সারা দেশে রব উঠেছে, ত্রাণের চাল সব হরিলুট হচ্ছে। নিচ্ছে ভাগ করে সব জনপ্রতিনিধিরা। কিন্তু আসলেই কি ত্রাণের চাল লুট হচ্ছে। সত্য হলো, ত্রাণের চাল এখনো সরকারি গুদামে। তালিকা শেষ করে তারপর ছাড়া হবে। তাহলে এই চাল কিসের, আর চুরিই বা করছে কিভাবে? একটু খুঁজলে তার উত্তরও মিলবে। আসুন একটু খুঁজে দেখি। তার আগে একটু দেখি দেশে কত ভাগ জনপ্রতিনিধি ‘চোর’। কিন্তু একটি মহল মানুষকে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা করছে। হঠাৎ করে চাল চোর, চাল চোর এমন একটা বিষয় মানুষের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। আসুন একটু হিসেব মিলিয়ে দেখি।
মেম্বার- ৪১১৩৯ জন
মহিলা মেম্বার- ১৩৭১৩ জন
ইউপি চেয়ারম্যান- ৪৫৭১ জন
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পুরুষ/মহিলা- ৯৮৪ জন
উপজেলা চেয়ারম্যান- ৪৯২ জন
পৌর মেয়র- ৩৩০ জন
এখানে মোট জনপ্রতিনিধির সংখ্যা- ৬১,২২৯ জন।
এই ৬১২২৯ জন জনপ্রতিনিধির মাঝে মাত্র ১০ জন চাল চোর ধরা পড়েছে, অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা এই দেশের জন্য সংখ্যাটা কিন্তু খুব বড় না। ১০ জন চোরের মধ্যে ইতিমধ্যে ৬ জন বরখাস্ত হয়েছেন, বাকিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তারাও শাস্তিসহ বরখাস্ত হবেন। ক্ষমতাসীন দলের কতগুলো মানুষ নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাহিরে বের হচ্ছে মানুষকে সহায়তার জন্য সমালোচনার সময় সেই হিসেব কী আমরা রাখি? আওয়ামী লীগের লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী মানুষের পাশে দাঁড়াবার চেষ্টা করছে।
আমাদের দেশটা গরিব, একটা ছোট এলাকায় ৫০০ মানুষের ত্রাণ দরকার। এক্ষেত্রে হয়তো ত্রাণ সরবরাহ করা গেছে ২০০ জনকে। এ কারণে কিছু সমালোচনাও হচ্ছে। খালি পেটে করা সেই সমালোচনা ও গালি মুখ পেতে নিলাম। কিন্তু যারা নিজের ঘরে আরাম করে বসে বসে জমিয়ে রাখা খাবার খাচ্ছেন আর বলছেন, ‘এদের দিয়ে কিচ্ছু হবে না।’ তার সেই কথা বলা আগে নিজের অবস্থানের কথা জানা উচিত। গাল ভরা সমালোচনা করতে করতে আমরা সবাই যদি নন্দলাল বনে যাই, তবে হতভাগা দেশের অবস্থা কী হবে?
আরেকটা বিষয় খেয়াল করুন, জাতির এই চরম দুঃসময়ে মানুষের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন শেখ হাসিনা সরকার, আওয়ামী লীগের সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে কাজ করছেন কিছু মহান হৃদয়ের মানুষ।
এর বাইরে আরও অনেক রাজনৈতিক দল রয়েছে তারা ঠিক এ মুহূর্তে কোথায়? গতকাল একটা পত্রিকার শিরোনাম দেখলাম আমাদের শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ইউনুসের পক্ষ থেকে গ্রামীণ ব্যাংক ২৪৫ পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছেন! আপনার কি মনে হয় ইউনুস সাহেব চাইলে এক কোটি মানুষের পাশে দাঁড়ানো অসম্ভব ছিলো? ইউনুস সাহেবকে দিয়ে উদাহরণ দিলাম এমন আরও অনেক ইউনুস আত্মগোপনে আছে।
আবার সরকার বিরোধী কিছু ফেসবুক গ্রুপ থেকে বার বার এই চাল চুরির খবর সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরে এটাই বোঝানোর চেষ্টা করছে যে গোটা আওয়ামী লীগের সবাই এই মুহূর্তে চুরিতে ব্যস্ত। আসলেই কি তাই হচ্ছে? সরকার দলের লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী মানুষের পাশে দাঁড়াবার চেষ্টা করছে। আমাদের দেশটা গরিব, একটা এলাকায় ৫০০ মানুষের ত্রাণ দরকার, এক্ষেত্রে হয়তো দিতে পেরেছে মাত্র ২০০ জনকে। এ কারণে কিছু সমালোচনাও হচ্ছে কিন্তু তাই বলে সবাই কি চুরি করছে?
১৯৭৪/৭৫ সালেও এভাবেই বঙ্গবন্ধুর সরকারকে নাজেহাল করার চেষ্টা করেছে। রাতারাতি বাসন্তিকে জাল পরিয়ে লজ্জা নিবারণে কথা বলা হয়েছে খাদ্যের জন্য বুভুক্ষা মিছিলও করানো হয়েছে। তাদের প্রেতাত্মারা আবারও ঘোলাজলে মাছশিকারে তৎপর। যারা ৭৫ পটপরিবর্তন সম্পর্কে পড়েননি তারা বুঝবেন না ওরা কত ভয়ংকর। কিন্তু সরকারদলীয় নেতাকর্মীরারাও ঐসব বর্ণচোরাদের সমর্থন দিচ্ছেন। জেনে? নাকি না জেনে? ওরা ঢালাও ভাবে বলছে ওদের বাপ দাদারা কম্বল চুরি করেছে তাদের সন্তানরা ত্রাণ চুরি করছে।
কোন চোরের পক্ষে কথা বলার জন্য আসিনি, বিষয়টা এখানেই, চাল চুরি চাল চুরি বলতে বলতে আমরা করোনা থেকে মনোযোগ সরিয়ে চালের দিকে নিয়ে যাচ্ছি না তো? আর যদি নিয়েই যাই তাহলে ক্ষতিটা কার? দুর্নীতিবাজ উন্নত দেশগুলোতেও আছে। আর আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশেও থাকার কথা। সরকার তাদের ধরছেও শাস্তি দিচ্ছে। আবার নতুন আইন ও করেছে। ১% এর ত্রাণ চুরি রুখতে গিয়ে বাকি ৯৯% তো বন্ধ করা যাবেনা! তবে ত্রাণ চোরদের ধরিয়ে দিন। এই বাংলাদেশ তাদের জন্য না। তারা এই দেশের সন্তান হতে পারে না।
লেখকঃ তানভীর হাসান, সম্পাদক- সাম্প্রতিক সংবাদ।