বিভাগ ঢাকা

২৪ ঘন্টায় নারায়ণগঞ্জে নতুন করে করোনা শনাক্ত ৭৪, মৃত্যু ১

সাম্প্রতিক সংবাদ
মুনতাহা মিহীর
Sponsored

করোনায় আক্রান্ত হয়ে পলাশ নামের এক যুবক রাজধানী ছেড়ে চলে যান লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম ধবলসুতিতে। তিনি ঢাকায় পুলিশের চেকপোস্ট ফাঁকি দিতে পারলেও ধরা পড়েন পাটগ্রাম পুলিশের কাছে। এরপর বৃহস্পতিবার রাতে তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসোলেশন ওয়ার্ডে নেওয়া হয়। ধরা পড়ার পর পলাশ পুলিশকে জানান, একটি মাইক্রোবাসে করে কয়েক বন্ধুর সঙ্গে ঢাকার উত্তরা এলাকা থেকে গ্রামের উদ্দেশে রওনা হন।

একইভাবে করোনা উপসর্গ নিয়ে ঢাকা থেকে শ্বশুরবাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে গিয়ে মারা গেছেন শুকুর আলী। করোনার উপসর্গ নিয়ে ঢাকা থেকে পালিয়ে যান পারভীন বেগম নামের এক নারী। সেখানে তাঁকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর সেখান থেকেও তিনি পালিয়ে যান। পরে তাঁর মৃত্যু হয়। এভাবে ঢাকার প্রবেশ পথ ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিনই ঢাকা ছাড়ছে মানুষজন। মালবাহী ট্রাক, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কারসহ বিভিন্ন পরিবহনে গাদাগাদি করে তারা ছুটছে বাড়িতে। তাতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন।


প্রাইভেট কার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ছাড়াও পিকআপ, ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশায় ঢাকা থেকে পুলিশের চেকপোস্ট ফাঁকি দিয়ে অবাধে প্রবেশ ও বের হচ্ছে মানুষ। পরিবহন ও ট্রাফিক পুলিশের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকার কাছাকাছি গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ আশপাশের এলাকায় মানুষজন যাওয়া-আসা করছে বেশি। ভেঙে ভেঙে বিভিন্ন যানবাহনে গন্তব্যে যাচ্ছে তারা। অনেকে মোটরসাইকেলেও যাতায়াত করছে। তবে কাউকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করতে দেখা যায়নি।

করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে দেড় মাস আগে ঢাকায় প্রবেশ ও বহির্গমন নিয়ন্ত্রণে রাখর ঘোষণা দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। তবে ওই ঘোষণা এখন শুধু কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ মার্চ থেকে বাস, লঞ্চ, ট্রেনসহ সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ আছে। ঢাকার চারটি প্রবেশপথে ২৪ ঘণ্টা চেকপোস্ট স্থাপন করে তল্লাশি করছে পুলিশ। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ যাতে ঢাকায় প্রবেশ ও ঢাকা থেকে বের হতে না পারে, সেদিকে কঠোর নজরদারি রয়েছে—বলেছেন এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা।
গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকায় প্রবেশের সব পথই উন্মুক্ত রয়েছে। অবাধে মানুষ ও যানবাহন ঢুকছে ও বের হচ্ছে। নেই আগের মতো পুলিশি তল্লাশিও। গাবতলী সেতু, কাঁচপুর সেতু, পোস্তগোলা সেতু, বাবুবাজার সেতু, বছিলা সেতু, বিরুলিয়া সেতু, টঙ্গী সেতু, কাঞ্চন সেতু ও ডেমরা সেতুতে বসানো হয় পুলিশের চেকপোস্ট। এসব চেকপোস্ট বেশির ভাগ সময় কার্যকর থাকে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে গাবতলীতে গেলে সেখাানে সেতুর দুই প্রান্তে দেখা যায়, দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা পুলিশ পাহারা থাকার কথা থাকলেও পুলিশ সব সময় থাকছে না। বিশেষ করে রাত থেকে ভোর পর্যন্ত একজন পুলিশও থাকে না। ফলে বাস ছাড়া সব ধরনের যানবাহন ঢাকায় ঢুকছে বিনা তল্লাশিতে। সেতুসংলগ্ন ডিএমপির আঞ্চলিক ট্রাফিক কার্যালয় থাকলেও এখন আর আগের মতো ‘চেকিং’ নেই। তবে ডিএমপি নির্দেশনার পর শুরুর দিকে পুলিশের ব্যাপক চেকিং হতো সেতুতে। কৃষি ও জরুরি পণ্য পরিবহনের অনুমতি থাকলেও সাভার থেকে ইট, বালুবাহী ট্রাক বিনা প্রশ্নে প্রবেশ করছে ঢাকায়। সেই সঙ্গে খোলা পিকআপে করে ঢাকার বাইরে থেকে মানুষ ঢুকছে ঢাকায়।

এ ছাড়া ঢাকায় ঢোকার অপর প্রবেশপথগুলোর মধ্যে পুরান ঢাকার বছিলার শহীদ বুদ্ধিজীবী সেতুতেও গত মাসে পুলিশের কড়া পাহারা ও ব্যারিকেড ছিল। যার কারণে ঢাকায় প্রবেশ কিংবা বের হতে প্রত্যেককে প্রশ্নের মুখে পড়তে হতো, তবে এখন নেই। সেতুর আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ৬ মে থেকেই এখানে পুলিশের পাহারা নেই বললেই চলে। এখন মানুষ ইচ্ছামতো ঢাকায় ঢুকছে বের হচ্ছে। এ ছাড়া সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী প্রবেশ পথের অবস্থাও একই। গতকাল শুক্রবার ওই এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রবেশ পথে সব সময় পুলশের তল্লাশি থাকে না। অথচ কাঁচপুর সেতুর মাধ্যমে ঢাকার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলো। এ পথে চলাচল করেন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের যাত্রীদের বড় অংশ। করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে ঢাকায় প্রবেশ ও বহির্গমন নিয়ন্ত্রিত করা হলেও যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদে এর তেমন প্রভাব নেই। প্রাইভেট কার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ছাড়াও পিকআপ, ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশায় ঢাকায় অবাধে প্রবেশ ও বের হচ্ছে মানুষ। ঢাকার কাছাকাছি জেলাগুলো থেকে মানুষ নিয়মিত যাওয়া-আসা করছে। বিভিন্ন যানবাহনে গন্তব্যে যাচ্ছে ভেঙে ভেঙে। অনেকে যাতায়াত করছে মোটরবাইকে। তবে কাউকে দেখা যায়নি স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করতে। তবে দূরপাল্লা ও আন্ত জেলার সব বাস চলাচল করছে না। এ ছাড়া রাইড শেয়ারিং অ্যাপ বন্ধ থাকলেও ‘খ্যাপে’ মোটরসাইকেলে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় যাত্রী পরিবহন চলছে।

শহিদুল নামে এক মোটরসাইকেলচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনায় বেকার হয়ে পড়েছেন। অ্যাপ বন্ধ থাকায় অনেক দিন ঠিকমতো বাইক চালাতে পারেননি। তবে অ্যাপ ছাড়াই এখন তিনি নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লায় যাত্রী নিয়ে যান। যাত্রীদের কেউ করোনায় আক্রান্ত কি না তা জানার সুযোগ নেই তাঁর। পেটের তাগিদের কাছে এত বাছবিচার করার সুযোগ নেই বলে জানান তিনি।

Sponsored
Leave a Comment

সর্বশেষ

রাওয়ালপিন্ডিতে বৈঠক নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা

ঢাকা, ২৪ আগস্ট ২০২৫: পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. ফাইজুর…

August 24, 2025

বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া সভাপতি ফারুকের প্রায় ১২০ কোটি টাকা ট্রান্সফার!

বিসিবির ফিক্সড ডিপোজিট নিয়ে বিশাল আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে! ক্রিকেট বোর্ডের…

April 24, 2025

২০০৯ এর বিডিআর বিদ্রোহ এবং ভারতের যুদ্ধ প্রস্তুতি

"২০০৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। ভারতীয় প্যারাশুট রেজিমেন্টের ৬ষ্ঠ ব্যাটালিয়নের মেজর কমলদীপ সিং সান্ধু সেদিন "স্পিয়ারহেড"…

February 26, 2025

কি ঘটেছিলো বিডিআর বিদ্রোহে! নেপথ্য কাহিনি

আলোচিত বিডিআর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য কাহিনি আজও অনুদ্ঘাটিত রয়ে গেছে। দীর্ঘ ১৫ বছরেও সেই রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের…

December 29, 2024

পিটিয়ে হত্যা: ভিডিওতে শনাক্ত ছাত্রদলের ৫ নেতাকর্মী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে…

September 21, 2024

২০২৩ এর সফল ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ড পেলেন সাইমন সাদিক

সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…

March 4, 2024
Sponsored