সাম্প্রতিক শিরোনাম

বেলাই বিলের দিগন্তবিস্তৃত জলরাশির অপরূপ সৌন্দর্য্যে একদিন

মাসদুয়েক পরই বর্ষা ঋতু। বছরের প্রথম কালবৈশাখীর উত্তালতা দেখতে দেখতেই মনে পড়লো, ভরা বর্ষায় বেলাই বিলে নৌকা ভ্রমণের অনাবিল আনন্দের কথা। বর্ষায় প্রকৃতির এত স্নিগ্ধ রূপ কোনোভাবেই মিস করা উচিৎ হবে না ভ্রমণপিপাসুদের। জায়গাটা ঢাকার খুব কাছেই।

বান্ধবীর বাড়ি বেড়াতে গিয়েছি গাজীপুর। জিজ্ঞেস করলাম, ‘আশেপাশে দেখার মতো কোনো জায়গা আছে?’মাথা ঝাঁকিয়ে ও বলল, ‘কানাইয়া চল।

কিংবদন্তিটা হলো, ৪০০ বছর আগের ইতিহাসে বেলাই বিলে কোনো গ্রামের অস্তিত্ব ছিল না। খরস্রোতা চেলাই নদীর কারণে বিলটিও খরস্রোতা স্রোতস্বিনীরূপে বিরাজমান ছিল। ভাওয়ালের সেই সময়ের ভূস্বামী ঘটেশ্বর ঘোষ ছেলের সলিল সমাধির কারণে ৮০টি খাল কেটে চেলাই নদীর জল নিঃশেষ করে ফেলেন। তার পরেই এটি প্রকাণ্ড বিলে পরিণত হয়।

কানাইয়া বাজারের ঠিক পাশেই চিলাই নদী আর বেলাই বিল। চিলাই নদীর উপরে কানাইয়া ব্রিজ। ওটা পেরুলেই হাতের বামপাশে একটা মেঠো পথ। পথের দুই ধারে গাঢ় সবুজ ঘাসে ছেয়ে আছে। এখানটায় ইঞ্জিনচালিত আর ডিঙি নৌকা দুটোই পাওয়া যায়। ইঞ্জিনচালিত নৌকায় অনেকদূর পর্যন্ত যাওয়া যায়।

আমাদের হাতে সময় কম, তবুও আমরা ডিঙি নৌকাই নিলাম। এমন পরিবেশে ইঞ্জিন নৌকার চাইতে শব্দহীন ডিঙি নৌকাই উত্তম। শুধু একটাই সমস্যা। ডিঙি নৌকার ছই খুব একটা মজবুত নয়। চাইলেই ছইয়ের উপরে পা ঝুলিয়ে বসা যাবে না। কিন্তু ইঞ্জিনের ভটভটানির চেয়ে বেলাই বিলের স্নিগ্ধতা উপভোগ করার জন্য ডিঙি নৌকাই পারফেক্ট।

বিকালের শান্ত পরিবেশে বেলাই বিল হয়ে ওঠে অপূর্ব। বৈঠার ছলাৎ ছলাৎ শব্দ সুরের মূর্ছনা তৈরি করছে। আমাদের সাথে সাথে আরো তিন-চারটা নৌকা দেখলাম। তারা ঘুরেফিরে ঘাটে ফেরত যাচ্ছে। তাই আমরা যত সামনে এগুচ্ছি ততই নির্জন হচ্ছে বেলাই বিল।

বর্তমানে বিলটি আট বর্গমাইল এলাকায় বিস্তৃত হলেও একসময় আরও বড় ছিল। দ্বীপের মতো গ্রাম বিলের চারপাশে। বাড়িয়া, ব্রাহ্মণগাঁও, বক্তারপুর ও বামচিনি মৌজা গ্রাম ঘেরা বেলাই বিল। বর্ষা মৌসুমে ছেলেরা বিলের চারপাশে ডাঙ্গি খনন করে। এখানে ধরা হয় মাছ। আর শুষ্ক মৌসুমে বিলটি হয়ে ওঠে এক ফসলি জমি। তাতে চাষ হয় ইরি-বোরো ধান। বিশাল বিলটির কোনো কোনো স্থানে প্রায় সারা বছরই পানি থাকে। বিলে নানান জাতের দেশীয় সুস্বাদু মাছ পাওয়া যায়। কানাইয়া বাজারের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলাম জেলেরা তালগাছের কোন্দা দিয়ে মাছ ধরছে।

এমন চমৎকার পরিবেশে রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনার জন্য মন আঁকুপাঁকু করছিল। আমার মনের ভাবটা বুঝতে পেরেই মনে হয় ইভানা শিহানকে বললো গান গাইতে। খোলা নীল আকাশের নীচে এই কূলহীন জলরাশির মধ্যে ভেসে ভেসে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুরের মূর্ছনা যেন তীব্রভাবে আবেশিত করে ফেলছিল।

তীরের কাছ ঘেঁষে যাওয়ার সময় দ্বীপের মতো গ্রামগুলোর দিকে তাকালে হয়তো চোখে পড়বে ধান ঝাড়াইয়ের দৃশ্য। যন্ত্রের সাহায্য ছাড়াই গ্রামের নারীরা এ কাজটি করেন। বাতাসে উড়ে তুষের গুঁড়া আর ধুলো। আশপাশের সব চড়ুই পাখিরা, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শস্যদানা খুঁটে খুঁটে খায়। ছবির মতো সুন্দর সে দৃশ্য। বিলের বুকে স্বচ্ছ টলটলে পানি। খুব বেশি চওড়া নয় চেলাই নদী, তবে গভীরতা একেবারে কম নয়।

বিকেলে এই বিলের চারপাশে অপূর্ব দৃশ্য তৈরি হয়। প্রকৃতির আলোর খেলা, সেই সাথে পুরো বিল জুড়ে শাপলার ছড়াছড়ি। শুধু চারদিকে তাকিয়ে থাকলেই যেন মানসিক সব যন্ত্রণা উবে যাবে। কিছুক্ষণ পরপরই বাতাসের ঝাপটা লাগবে গায়ে। দূরের সবুজ, মায়াবী আকাশ, বিলের পানিতে সেই আকাশের ছায়া, শিহানের ভরাট গলায় গাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীত- সব মিলিয়ে এক রহস্যময় পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। চারদিকের নিস্তব্ধতা, কাঠের নৌকার গায়ে পানির ছলাৎছলাৎ শব্দে অন্যরকম ভালো লাগা জেগে ওঠে প্রাণে।

সাঁঝের মায়া ঘনিয়ে আসার পর এই বিস্তৃত জলরাশি অন্য এক রূপ ধারণ করছিল। খুব ইচ্ছে হচ্ছিল আরোও কিছুক্ষণ থাকি। কিন্তু অন্ধকারে ঘোরাফেরা করাটা ঠিক নিরাপদ নয়।

সন্ধ্যের মায়াবি আবেশ গায়ে মেখে পা বাড়াই ফিরে যাবার জন্য। নদীর আঁকা-বাঁকা পাড় দিয়ে হেঁটে হেঁটে রওনা দেই কানাইয়া বাজারে পার্ক করে রাখা গাড়ির কাছে।

নৌকায় বসে স্বচ্ছ পানিতে পা ডুবিয়ে বসে থাকতে যারা পছন্দ করেন, তাদের একবার এই বিস্তৃত জলরাশিতে নৌভ্রমণ করে আসা উচিৎ।

কীভাবে যাবেন

মতিঝিল বা মহাখালি থেকে গাজীপুরগামী বিআরটিসি বা গাজীপুর পরিবহনের বাসে উঠুন। নামবেন গাজীপুর শিববাড়ি মোড়ে। একটু হেঁটে সামনে গিয়ে কানাইয়া বাজার যাবার টেম্পুতে উঠুন। ৩০ মিনিট পর কানাইয়া বাজারে নামুন। ভাড়া নেবে ১০ টাকা। কানাইয়া বাজারে নেমে ব্রিজ পেরিয়েই চেলাই নদী।

যারা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে যাবেন তারা টঙ্গী ফ্লাইওভার পার হয়ে সামনের দিকে যেতে থাকুন। পুবাইল কলেজ গেট থেকে বামদিকের ছায়াঘেরা রাস্তায় ঢুকে যান। এখান থেকে মাইল চারেক দূরে (জল জঙ্গলের কাব্য পার হয়ে) গিয়ে ডানে টার্ন করে মিনিট দশেক গেলেই কানাইয়া বাজার।

এখানে এসে একটা নৌকা ভাড়া করে নিন। ছোট নৌকা হলে সারাদিন নেবে ৫০০-৬০০ টাকা। আর বড় নৌকা ২,০০০ টাকা। রাতে নৌকাতেই থাকা যায়। রাতে থাকতে হলে বাজার কমিটিকে জানিয়ে রাখতে হবে।
কানাইয়া বাজারে চা-বিস্কুট ছাড়া অন্য কিছু খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। সুতরাং লম্বা সময় বিলে ভ্রমণ করতে চাইলে খাবার সঙ্গে নিন।

সর্বশেষ

২০২৩ এর সফল ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ড পেলেন সাইমন সাদিক

সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে কাজ করে আসছেন। এর মাঝে একটি এজেন্সিও দিয়েছেন নাম...

ডিআর কঙ্গোতে শান্তিরক্ষী মিশনে  সেনাবাহিনীর ‘আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ মোতায়েন

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে মোতায়েন হতে যাচ্ছে। জাতিসংঘ সদর দপ্তরের আহবানে সাড়া...

প্রধানমন্ত্রীকে পুতিনের অভিনন্দন

পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো এক পত্রে পুতিন বলেন ‘রাশিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্ক ঐতিহ্যগতভাবে বন্ধুত্বের...

আওয়ামী লীগের বিজয় উৎসব উদযাপন করলো রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন

রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, আল খারজ বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন ও আল কাসিম বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন...