পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনে নিহত রায়হান আহমেদের (৩৩) লাশ কবর থেকে তুলে পুনরায় ময়নাতদন্ত করা হয়েছে।
দাফনের চার দিন পর বৃহস্পতিবার সকালে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সজিব আহমেদ ও মেজবাহ উদ্দিন এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নেওয়া হয়।
ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক শামসুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে।
মেডিক্যাল বোর্ডে থাকা অন্য দুজন হলেন ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক দেবেস পোদ্দার ও প্রভাষক আবদুল্লাহ আল হেলাল। ময়নাতদন্ত শেষে বিকেল ৩টায় রায়হানের লাশ পুনরায় দাফন করা হয়।
ময়নাতদন্ত শেষে বোর্ডের প্রধান শামসুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, রায়হানের শরীরে প্রচুর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তাকে প্রচুর মারধর করা হয়েছে।
তবে ঠিক কী কারণে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে, তা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পর বলা যাবে।
তিনি আরও জানান, রায়হানের প্রথম দফার ময়নাতদন্তের প্রিলিমিনারি রিপোর্ট গতকাল সকালে পিবিআইকে দেওয়া হয়েছে। কিছু রাসায়নিকের নমুনা চট্টগ্রামের পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। সেগুলোর ফল এলে ময়নাতদন্তের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
বন্দরবাজার ফাঁড়ির বরখাস্তকৃত এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন সেজন্য দেশের সব ইমিগ্রেশনে চিঠি পাঠিয়েছে পিবিআই।
পিবিআইর প্রধান বনজ কুমার মজুমদার গতকাল দুপুরে ঢাকায় পিবিআইর প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এ সময় তিনি আরও বলেছেন, এসআই আকবর পলাতক। কিন্তু মামলা তদন্তের জন্য তাকে দরকার। তাই তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
সিলেট নগরীর আখালিয়ার নেহারিপাড়ার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে রায়হান আহমদকে গত শনিবার রাতে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে ধরে নেয় পুলিশ।
এরপর ১০ হাজার টাকার জন্য চালানো হয় নির্মম নির্যাতন। ফাঁড়িতে আটক থাকা অবস্থায় পুলিশের মোবাইল ফোন থেকে রায়হান তার বাসায় ফোন করে দ্রুত টাকা নিয়ে ফাঁড়িতে গিয়ে তাকে বাঁচাতে বলেছিলেন।
এরপর তার চাচা হাবিবুল্লাহ ফাঁড়িতে গেলে তাকে জানানো হয়, রায়হান অসুস্থ হওয়ায় তাকে ওসমানী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেখানে গিয়ে তিনি মর্গে রায়হানের লাশ পান।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বন্দরবাজার ফাঁড়িতে এনে এসআই আকবরের নেতৃত্বেই রায়হানের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছিল।
পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার রাতে নগরের কাষ্টঘর এলাকা থেকে রায়হানকে ধরে ফাঁড়িতে নিয়ে আসেন পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আশিক এলাহী। এ সময় দুই কনস্টেবল রায়হানকে দুই দিক থেকে ধরে রাখেন।
আর এসআই আকবর নির্যাতন চালান। একপর্যায়ে রায়হানকে ফাঁড়িতে রেখেই বেরিয়ে যান আকবর, আশিকসহ নির্যাতনকারী পুলিশ সদস্যরা। এরপর ফাঁড়িতে ডিউটিতে থাকা এক কনস্টেবল ভোর ৬টার দিকে দেখতে পান রায়হানের নিথর দেহ পড়ে আছে। তিনি আকবরকে বিষয়টি জানালে তাঁরা ফাঁড়িতে ফিরে আসেন। সকাল ৬টা ২২ মিনিটে একটি অটোরিকশা আসে বন্দর ফাঁড়ির সামনে।
এর ঠিক ২ মিনিট পর ৬টা ২৪ মিনিট ২৪ সেকেন্ডে দুই পুলিশের কাঁধে ভর করে রায়হানকে অটোরিকশায় তুলতে দেখা যায়। এরপর তাঁকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তখনো জীবিত ছিলেন রায়হান। হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি মারা যান।
এ ঘটনার পরদিন সোমবার রাত পর্যন্ত নির্যাতনের মূল হোতা এসআই আকবর পুলিশের জিম্মায় ছিলেন। ওই দিন সিলেট মহানগর পুলিশের গঠিত তদন্ত দলের মুখোমুখিও হন তিনি।
পরে বিভিন্ন সূত্র দাবি করে, ওই রাত থেকেই আকবর পলাতক। কিন্তু এ বিষয়ে পুলিশের স্পষ্ট কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।