গত ৩রা মে শহীদ জননী প্রয়াত জাহানারা ইমামের জন্মদিন উপলক্ষে ঈশ্বরদীর একজন সাংবাদিক এবং সম্পাদক একটি কলাম লিখেছেন। আমি তা কয়েকবার পড়েই ছোট করে মন্তব্য করেছিলাম। লেখক আমার মন্তব্য কিছু বোঝেন নাই এবং বিতর্কে যেতে চান না মর্মে পাল্টা মন্তব্য এবং আমিও অনুরুপই জবাবই হয়ত দিয়েছিলাম। কারন লেখক এবং আমি উভয়েই বুঝতে পেরেছিলাম লেখায় লেখকের দাবী নিয়ে বিতর্ক হলে হয়ত অনেকেরই মুখোশ উন্মোচিত হতে পারে ।
তাই উভয়ই সন্মান সুরক্ষার জন্য চুপচাপ হয়ে গেছি। হঠাৎ একজন বিজ্ঞ ব্যাক্তি মন্তব্য করেছেন আমার মন্তব্যে নাকি লেখকের অসন্মান হয়েছে। আবার মন্তব্যকারীর মন্তব্যে লেখক ধন্যবাদও দিয়েছেন। তবে আমি কিন্তু মানির মান রক্ষায় অত্যন্ত যত্নশীল। আর তাই প্রশ্ন তুলি নাই যে লেখক ১৯৯৩ সালের ২৯ শে জানুয়ারীতে গঠিত সংগঠনটির নামই জানেন না কিংবা নামটি হয়ত শোনেনই নাই। সংগঠনটির নাম ছিল, ” “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মুল জাতীয় সমন্বয় কমিটি”।
৪১ টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত এই কমিটির আহবায়ক ছিলেন, শহীদ জননী প্রয়াত জাহানারা ইমাম এবং সদস্য সচিব ছিলেন অধ্যাপক আব্দুল মাননান। শাহরিয়ার কবিরের ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি ছিল সমন্বয় কমিটির একটি অংশী সংগঠন মাত্র। সবচেয়ে মজার বা হাস্যস্কর ব্যাপার হচ্ছে, সমন্বয় কমিটির কেন্দ্রে বা শাখা কমিটিতে যুগ্ম আহবায়কের কোন পদের সৃষ্টি করা হয় নাই। অথচ আলোচিত লেখক সমন্বয় কমিটির ঈশ্বরদী উপজেলা শাখার যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন বলে দাবী করেছেন। আমি আসলেও এই সত্য কথাগুলি বলতে চাই নাই। আর তাই কলা কৌশলেই লেখকের লেখাটিতে ছোট্ট মন্তব্য করেছিলাম। এখন আমাকে এই সত্য কথাটি বলতেই হচ্ছে, যে দিন ঈশ্বরদী যুব উন্নয়ন অফিসে ঈশ্বরদী উপজেলা কমিটি গঠিত হয় সেই সভার আহবানকারী অর্থ্যাৎ দাওয়াত পত্র ছিল আনোয়ার হোসেন মুকুল স্বাক্ষরীত তার সংগে ছিল সাবেক ছাত্রনেতা রশিদুল আলম বাবু এবং সভাটির সভাপতিত্বও করেছিল মুকুল।
এই সভা সফল করতে আরও যাদের ভুমিকা এবং সক্রিয় সহযোগিতা আমি লক্ষ্য করেছিলাম তাঁরা হলেন প্রয়াত সাইদুল ইসলাম, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বর্তমান পৌর মেয়র আবুল কালাম আযাদ মিন্টু, জহুরুল ইসলাম পুনো, লক্ষীকুন্ডার সাবেক চেয়ারম্যান আনিচুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাক, ফান্টু ভাই, জয়নগরের অধির মন্ডল, বামপন্থী নেতা হুসেন আলী সহ আরও অনেকে যাদের নাম আমি এই মুহুর্তে মনে করতে পারছি না। তবে সেই তালিকায় আলোচিত কলাম লেখক ছিলেন তা আমি কোন ভাবেই মনে করতে পারছি না। তবে এ কথা জোর দিয়ে বলতে পারি যে এই সংগঠনটির অবকাঠামো দাঁড় করানোর পিছনে অনেকের মধ্যে সবচেয়ে বেশী অবদান ছিল আনোয়ার হোসেন মুকুলের। তাঁর সঙ্গী ছিল রশিদুল আলম বাবু এবং প্রয়াত সাইদুল ইসলাম।
ইসা হক সার কে আহবায়কের প্রস্তাব দিয়েছিল সম্ভবত আনোয়ার হোসেন মুকুল এবং ফান্টু ভাই ও বাবু যৌথ ভাবে সদস্য সচিব হিসাবে মুকুলের নাম প্রস্তাব করে কমিটি গঠিত এবং সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়েছিল। আমার বয়সের কারনে অনেক স্মৃতিভ্রম হলেও আমার একটা কথা মনে পড়ছে, মুকুলের ভুমিকার কারনে সে সময় তাকেই ঘাতক মুকুল হিসাবে প্রতিপক্ষরা চিহ্নিত করত। সুতরাং সেই মুকুলকে সক্রিয় সহযোগীর তালিকায় এনে নিজেকে যুগ্ম আহবায়ক দাবী করা আমার কাছে এক ধরনের ঔর্দ্ধোত্ব প্রকাশের সামিল মনে হয়েছে। শহীদ জননী প্রয়াত জাহানারা ইমাম ঈশ্বরদী উপজেলা স্তরে যে জনসভা করেছিলেন তাও কিন্তু সকল নিয়মনীতি, সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে।
কারন জেলা সদর ছাড়া উপজেলা স্তরে জনসভা করার সিদ্ধান্ত কেন্দ্রিয় কমিটির ছিল না।
ঈশ্বরদী উপজেলায় জনসভা করার পিছনে যে ভিত্তিটা কাজ করেছিল তাও আনোয়ার হোসেন মুকুল।
সে সময় জামাত শিবিরের চক্রান্তই হউক বা অন্য যে কোন কারনেই হউক মুকুল কিন্তু চার পাঁচবার লাঞ্চিত হয়েছিল এবং তার প্রতিবাদেই হয়েছিল সেই জনসভা।
ইসাহক সারের সভাপতিত্বে এবং মুকুলের পরিচালনায় জনসভায় কেন্দ্রিয় এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রেখেছিলেন
কিন্তু কলাম লেখক সে জনসভার মঞ্চে ছিলেন বা বক্তব্য দিয়েছিলেন তা কিনা তার স্বপক্ষে তিনি কোন দালিলিক প্রমাণ দেখাতে পারেননি অথবা ঈশ্বরদী প্রথিতযশা কারো কাছ থেকে আমি শুনি নাই কখনো । আমার দৃঢ় বিশ্বাস উপজেলা স্তরে প্রয়াত জাহানারা ইমামের উপস্থিতিতে এ ধরনের প্রতিবাদ জনসভা হয়েছিল শুধুমাত্র রাজনীতি এবং সংগঠনটির প্রতি মুকুলের শক্তিশালী প্রতিশ্রুতির প্রতিদান স্বরুপ।
সমিত জামান, কলামিস্ট।