের কাপড়ে ছাপ মারার একটি কারখানা আছে, যেখানে শ্রমিক ছিলেন ৩০ জন।
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সরকার গত মার্চে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর শ্রমিকদের বিদায় করে নিজের কারখানাটি বন্ধ করে দেন মানিক। কবে আবার তা খুলবেন তাও তিনি ঠিক করতে পারছেন না।
আমরা যে খবর পাচ্ছি, তাতে ছোট ছোট কারখানাগুলোর বেশিরভাগই বন্ধ রয়েছে। আর বড় কারখানাগুলোর ৩০ শতাংশের মতো শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে।”
নিজে বেশ কয়েকজনের খোঁজ জানেন জানিয়ে মানিক বলেন, এভাবে কয়েক লাখ নিম্নবিত্ত মানুষ ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে গেছে বলে তার ধারণা।
ঢাকার তেজগাঁও শিল্প এলাকার দক্ষিণ বেগুনবাড়িতে ভাড়া থাকতেন রহিমা খাতুন। তিনি চাকরি করতেন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি এ কে আজাদের মালিকানাধিন হা-মীম গ্রুপের মানব সম্পদ বিভাগে। হা-মীম গ্রুপ দেশে তৈরি পোশাক খাতের বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি।
করোনাভাইরাস মহামারী শুরু হওয়ায় পর হঠাৎ করেই চাকরি চলে যায় রহিমা খাতুনের। এই পরিস্থিতিতে বাসাভাড়া, দুই বাচ্চার খরচ মেটাতে না পেরে গত ১ জুলাই তিনি ঢাকা ছেড়ে ফেনীতে গ্রামের বাড়িতে চলে যান বলে জানিয়েছেন।
ভাইরাসের বিস্তার রোধে মার্চ থেকে যে লকডাউন চলছিল, তা জুনে এসে মোটামুটি উঠে গেলেও রাজধানী এখনও চেনা রূপে ফেরেনি।
বিভিন্ন অফিস চলছে সীমিত পরিসরে; হোটেল, রেস্তোরাঁসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুললেও বেচা-বিক্রি নেই বললেই চলে। ঢাকার বিভিন্ন রেস্তোরাঁর কর্মীরাও রয়েছেন সঙ্কটে।
মোহাম্মদপুরের রেইনবো ক্যাফের কর্মচারী মোহাম্মদ রাসেল কাজ হারিয়ে নরসিংদীতে গ্রামের বাড়িতে ফিরে গিয়েছিলেন। বিধিনিষেধ শিথিল হয়ে ওঠার পর ফিরলেও তার ক্যাফে না খোলায় এখন সঙ্কটে রয়েছেন।
এখন কখনও মৌসুমী ফল, কখনও রাস্তার পাশে মাস্ক, স্যানিটাইজার বিক্রি করছেন; আর অপেক্ষা করছেন, কবে তার ক্যাফে খুলবে?
ক্যাফে খুলবে শুনছি। আর কিছুদিন দেখব। যদি না খুলে তবে বাড়ি চলে যাব।”
কোটি মানুষের শহরে রাসেলের মতো এমন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে রয়েছে অসংখ্য মানুষ, সঙ্কটে পড়ে তাদের মধ্যে যারা এখনও রয়েছেন, বাড়ির পথ ধরতে চাইছেন তারাও।
সংখ্যার হিসাবে কতটা, তা জানা না গেলেও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বাড়িভাড়ার বিজ্ঞাপন বেড়ে যাওয়া বুঝিয়ে দেয়, এমন মানুষ এখন কম নয়।
কোটি মানুষের শহরে রাসেলের মতো এমন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে রয়েছে অসংখ্য মানুষ, সঙ্কটে পড়ে তাদের মধ্যে যারা এখনও রয়েছেন, বাড়ির পথ ধরতে চাইছেন তারাও।
সংখ্যার হিসাবে কতটা, তা জানা না গেলেও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বাড়িভাড়ার বিজ্ঞাপন বেড়ে যাওয়া বুঝিয়ে দেয়, এমন মানুষ এখন কম নয়।
সম্প্রতি বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক ড. বিনায়ক সেন আরেক গবেষণায় দেখিয়েছেন, মহামারীর কারণে এ পর্যন্ত ১ কোটি ৬৪ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। এর মধ্যে শহরের শ্রমিকের আয় কমেছে ৮০ শতাংশ এবং গ্রামীণ শ্রমিকের আয় কমেছে ১০ শতাংশ।
বিনায়ক সেন বলছেন, মহামারীর আগে দেশে মোট বেকার ছিল ১৭ শতাংশ। এখন তা ১৩ শতাংশ বেড়ে ৩০ শতাংশে পৌঁছেছে।
কর্মসংস্থানের জন্য যারা এক সময় রাজধানীতে এসেছিলেন, মহামারীতে এখন তাদের উল্টোযাত্রা দেখা দিলেও ফিরে তারা কী করবেন, সেটা একটা বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ দিকে এখন মনোযোগ দিতে হবে সরকারকে।
এক্ষেত্রে সরকার গৃহীত ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ প্রকল্পটি এগিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর।
সরকারের কর্তাব্যক্তিরাও বলছেন, গ্রামে এখন ওয়াইফাইসহ ডিজিটাল সব সুবিধা নিয়ে যাচ্ছে সরকার। এই সুযোগে গ্রামে যে সুযোগের সৃষ্টি হয়েছে, তা দিয়ে নতুন উদ্যোক্তা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতেই পারে।
বিনায়ক সেন আশঙ্কা করছেন, চলতি বছরের শুরুতে দেশে সার্বিক দারিদ্র্যের হার ২০ দশমিক ৩ শতাংশ থাকলেও বছর শেষে তা ২৫ শতাংশ ছাড়াতে পারে।
বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে যদি শ্রমিকের আয় ৫০ শতাংশ এবং শেষ প্রান্তিকে যদি ৫০ শতাংশ আয় উদ্ধার করা সম্ভব হয়, তাহলে দারিদ্র্যের হার ২৫ শতাংশের মধ্যে রাখা যাবে, নইলে আরও খারাপ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে…
সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো…
পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…
রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…
Leave a Comment