ভবিষ্যতে যে কোন ধরণের নিউক্লিয়ার এণ্ড থার্মো-নিউক্লিয়ার যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে সারা পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষের মৃত্যুর পাশাপাশি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে ইন্টারনেট পরিসেবা এবং স্যাটালাইট ভিত্তিক নেটওয়ার্কিং সিস্টেম। আর এই ধরণের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে নিজেদের মধ্যে সামরিক যোগাযোগ ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করার স্বার্থে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বেশ আগে থেকেই কাজ শুরু করে দিয়েছে। তাই নিউক্লিয়ার যুদ্ধ শুরু হলেও মার্কিন সামরিক বাহিনীর বিশ্ব জুড়ে থাকা নিজস্ব স্যাটালাইট কমিউনিকেশন সিস্টেম যাতে একেবারে বিচ্ছিন্ন না হয়ে যায়, তার জন্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অত্যন্ত উচ্চ প্রযুক্তির ‘অ্যাডভান্সড এক্সট্রিমলি হাই ফ্রিকোয়েন্সি স্যাটেলাইট’ (এইএইচএফ) স্যাট্যালাইট (জিইও) অরবিটে স্থাপনের কার্যক্রম ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করে রেখেছে।
আসলে এই জাতীয় ‘অ্যাডভান্সড এক্সট্রিমলি হাই ফ্রিকোয়েন্সি স্যাটেলাইট’ (এইএইচএফ) স্যাটালাইট সিস্টেমকে কার্যত সারা বিশ্ব ছড়িয়ে থাকা ইউএস মিলিটারি চ্যানেলগুলিকে কার্যকর করে রাখতেই পৃথিবীর উচ্চ কক্ষপথে পাঠানো হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট ৬টি স্যাটালাইট পাঠানো হলেও ৫টি স্যাটালাইট অপারেশনাল রয়েছে। আর এই জাতীয় (এইএইচএফ) স্যাটালাইট সিস্টেম ডিজাইন ও ম্যানিফ্যাকচারিং করেছে মার্কিন জায়ান্ট লকহীড মার্টিন এবং নরথ্রপ গ্রুমেন যৌথভাবে। যে কোন ধরণের যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে এই (এইএইচএফ) স্যাটেলাইটগুলোকে সহজে নিষ্ক্রিয় করা সম্ভব হবে না এবং এটি হ্যাক করাও এক কথায় অসম্ভব। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লকহীড মার্টিন কর্পোরেশন এবং নরথ্রপ গ্রুমেন ২০১০ সাল থেকে মার্চ ২০২০ সময় পর্যন্ত মোট ছয়টি ‘অ্যাডভান্সড এক্সট্রিমলি হাই ফ্রিকোয়েন্সি স্যাটেলাইট’ (এইএইচএফ) স্যাটালাইট জিইও অরবিটে পাঠিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৪ই আগস্ট ২০১০ সালে প্রথম এইএইচএফ-১ পৃথিবীরজিইও অরবিটে স্থাপন করে এবং সর্বশেষ ২৬শে মার্চ, ২০২০ এ এইএইচএফ-৬ স্যাটালাইট তার নিজস্ব কক্ষপথে স্থাপন সম্পন্ন করা হয়।
তাছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউক্লিয়ার যুদ্ধের সক্ষমতা বৃদ্ধি করার অংশ হিসেবে এই ‘অ্যাডভান্সড এক্সট্রিমলি হাই ফ্রিকোয়েন্সি স্যাটেলাইট’ (এইএইচএফ) স্যাটালাইট প্রজেক্ট বাস্তবায়নে কাজ করছে লকহীড মার্টিন কর্পোরেশন ও নরথ্রপ গ্রুমেন যৌথভাবে। মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগ মনে করে যে, লো আর্থ অরবিটে থাকা মার্কিন স্যাটেলাইটকে ধ্বংস করতে পারে এমন উচ্চ প্রযুক্তির এন্টি স্যাটালাইট সিস্টেম বা হাইপারসনিক মিসাইল তৈরিতে ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছে রাশিয়া এবং চীন। আবার মার্কিন ইনটেলিজেন্স সার্ভিস জানাচ্ছে, যদি সত্যই পরমাণু যুদ্ধ হয় তাহলে এই ‘অ্যাডভান্সড এক্সট্রিমলি হাই ফ্রিকোয়েন্সি স্যাটেলাইট’ (এইএইচএফ) স্যাটেলাইটই হবে যোগাযোগের একমাত্র উত্তম ব্যবস্থা। আর ৬,১৬৮ কেজি ওজনের ‘অ্যাডভান্সড এক্সট্রিমলি হাই ফ্রিকোয়েন্সি স্যাটেলাইট’ (এইএইচএফ) প্রতিটি স্যাটালাইটের সার্ভিস লাইফ টাইম ধরা হয়েছে ১৪ বছর এবং এগুলো অপারেট করছে ইউনাইটেড স্টেট স্পেস ফোর্স।
সিরাজুর রহমান