‘মেজর ডালিমের স্ত্রীকে কিডন্যাপ করে ধর্ষণ করেছিল বঙ্গবন্ধুর পুত্র শেখ কামাল’ – বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ছোট করতে ৭৫ পরবর্তীকালে একটি মহল এমন প্রপাগান্ডা ছড়ায়। কিন্তু ডলি জহুরের নিজ বাক্য বচনে বিষয়টা আলোর মত ধবধবে পরিষ্কার হয়ে যায়। ডলি জহুর বলেন, “শেখ কামাল ভাই আমায় শেখ রেহানার মত নিজের বোন হিসেবেই দেখতেন। এইসব কথা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও প্রপাগান্ডা ছাড়া কিছুই নয়।”
শেখ কামাল আর ডলি জহুর একই নাট্যদলে কাজ করতেন। প্রতিদিন বিকাল থেকে শুরু হোতো নাটকের
রিহার্সাল – একটানা চলতো রাত ১১টা-১২টা পর্যন্ত।
রিহার্সাল শেষে ডলি জহুর বাসায় ফিরতেন শেখ কামালের সাথে। কারণ, ডলি জহুর তখন হাতিরপুলে থাকতেন। ডলি জহুরকে বাসায় পৌছে দিয়ে তারপর ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারের বাসায় যেতেন শেখ কামাল।
ডলি জহুর বলেন ১৯৭৩-৭৪ সালে ঢাকা শহরে রাত
১০টা মানেই অনেক রাত। রাস্তা একেবারেই ফাঁকা, সেখানে প্রতিদিন কামাল ভাই আমাকে ১১টা-১২টার দিকে বাসায় পৌছে দিতেন।
প্রেসিডেণ্টের ছেলে হয়েও তার কাছে সবসময় টাকা থাকতো না। এ নিয়ে অনেক ক্ষ্যাপাতাম। শুধু আমি না ক্যাম্পাসেও তার বন্ধুরা তাকে এইজন্য ক্ষ্যাপাতো। যেদিন কামাল ভাইয়ের কাছে টাকা থাকত না, সেদিন রাতে হেঁটে যেতাম। যেদিন টাকা থাকত সেদিন যেতাম রিকশায়। কত রাতের পর রাত উনার সাথে আমি একা বাসায় ফিরেছি অথচ এক বারের জন্যও আমি তাকে
আমার দিকে বাজে দৃষ্টিতে তাকাতে দেখিনি।
আমি উনার ছোট বোন শেখ রেহানার বান্ধবী ছিলাম।
ছেলেরা ছোট বোনের বান্ধবীদের সাথে কত রকম দুষ্টামী করে। উনি কোনদিন তাও করেননি। ভুল করেও বলেন নি – ডলি তোর হাতটা দেতো ধরি । এক কথায় কামাল ভাই ছিলেন ভাইয়ের মতই ভাই। শুধু আমি কেন, যেসব মেয়েরাই উনার সাথে মিশতো সবাই এই কথা স্বীকার করবেন। আর এই দেশের মানুষ তাকে নিয়ে কত রকমের অপপ্রচার চালালো। কামাল ভাই নাকি কার বৌকে তুলে নিয়ে গেছেন হ্যান ত্যান। মানুষ এত মিথ্যাবাদী হয় কি করে, আমি ভেবে পাই না। স্বার্থ মানুষকে ভিতর-বাহির থেকেই নষ্ট করে দেয়।
তা ছাড়া কামাল ভাই ছিলেন প্রেসিডেন্টের ছেলে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে তার জন্য শত শত মেয়ে পাগল। কখনও কোনদিন আমরা তাকে সেসব মেয়েদের পাল্লায় পরতে দেখিনি। তিনি কি পারতেন না সেসব মেয়েদের সাথে নোংরামী করতে ??
এখানেই শেষ নয়। সুলতানা কামালকে ভালবেসে বিয়ে করেছিলেন কামাল ভাই। সুলতানা আপা ছিলেন নামকরা একজন খেলোয়ার। বিশ্ববিদ্যালয়ে খেলা ধুলার জন্য তিনি এক নামে পরিচিত ছিলেন। অনেক লম্বা আর শক্ত পেটা শরীর। আমরা উনাকে ভয় পেতাম। সহজে কেউ সুলতানা আপার কাছে যেতাম না। ছেলেরাও ভয় পেত তাকে। এড়িয়ে চলত। সেই সুলতানা আপাকে পছন্দ করে বসলেন কামাল ভাই। আর তার হয়ে সুলতানা আপার কাছে এই কথাটা বলার দ্বায়িত্ব দেন আমাকে। আমি তো ভয়েই শেষ। না করে দিলাম। কিন্তু কামাল ভাইয়ের জোরাজোরিতে রাজী হলাম। কথা দিলাম সুলতানা আপাকে জানাবো
যে কামাল ভাই অাপনাকে পছন্দ করে। কিন্তু দিন যায়, মাস যায় জানানো আর হয় না। কি করে হবে ?? আমি যতবার সুলতানা আপার কাছে এইকথা বলতে গিয়েছি ততবারই ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে গেছে। আমি ভীতু, তেলাপোকা দেখে মরে যাই এসব কত্তো রকমের কথা শুনালো কামাল ভাই।
অবশেষে নিজেই একদিন সুলতানা আপাকে জানালেন তার মনের কথা। এবং হলেন প্রত্যাখ্যাত। সুলতানা আপা বলে দিলেন প্রেম ট্রেম করতে পারবেন না। এতই যদি ভাল লাগে তবে যেন বাসায় লোক পাঠায়। তাই করে- -ছিলেন কামাল ভাই।
এবার ভেবে দেখুন, যে মানুষ একটা মেয়েকে ভয়
পেয়ে তার সামনে দাঁড়াতে পারে না, যে মানুষ তার ভালোবাসার কথা জানাতে আড়াই বছর সময় নেয়, সে মানুষ কি করে অন্যের বউ তুলে নিল ???
বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর দেশের মানুষকে শান্ত রাখতে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের প্রতি ঘৃনার জন্ম দিতে সব রকমের চেষ্টা চালিয়েছে ঘাতকের দল। কামাল ভাইও সেই অপচেষ্টার শিকার। ৫ টাকার বাদাম কিনে যে ছেলে তার ছোট বোন আর তার বান্ধবীদের খুশি করতে পারত না, তার নামেই ছড়ানো হয়েছে ব্যাংক লুটের
কিচ্ছা-কাহিনী।
আমার কথা হল কামাল ভাই যদি এত বড়ই লুটেরা হবে তাহলে সেসব টাকা গেলো কই ??? ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুর বাসায় কিছুই পাওয়া যায় নি। পাওয়া যায়নি উল্লেখ করার মত তেমন কোন ব্যাংক একাউন্ট।