ইতিহাস কথা বলে, ইরাকের রাষ্ট্রপতি সাদ্দাম হোসেনকে ফাঁসি দেওয়ার পর যখন তাঁর মরদেহ বাহিরে রাখা হল, তখন একদল মানুষ সেখানে এসে এই মানুষটার মৃতদেহের ওপরে থুতু ছিটিয়েছিল, যারা প্রত্যেকেই ইরাকের নাগরিক; পক্ষান্তরে তার নিরাপত্তায় নিয়োজিত সেই ১২ জন আমেরিকান সেনা সদস্যের প্রত্যেকেই নির্বাক ছিলো। কর্নেল গাদ্দাফিকে হত্যা করতে সরাসরি সাহায্য করেছিলো তারই দেহরক্ষী! ইন্দিরা গান্ধীর পরিণতি হয়েছিল আরও করুণ। শত্রুর গুলিতে না, তার মৃত্যু হয়েছিল নিজেরই দেহরক্ষীর গুলিতে।
বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফর রহমানের দেহ নামাতে যে লোকটি কবরে নেমেছিল, বঙ্গবন্ধুর মাতার মৃত্যুতে যে লোকটি মাটিতে শুয়ে কান্নায় গড়াগড়ি করেছিলো, শেখ কামালের বিয়ের উকিল বাপ যে মানুষটি ছিলো, ১৯৭৫ সালের ১৪ই আগস্ট দুপুরে যে লোকটি বাসা থেকে তরকারী রান্না করে নিয়ে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে খাইয়েছিলো তারপরের দিন ১৫ই আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে সেই লোকই খুন করেছিল যার নাম খন্দকার মোশতাক।
ইতিহাসের পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায়, এক একটা সাম্রাজ্যের পতন হয়েছে তাদের সব চাইতে কাছের মানুষদের হাত ধরে। সৌদি আরবের বাদশা ফয়সাল যখন তার ভাইপোকে আলিঙ্গন করার উদ্দেশ্যে দু হাত বাড়িয়ে দিলেন, প্রতিউত্তরে হঠাৎই পকেট থেকে পিস্তল বের করে পরপর তিনটা গুলি করে বসলেন।
গোয়েন্দারা আসামী শনাক্ত করার জন্য অনেক গুলো পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে, তার একটি হল প্রত্যেককেই সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখা। সব চাইতে বেশি সন্দেহ তাকে করা যাকে মনে হবে সব চাইতে কম সন্দেহজনক। ইতিহাস আমাদের বার বার শিখিয়ে গেছে, মানুষের জীবনের সব চাইতে বড় যে শত্রু তাকে কখনোই চেনা যায় না, সে থাকে সব থেকে কাছের বন্ধুর মত করে। আপনার, আমার ব্যক্তিগত জীবনেও তাই।
আপনি সব চাইতে বেশি প্রতারিত হবেন আপনার কাছের মানুষদের কাছ থেকে। শত্রু কখনো বিশ্বাস ঘাতক হয় না, বিশ্বাসঘাতকতা করে কেবল আপন মানুষরাই। আর তাই আমারও ভয় হয়,মাঝে মাঝে নিজের অজান্তে কেঁপে কেঁপে উঠি। স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক, যার জন্ম না হলে আমরা বিশ্বের বুকে আমার প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন দেশের অভ্যুদয় ঘটতো না, সেই মহান নেতা বঙ্গবন্ধু সহ তার সপরিবারকে যারা নির্মম ভাবে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করেছিল শুধুমাত্র গায়ের জোরে ক্ষমতায় সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হবার লালসায় মত্ত হয়ে।
এবং আজও তাদেরই কিছু উত্তসুরী এবং দোসর প্রবল চেষ্টায় মত্ত হয়ে আছে জাতির পিতার রেখে যাওয়া আমানত (যিনি তার আপন মহিমায় নিজেকে অধিষ্ঠিত করেছেন এক অসামান্য অনন্য উচ্চতায়) শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টায়। কিন্তু দীর্ঘ ১৯ বার জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টা ব্যার্থ হয়েছে। সত্য কথা বলতে খন্দকার মোশতাকের উদৃতি দিয়ে বলা যায়, শেখ হাসিনা প্রশ্নে বোন শেখ রেহেনা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ছাড়া অন্য কাউকে বিশ্বাস করা যায়না। সে যত কাছের আত্বীয়ই হোক না কেন!
বাংলার মাটিতে এমনও অগণিত তৃণমূল আওয়ামিলীগ কর্মী আছে যারা হাসতে হাসতে নিজের জীবন বিষর্জন দিবে,কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনার কোন ক্ষতি হতে দিবে না। কিন্তু অত্যান্ত দুঃক্ষজনক হলেও শতভাগ সত্য, এই তৃণমূল কর্মীরাই আজ উপেক্ষীত সর্বস্তরে! কারণ একমাত্র শেখ হাসিনা ছাড়া আওয়ামিলীগ এর কোনো নেতা তৃণমূল কর্মীকে মুল্যায়ন করেনা তাদের স্বার্থে আঘাত লাগার ভয়ে। তৃণমূল কর্মীরাই শেখ হাসিনার সবচেয়ে আপনজন। এটা তিনি নিজেই বলেছেন।
সবশেষে বলতে হয়, জাতির পিতার রেখে যাওয়া আমানত, মানবতার জননী শেখ হাসিনাকে আমাদের জীবনের বিনিময়ে হলেও রক্ষা করতে হবে দেশ ও জাতির কল্যাণের জন্য।
লেখকঃ জি এম ইসরাফিল,ব্লগার, কলামিস্ট।