নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠায় ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানে ঘুষ দুর্নীতি এবং চালকের মাদকশক্তি প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণে জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন।
একইসঙ্গে দুর্ঘটনা ঘটলেই আইন হাতে তুলে নেওয়ার মানসকিতা পরিহার এবং সকলের ক্ষেত্রে ট্রাফিক আইন মেনে চলার আহ্বান ও পুণর্ব্যক্ত করেন তিনি।
ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের সময় ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যেন, ভালো মতো সে ড্রাইভিংটা জানে কি না বা টাকা দিয়ে যেন কেউ ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে দেওয়া নির্দেশে বলেন, আপনাদের আরেকটা বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে, যারা গাড়ি চালাচ্ছে তারা মাদক সেবন করছে কি না।
ডোপ টেস্ট বা মাদক সেবনের বিষয়ে পরীক্ষা করা দরকার। প্রতিটি ড্রাইভারের এই পরীক্ষাটা একান্তভাবে অপরিহার্য্য।
তিনি আরো বলেন, দুর্ঘটনা ঘটলেই চালককে সব দোষ দিয়ে তাকে প্রহার করা বা প্রহার করতে করতে করতে মেরে ফেলার মতো, আইন হাতে তুলে দেওয়ার যে সংস্কৃতি দেশে রয়েছে তা সবাইকে ত্যাগ করতে হবে।
বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস ২০২০ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে বলেন, দেশে টাফিক আইন মেনে চলার বিষয়ে নাগরিক সচেতনতাটা আমাদের খুব বেশি প্রয়োজন। আমাদের পথচারিদের মধ্যে নাগরিক সচেতনতার খুব অভাব রয়েছে।
আমরা মুখে খুব বলে টলে যাই কিন্তু কাজের বেলায় দেখি পাশেই ফুটওভার ব্রীজ অথচ রাস্তার মধ্যখান দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। একটা গাড়ি আসছে অথচ হাত দেখিয়েই অমনি হাঁটা দিল কিংবা বাবা দেখা যাচ্ছে, বাচ্চা কোলে নিয়ে ফুটওভার ব্রীজ ব্যবহার না করে রাস্তার বেড়া দেওয়া ডিভাইডার অবৈধভাবে অতিক্রম করছে।
তিনি বলেন, গাড়িটা একটা যন্ত্র কাজেই ব্রেক কসলেও থামতে একটু সময় লেগে যায়। হাত দেখালেই থেমে যেতে পারে না। এই বিষয়েও মানুষ, চালকসহ সকলকে সচেতন করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ প্রদান করেন।
তিনি উদহারণ দেন-ব্যক্তির নিজের ভূলে সে দুর্ঘটনা শিকার হলেও অনেক সময় অহেতুক চালককে, সরকারকে বা সড়ককে দোষ দেওয়া হয়। তা নিয়ে আন্দোলন হয় এবং সরকারের পদত্যাগও দাবি করা হয়, যদিও প্রকৃত দোষটা কার সেটা বিবেচনা করা হয় না।
শেখ হাসিনা বলেন, যত্র তত্র যেখানে সেখানে রাস্তা পারাপার বন্ধ করতে হবে এবং ট্রাফিক রুলস সবাইকে মেনে চলতে হবে। ট্রাফিক আইন মেনে চলা এটা সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
ছোট বাচ্চাদের থেকে শুরু করে স্কুল পর্যায়ের প্রত্যেক জায়গাতেই এই ট্রাফিক আইন সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া দরকার। তিনি স্কুল পর্যায়ে এবং অফিস আদালতে সকলের জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য পোষ্টারিং করে জনসচেতনতা সৃষ্টির ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সড়ক এবং জনপদ বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম স্বাগত বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মো. একাব্বর হোসেন এবং বেনজীর আহমেদ, এমপি, সংযুক্ত ছিলেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রাজধানীর বনানীস্থ বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ভবন মিলনায়তনে মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এ ছাড়া রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল এবং ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালসহ বেশ কয়েকটি স্থানে বড় পর্দার মাধ্যমে গাড়ি মাালিক এবং চালকবৃন্দ এই ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানটি প্রত্যক্ষ করেন।
টানা চতুর্থবারের মতো এবছর দেশে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উদযাপিত হচ্ছে । এবারের জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের প্রতি পাদ্য হচ্ছে- ‘মুজিববর্ষের শপথ, সড়ক করবো নিরাপদ।