বসন্ত এসে গেছে,পহেলা ফাল্গুন আজ ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। শীতের রুক্ষতা শেষে পত্রপল্লবে ফিরছে সজীবতা। শীতের ঝরা পাতা বিদায় দিয়ে বইছে ফাগুনের হাওয়া। শীতের রুক্ষতা পেছনে ফেলে বসন্তের উতাল হাওয়ায় নবপ্রাণের ছোঁয়া সবখানে, মহাসমারোহে প্রকৃতি খুলে দিয়েছে সৌন্দর্যের দুয়ার। কৃষ্ণচূড়া আর শিমুলের দেখা এখনো না মিললেও পলাশের ডালে ডালে আলোর নাচন আর পাখিদের কলতান জানান দিচ্ছে- এসে গেছে ঋতুরাজ-বসন্ত।
১৪ ফেব্রুয়ারি পহেলা ফাল্গুন। বসন্তের প্রথম দিন। আজ আবার ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস’। এই দিনগুলোতে রঙিন হয়ে ওঠে মন। বাহারি সাজে সেজে ওঠে প্রকৃতি ও মানুষ। তাই দুটি দিবসকে সামনে রেখে কবি লিখেছেন-
‘ফাগুনের আগুন লাগে তোমার হৃদয়ে, বলি হে সখা সেজেছো কেমন নতুনের আগমনে।’ ঋতুরাজ বসন্তে প্রকৃতি কন্যা সাজে নতুন রূপে। গাছে গাছে নতুন পাতার আগমন ঘটে। শিমুল, পলাশ আর কৃষ্ণচূড়ার আবাসে চারিদিক লাল হয়ে যায়। নারীরা বাসন্তি শাড়িতে নিজেকে নতুন রূপে সাজিয়ে তোলে। পুরুষ সাদা পাঞ্জাবি আর শিশুরা রং-বেরঙের পোশাকে সজ্জিত হয়।
‘বারো মাসে তেরো পার্বণ’ বাঙগালি সংস্কৃতির এক অপার নিদর্শন বসন্ত বরণ। বলা হয়ে থাকে ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক, বসন্ত বরণে বাঙালি সবসময়ই সচেষ্ট। কারণ বসন্তের শুরুতেই আমের বাগানে দেখা যায় নতুন অম্র মুকুলের অমল হাসি। ফাল্গুনের প্রথম প্রহরে রক্তিম লালিমা নিয়ে সূর্য প্রকৃতিকে নবরূপে সজ্জিত করে। নতুন পল্লবে ভরে উঠে প্রকৃতি কানন। চারপাশ কোকিলের কুহুকুহু তানে মুখরিত হয় প্রাণ ছোঁয়ে।
নিঃশ্বেষিত শীতের হিমেল পরশ শেষে আসে বসন্ত। সাথে সাথে বছর ঘুরে আসে ভালোবাসার সংস্পর্শ বছর পুঞ্জি। ভালোবাসা শুধুই লোক দেখানো নয়, ভালবাসা আত্মার এক নিবিড় সম্পর্ক। ভালোবাসে না এমন লোক খুব কমই আছে পৃথিবীতে। প্রাণ যেখানে প্রণয় সেখানে, সেইত্ ভালোবাসা। ভালোবাসা মনের সব অন্ধকারকে দূর করে আলোর সন্ধান দেয়।
কোনো দিবস লাগেনা ভালোবাসার জন্য। তবুও ভ্যালেন্টাইনের প্রেমকাহিনিকে অবলম্বন করে আমরা ভালোবাসার দিনক্ষণ এর পিছু নিয়েছি। ভালোবাসা শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার মাঝে সীমাবদ্ধ থাকা নয়। এটি জগৎজুড়ে এক মায়ার বন্ধন বাবা মা, আত্মীয় স্বজন সবাই ভালোবাসার অংশ। কেউ ভালোবেসে হাসে, কেউ ভালোবেসে হাসায়। ভালোবাসা দিবসে কেউ ছোটে আপনজনের কাছে, কেউ ছুটে যায় ছিন্নমূল শিশুদের কাছে। কেউবা ভালোবাসে কাঁদে, কেউ আশা নিয়ে থাকে বাসায়।
ভালোবাসার পবিত্রতা রক্ষা করে পূর্ণ হোক সব আশা। হীনম্মন্যতা দূর করে সত্যিকারের ভালোবাসায় নিমজ্জিত হোক তরুণরা। ভালোবাসায় ভরে উঠুক জীবন। এ বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসার নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপিত হোক। বসন্তের রঙে রাঙিয়ে তুলুন জীবন। ভালোবাসুন মাতৃভাষা, দেশ এবং দেশের মানুষ। ভালোবাসুন দেশীয় পণ্য এবং নিজস্ব সংস্কৃতি। ভালোবাসায় ভরে উঠুক সবার জীবন। শুভ হোক আগামীর পথচলা।
লেখকঃ বোরহান মেহেদি, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক।