নাজমুল ইসলাম, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি: হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় সরকারী ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের সংবাদ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে লাইভে প্রচার করার জের ধরে আউশকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহিবুর রহমান হারুন কর্তৃক তিন সাংবাদিককে ক্রিকেট খেলার ব্যাট দিয়ে পেটানোর ঘটনার ১২ দিন অতিবাহিত হলেও সাংবাদিক পেটানোর মূল নায়ক ও বহুঅপকর্মের হোতা বিতর্কিত চেয়ারম্যান হারুনকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
ইউপি চেয়ারম্যান হারুনের মোবাইল নাম্বার সচল রয়েছে,দিব্বি ফেইসবুকে পোস্ট করছেন নিয়মিত। সার্বক্ষণিক অনলাইনে দেখা যায় চেয়ারম্যান হারুনকে। তারপরও পুলিশের দাবী বিভিন্নস্থানে অভিযানের পরেও চেয়ারম্যান হারুনের কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছেনা। গ্রেফতারে প্রশাসনের ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ‘হারুণের নেটওয়ার্ক কী পুলিশের নেটওয়ার্কের চেয়ে গতিশীল? এমন অভিযোগ করেন মামলাকারী।
এছাড়াও হামলার শিকার সাংবাদিক ও স্থানীয় প্রেসক্লাব সূত্র জানায়, করোনা ভাইরাসের এই সংকট সময় মুহুর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নে নিম্ন আয়ের মানুষদের মাঝে ১০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা থাকলেও ইউপি চেয়ারম্যান তাদের দেন ৫ কেজি করে। এ নিয়ে গত ৩০ মার্চ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘‘আসুন অসহায় দিনমজুরদের মনের কথা শুনি’’ শিরোনামে এক লাইভে সাধারণ মানুষের বক্তব্যসহ অনিয়মের বিষয়টি তুলে ধরেন সাংবাদিক শাহ সুলতান আহমেদ। ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের সংবাদ ও ফেইসবুকে লাইভ প্রচার করার জের ধরে ক্ষুব্ধ হয়ে গত (১ এপ্রিল) বুধবার দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদের নবীগঞ্জ প্রতিনিধি শাহ সুলতান আহমেদকে ক্রিকেট খেলার ব্যাট দিয়ে পেটান আউশকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহিবুর রহমান হারুন ও তার লোকজন। এসময় সাংবাদিক সুলতানকে উদ্ধার করতে গেলে চেয়ারম্যান হারুন ও তার লোকজন কর্তৃক হামলার শিকার হন দৈনিক আমার সংবাদের নবীগঞ্জ প্রতিনিধি এম মুজিবুর রহমান ও চ্যানেল এস এর প্রতিনিধি বুলবুল আহমেদ।
পরে স্থানীয়রা আহত তিন সাংবাদিককে উদ্ধার করে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য গুরুতর আহত দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদের নবীগঞ্জ প্রতিনিধি শাহ সুলতান আহমেদকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। অপর দুই আহত সাংবাদিককে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এঘটনার পর থেকে দেশব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠে।সাংবাদিক পেটানোর ঘটনায় (২ এপ্রিল) বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক এম মুজিবুর রহমান বাদি হয়ে চেয়ারম্যান হারুনকে প্রধান আসামী করে ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর চেয়ারম্যানের সহযোগী খালেদ আহমদ নামে একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর থেকে চেয়ারম্যানের কোনো খোঁজ পাচ্ছেনা বলে দাবী করছে পুলিশ। সাংবাদিকদের অভিযোগ, ক্রিকেট খেলার ব্যাট দিয়ে সাংবাদিক পেটানোর ঘটনার ১২ দিন অতিবাহিত হলেও এখনো মুল হোতা চেয়ারম্যান হারুনকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
সচেতন মহল জানায়, আশা করি পুলিশ দায়িত্বশীল হবে এবং সাংবাদিক পেটানোর মূল নায়ক ইউপি চেয়ারম্যান হারুনসহ জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসবে। এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আজিজুর রহমান বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাবে মানুষকে ঘর মুখী করতে এবং সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করতে আমরা খুব ব্যস্ত সময় পার করছি। পাশাপাশি চেয়ারম্যান হারুনকে ধরতে আমরা প্রাণপন চেষ্টা করে যাচ্ছি, ইউপি চেয়ারম্যান হারুন আত্মগোপনে রয়েছে। এ প্রসঙ্গে নবীগঞ্জ-বাহুবল সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার পারভেজ আলম চৌধুরী বলেন -‘‘সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার প্রধান আসামী ইউপি চেয়ারম্যান মহিবুর রহমান হারুনকে গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি শীঘ্রই তাকে গ্রেফতার করতে পারবো বলে আমরা আশাবাদী।