সাম্প্রতিক শিরোনাম

দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে তিন বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলেন। তাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়; উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ রাষ্ট্রের দর্শন, আদর্শ, চেতনাকে হত্যা করে দেশকে আবার পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া।

বঙ্গবন্ধু যখন সৃষ্ট সব সংকট ক্রমান্বয়ে কাটিয়ে উঠে দেশকে একটি স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরিয়ে এনে অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন, তখনই তাকে হত্যা করা হয় সপরিবারে।

স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন, ভঙ্গুর অর্থনীতি সচল, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, প্রশাসনকে পুনর্গঠন করে সচল, জনগণের সার্বিক জীবনমান উন্নয়ন, বিশ্বদরবারে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বীকৃতি আদায়, সর্বোপরি একটি সংবিধান প্রণয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল বঙ্গবন্ধু ও তার সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ। এই সময়ে বঙ্গবন্ধুকে মোকাবিলা করতে হয়েছে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক নানামুখী ষড়যন্ত্র ও চাপ, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো।

বঙ্গবন্ধু তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন ও সাড়ে তিন বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে উপলব্ধি করেছিলেন আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার অন্যতম বাধা হচ্ছে দুর্নীতি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু ছিলেন সোচ্চার এবং দৃঢ় অবস্থানে। বঙ্গবন্ধু তার বিভিন্ন বক্তব্য, বিবৃতিতে ও লেখায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার অবস্থান সুস্পষ্ট করেছিলেন। দেশ পুনর্গঠনে দুর্নীতি যে বিরাট একটি অন্তরায় এবং দুর্নীতির সঙ্গে যে মূলত শিক্ষিত সমাজের ক্ষুদ্রতম অংশ জড়িত, সে বিষয়টি তিনি একাধিকবার উচ্চারণ করার পাশাপাশি দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সতর্ক করে আত্মশুদ্ধির উপদেশ ও আহ্বান জানিয়েছিলেন।

২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫ সালে জাতীয় সংসদে প্রদত্ত এক ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘করাপশন আমার বাংলার মজদুর করে না। করাপশন করি আমরা শিক্ষিত সমাজ, যারা আজকে ওদের টাকা দিয়ে লেখাপড়া করেছি। আজ যেখানে যাবেন, করাপশন দেখবেন। আমাদের রাস্তা খুঁড়তে যান—করাপশন। খাদ্য কিনতে যান—করাপশন। জিনিস কিনতে যান—করাপশন। বিদেশে গেলে টাকার ওপর করাপশন। তারা কারা? আমরা যে ৫ পারসেন্ট শিক্ষিত সমাজ, আর আমরাই করি বক্তৃতা। আমরা লিখি খবরের কাগজে, আমরাই বড়াই করি। আজ আত্মসমালোচনার দিন এসেছে। এসব চলতে পারে না। মানুষকে একদিন মরতে হবে। কবরে যেতে হবে। কিছুই সে নিয়ে যাবে না। তবু মানুষ ভুলে যায় কী করে এ অন্যায় কাজ করতে পারে।… আর এই দুঃখী মানুষ যে রক্ত দিয়েছে, স্বাধীনতা এনেছে, তাদের রক্তে বিদেশ থেকে খাবার আনিয়ে সেই খাবার চুরি করে খাবে; অর্থ আনব, চুরি করে খাবে; টাকা আনব, তা বিদেশে চালান দেবে। বাংলার মাটি থেকে এদের উত্খাত করতে হবে।… আজ দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, কালোবাজারি নতুন পয়সাওয়ালা—এদের কাছে আমার আত্মবিক্রি করতে হবে, এদের অধিকারের নামে আমাদের এদেরকে ফ্রি-স্টাইলে ছেড়ে দিতে হবে। কখনো না। কোনো দেশ কোনো যুগে তা দেয় নাই। দিতে পারে না। যারা আজকে আমার মাল বিদেশে চালান দেয়, চোরাকারবারি করে, যারা দুর্নীতি করে, এদের বাংলার মাটি থেকে উত্খাত করতে হবে। মানুষকে যারা পয়সা দেয়, তোমার মাহিনা দেয়, তোমার সংসার চালানোর জন্য ট্যাক্স দেয়, তার কাছে তুমি আবার পয়সা খাও! মেন্টালিটি চেইঞ্জ করতে হবে। সরকারি কর্মচারী, মন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট আমরা জনগণের সেবক, আমরা জনগণের মাস্টার নই। মেন্টালিটি আমাদের চেইঞ্জ করতে হবে। আর যাদের পয়সায় আমাদের সংসার চলে, যাদের পয়সায় আমরা গাড়ি চড়ি, যাদের পয়সায় আমরা পেট্রল খরচ করি, আমরা কার্পেট ব্যবহার করি, তাদের জন্য কী করলাম? সেটাই আজ বড় জিনিস। এত বড় দুধর্ষ, এত বড় শক্তিমান, এত বড় বন্দুক, এত কামান, এত মেশিনগান, এত পাকিস্তানি সৈন্য, এত বড় তথাকথিত শক্তিশালী আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান, ইসকান্দার মির্জা, চৌধুরী মোহাম্মদ আলী বাংলার মানুষকে অত্যাচার করতে চেষ্টা করেছে বন্দুক দিয়ে, তার বিরুদ্ধে বিনা অস্ত্রে আপনাদের নিয়ে সংগ্রাম করে শেষ পর্যন্ত যদি উত্খাত করতে পারি, তাহলে কিছু দুর্নীতিবাজ, কিছু ঘুষখোর, কিছু শোষক, কিছু ব্ল্যাক মার্কেটিয়ার্স বাংলার মাটি থেকে উত্খাত করতে পারব না—এ কথা আমি বিশ্বাস করি না।’ একই তারিখে সংসদের অপর অধিবেশনের ভাষণে বঙ্গবন্ধু মাননীয় স্পিকারকে উদ্দেশ করে উপরোক্ত বক্তব্য পুনর্ব্যক্ত করে আহ্বান জানিয়েছিলেন, ‘দেশকে বাঁচান, মানুষকে বাঁচান, মানুষের দুঃখ দূর করুন। আর দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, চোরাকারবারিদের উত্খাত করুন।

২৬ মার্চ ১৯৭৫ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত জনসভায় প্রদত্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধু শিক্ষিত সমাজের উদ্দেশে বলেন, ‘শিক্ষিতদের কাছে আমার একটা প্রশ্ন। আমি এই যে দুর্নীতির কথা বল্লাম, তা কারা করে? আমার কৃষক দুর্নীতিবাজ? না। আমার শ্রমিক? না। তাহলে ঘুষ খায় কারা? ব্ল্যাক মার্কেটিং করে কারা? বিদেশি এজেন্ট হয় কারা? বিদেশে টাকা চালান দেয়, হোর্ড করে কারা? এই আমরা যারা শতকরা ৫ জন শিক্ষিত। এই আমাদের মধ্যেই রয়েছে ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ। আমাদের চরিত্রের সংশোধন করতে হবে, আত্মশুদ্ধি করতে হবে। দুর্নীতিবাজ এই শতকরা ৫ জনের মধ্যে, এর বাইরে নয়।’

ঐ জনসভায় বঙ্গবন্ধু দ্ব্যার্থহীন কণ্ঠে আরো বলেন, ‘আজ কে দুর্নীতিবাজ? যে ফাঁকি দেয়, সে দুর্নীতিবাজ। যে ঘুষ খায়, সে দুর্নীতিবাজ; যে স্মাগলিং করে, সে দুর্নীতিবাজ; যে হোর্ড করে, সে দুর্নীতিবাজ। যারা বিবেকের বিরুদ্ধে কাজ করে, তারাও দুর্নীতিবাজ। যারা বিদেশের কাছে দেশকে বিক্রি করে, তারাও দুর্নীতিবাজ। এই দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম শুরু করতে হবে।… যে ঘুষখোর, যে দুর্নীতিবাজ, যে মুনাফাখোর, যে আমার জিনিস বিদেশে চোরাচালান দেয়, তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে।’

ঐ জনসভায় বঙ্গবন্ধু জনগণকে আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, ‘আপনারা বহুদূর থেকে কষ্ট করে এসেছেন। গ্রামে গ্রামে ফিরে যান। গিয়ে বলবেন, দুর্নীতিবাজদের খতম করতে হবে।’

২১ জুলাই ১৯৭৫ নবনিযুক্ত জেলা গভরনরদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘কিন্তু শুধু নিজেরা ঘুষ খাওয়াই করাপশন নয়। এ সম্বন্ধে আমার কথা হলো, করাপ্ট পিপলকে সাহায্য করাও করাপশন। নেপোটিজমও কিন্তু এ টাইপ অব করাপশন। স্বজনপ্রীতিও কিন্তু করাপশন। আপনারা এসব বন্ধ করুন। … স্বজনপ্রীতি ছেড়ে দিলে আপনারা করাপশন বন্ধ করতে পারবেন।… আর আজ আমার কাছে আপনারা তওবা করে যান যে স্বজনপ্রীতি করবেন না। ঘুষখোরদের সাহায্য করবেন না।

বঙ্গবন্ধু ঐ ভাষণে বাংলাদেশকে যারা ভালোবাসে না, তাদের উদ্দেশে আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘যার যা ইচ্ছা লেখে, কেউ এ নামে বাংলাদেশকে ডাকে, কেউ ও নামে বাংলাদেশকে ডাকে; বাংলাদেশের নাম পর্যন্ত বলতে তারা লজ্জাবোধ করে। তাদের অধিকার নাই বাংলার মাটিতে থাকার—যেমন নাই চোরাকারবারি, ঘুষখোর, মুনাফাখোরদের, যেমন নাই দুর্নীতিবাজদের।’

বঙ্গবন্ধুর উপরোক্ত বক্তব্য থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, তিনি ‘দুর্নীতি’ ও ‘দুর্নীতিবাজ’-এর সংজ্ঞা বিস্তৃত করেছেন, অর্থাত্ বঙ্গবন্ধু ‘ইন্টেলেকচুয়াল করাপশন’ অর্থাত্ ‘বৌদ্ধিক বা বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্নীতির’ নতুন ধারণা দিয়েছিলেন। স্বীয় কর্তব্য পালন না করা, অর্থাত্ কাজে ফাঁকি দেওয়া, নিজে দুর্নীতি না করলেও দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিকে প্রশয় দেওয়া, দুর্নীতিবাজকে সাহায্য করা এবং স্বজনপ্রীতিকে তিনি দুর্নীতির সংজ্ঞাভুক্ত করেছিলেন। আজকের বাস্তবতায় বঙ্গবন্ধুর উপরোক্ত বক্তব্যসমূহ পুনঃপুন স্মরণ করা প্রয়োজন—সব রাজনৈতিক নেতাকর্মী, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য, সরকারি চাকরিজীবী, আদালত ও বিচার অঙ্গনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে।

বঙ্গবন্ধু তার দীর্ঘ কারাজীবনে কারা অভ্যন্তরের বিভিন্ন দুর্নীতি প্রত্যক্ষ করেছেন। ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থে (পৃষ্ঠা-৩৭) বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, “দুঃখের বিষয়, কয়েদিদের কপালে ভালো ঔষধ কম জোটে। কারণ ভালো ব্যবহারের ডাক্তার যারা, যারা কয়েদিদেরও মানুষ ভাবে, আর রোগী ভেবে চিকিত্সা করে, তারা বেশি দিন জেলখানায় থাকতে পারে না। অনেক ডাক্তার দেখেছি এই জেলখানায়, যারা কয়েদিদের ডাইট দিতে কৃপণতা করে না, অসুস্থ হলে ভালো ঔষধ দেয়। আবার অনেক ডাক্তার দেখেছি, যারা কয়েদিদের কয়েদিই ভাবে, মানুষ ভাবে না, রোগ হলে ঔষধ দিতে চায় না। পকেটে করে ঔষধ বাইরে নিয়ে বিক্রি করে। ঘুষ খায় চিকিত্সার নামে। আবার টাকা পেলে হাজতিদের মাসের পর মাস হাসপাতালে ভর্তি করে রাখে, ব্যারাম নাই যদিও। এভাবে বাইরের থেকে জামিনের চেষ্টা করা যায়। ম্যাজিস্ট্রেট যখন জেলখানায় দেখতে যায় কয়েদিদের অবস্থা, তখন হাসপাতালে অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি দেখায় দেয়। এতে জামিন পেয়ে যায়। বাইরে থেকে বিচারাধীন আসামির কেউ হয়তো কোনো ডাক্তারের সাথে দেখা করে টাকাপয়সা দিয়ে গেছে, বলে গেছে জামিন হলে আরো দেবে। যার অসুখ নাই তাকে মাসের পর মাস হাসপাতালে সিট দিয়ে রেখে দিয়েছে, আর যে সত্যিই রোগী তার স্থান নাই। … আবার এমন ডাক্তার দেখেছি, যারা জেলখানায় পানিও মুখে দেয় না। ঘুষ তো দূরের কথা, রোগীদের ভালোভাবে চিকিত্সা করে, রাতদিন পরিশ্রম করে। আবার এমন ডাক্তার জেলে দেখেছি, সুন্দর চেহারা। মুখে দাড়ি, নামাজ পড়তে পড়তে কপালে দাগ পড়ে গেছে, দেখলে মনে হয় একজন ফেরেস্তা। হাসপাতালের দরজা বন্ধ করে কয়েদি রোগীদের ডাইট থেকে ডিম, গোস্ত, রুটি খুব পেটভরে খান, আর ঔষধও মাঝে মাঝে বাইরে নিয়ে বিক্রি করেন।’ 

বঙ্গবন্ধুর উপরোক্ত অভিজ্ঞতা আজ থেকে ৬০-৬৫ বছর আগের। সময় অনেক গড়িয়েছে। দেশও অনেক এগিয়েছে। কিন্তু প্রভাবশালী ও বিত্তবান হাজতি-কয়েদিদের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ডাক্তারদের ম্যানেজ করে মাসের পর মাস জটিল কোনো রোগে অসুস্থ না হয়েও হাসপাতালে চিকিত্সার নামে দিন কাটানোর সংবাদ আমরা প্রায়শই জানতে পারি গণমাধ্যমে প্রকাশিত-প্রচারিত সংবাদ থেকে।

৮ মার্চ, ১৯৭৫ টাঙ্গাইলের কাগমারীতে মাওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের শতকরা ২৫ ভাগ দুঃখ দূর হয়ে যাবে যদি দুর্নীতি বন্ধ হয়ে যায়। … যার মধ্যে মনুষ্যত্ব আছে, সে-ই মানুষ হয়। সেই জন্যে আমি চাই মনুষ্যত্ব ফিরে আসুক। আজ দুঃখের সঙ্গে আমাকে বলতে হয় যে আজকে যারা আমরা অনেকে দুর্নীতিবাজ হয়ে গেছি, তারপর আমরা দুর্নীতিবিরোধী বক্তৃতা করি। লজ্জায় মাথা নত হয়ে যায় আমার। আমি অনুরোধ করব যে আত্মশুদ্ধি করে মানুষ হও। তাহলে মানুষকে মানুষ করতে পারবা। আমার অনুরোধ ভাইয়েরা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম চাই।’

ঐ অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘একটা মানুষ আপনারা কেন দুর্নীতি করেন আমাকে বুঝায়া বলেন তো। আজ হোক, কাল হোক, এই যে কথা বলেছি, এই যে আপনারা বসে আছেন, কেউ কি বলতে পারেন বুকে হাত দিয়ে যে কাল সকালে আমি বেঁচে থাকব? ওটা আল্লাহর হাতে আপনার মৃত্যু। আজও মরতে পারি। এক ঘণ্টা পরেও মরতে পারি। তাহলে কেন আপনারা দুর্নীতি করবেন? মরার সময় কী নিয়ে যাবেন? তাহলে কেন দুর্নীতি করবেন? রাত্রে যদি চিন্তা করেন যে আজ ঘুমের মধ্যে আমরা মরতে পারি, তাহলে আর দুর্নীতি করতে পারবেন না।’ 

১৫ জানুয়ারি ১৯৭৫ রাজারবাগ পুলিশ লাইনে পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষ্যে প্রদত্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘একদল লোকের পয়সার লোভ অত্যন্ত বেড়ে গেছে। পয়সার জন্য তাদের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। মৃত্যুর পর এ পয়সা তাদের কোনো উপকারে আসবে না। পয়সায় যদি তাদের সন্তানরা মানুষ না হয়, তাহলে তারা নানা অপকর্মে তা উড়িয়ে দেবে। তাতে তারা লোকের অভিশাপ কুড়িয়ে আখেরাতেও শান্তি পাবে না। … আপনারা একবার আল্লাহর নামে প্রতিজ্ঞা করুন, ‘আমরা দুর্নীতির ঊর্ধ্বে থাকব।’ প্রতিজ্ঞা করুন আমরা দুর্নীতিবাজ খতম করব।’

২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫ জাতীয় সংসদে প্রদত্ত ভাষণে (সংসদে এটাই ছিল বঙ্গবন্ধুর শেষ ভাষণ) বঙ্গবন্ধুর আহ্বান ছিল, ‘যদি সকলে মিলে আপনারা নতুন প্রাণে নতুন মন নিয়ে খোদাকে হাজির-নাজির করে, নিজের আত্মসংশোধন করে, আত্মশুদ্ধি করে, ‘ইনশাআল্লাহ্্’ বলে কাজে অগ্রসর হন, তাহলে জানবেন, বাংলার জনগণ আপনাদের সাথে আছে, বাংলার জনগণ আপনাদের পাশে আছে। … ইন্শাআল্লাহ্্ আমরা কামিয়াব হবই।’

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর প্রায় ৪৫ বছর অতিক্রান্ত হতে চলেছে। এ বছর জাতি পালন করছে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী। কিন্তু বাস্তবতা এটাই যে দেশে দুর্নীতি আরো বিস্তৃত হয়েছে এবং দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে দুর্নীতি দমন এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দেশ কয়েক দফায় (২০০১-২০০৫) দুর্নীতিতে বিশ্বের মধ্যে শীর্ষ অবস্থান করে নিয়েছিল। বিদেশে অর্থ পাচারকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান এখন আলোচনার বিষয়। শেয়ার মার্কেট, বিভিন্ন ব্যাংক লুণ্ঠন, ভুয়া আমদানি-রপ্তানির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার ও আত্মসাত্, সরকারি-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসমূহের কেনাকাটা-টেন্ডার, চাকরিতে নিয়োগে অবাধ লাগামহীন দুর্নীতি, ঘুষ ছাড়া সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে সাধারণ জনগণের সেবা না পাওয়ার বিস্তর অভিযোগ। বিস্ময়ের বিষয় এই যে, প্রকৃত দোষীদের বিচারের আওতায় নিয়ে এসে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সম্ভব হচ্ছে না।

দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে এবং দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রের নির্বাহী ও বিচার বিভাগের আরো দৃঢ়, কঠোর ও ত্বরিত ভূমিকা ও দায়িত্ব পালন এখন সময়ের চাহিদা—বঙ্গবন্ধুর কাঙ্ক্ষিত দুর্নীতিমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে এ বিষয়ে চিন্তা, পরিকল্পনা ও যথাযথ আন্তরিক কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও এর সফল বাস্তবায়নই হবে তার প্রতি রাষ্ট্রের, নির্বাহী ও বিচার বিভাগের প্রকৃত শ্রদ্ধা।

বঙ্গবন্ধু তার অভিজ্ঞতা থেকে বলেছিলেন, দেশের শতকরা ৫ ভাগ শিক্ষিত লোক দুর্নীতি করে। কিন্তু আজকের বাস্তবতা হলো, বঙ্গবন্ধুর কাঙ্ক্ষিত সোনার বাংলায় পরিসংখ্যান করার সময় এসেছে—‘কত ভাগ শিক্ষিত লোক দুর্নীতি করে না বা দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয় না বা নিজে দুর্নীতি না করলেও নিজের অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনে ও ভয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারে না।’

সর্বশেষ

বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া সভাপতি ফারুকের প্রায় ১২০ কোটি টাকা ট্রান্সফার!

বিসিবির ফিক্সড ডিপোজিট নিয়ে বিশাল আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে! ক্রিকেট বোর্ডের প্রায় ১২০ কোটি টাকার ফান্ড আওয়ামী ঘরানার দুই ইয়েলো...

২০০৯ এর বিডিআর বিদ্রোহ এবং ভারতের যুদ্ধ প্রস্তুতি

"২০০৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। ভারতীয় প্যারাশুট রেজিমেন্টের ৬ষ্ঠ ব্যাটালিয়নের মেজর কমলদীপ সিং সান্ধু সেদিন "স্পিয়ারহেড" বা অগ্রগামী বাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন। ২০০৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি...

কি ঘটেছিলো বিডিআর বিদ্রোহে! নেপথ্য কাহিনি

আলোচিত বিডিআর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য কাহিনি আজও অনুদ্ঘাটিত রয়ে গেছে। দীর্ঘ ১৫ বছরেও সেই রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের সত্য কেউ জানতে পারেনি। কীভাবে কার স্বার্থে এবং...

পিটিয়ে হত্যা: ভিডিওতে শনাক্ত ছাত্রদলের ৫ নেতাকর্মী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে ছাত্রদলের যে পাঁচজনকে দেখা গেছে তারা হলেন- সাঈদ হোসেন...