সাম্প্রতিক শিরোনাম

দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল দশা আর কতদিন?

সিরাজুর রহমান: আধুনিক যুগে সারা বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর পাশাপাশি উন্নয়নশীল অনেক দেশেই আজ তাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে যতটা সম্ভব বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি নির্ভর করে গড়ে তুলেছে। এক্ষেত্রে তারা অনেক আগেই মুখস্ত বিদ্যা নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বেড়িয়ে এসে শিক্ষার প্রতিটি স্তরেই বাস্তবে প্রয়োগ যোগ্য একটি আধুনিক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বান্ধব শিক্ষা কারিকুলাম প্রনয়ন এবং বাস্তবায়নে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। এজন্য দেশগুলো তাদের বিজ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষায় শিক্ষার্থীকে আরো আগ্রহী করে গড়ে তোলা এবং পাশাপাশি শিক্ষার্থীর জ্ঞান, দক্ষতা এবং দৃষ্টিভঙ্গি শতভাগ নিশ্চিত করার স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে। আবার তারা শ্রেণিকক্ষে পাঠ্য পুস্তকের ব্যাবহারে সাথে বিভিন্ন আধুনিক কলা কৌশল ও পদ্ধতি প্রয়োগের পাশাপাশি একটি কার্যকর ব্যবহারিক বা প্যাক্টিক্যাল বিষয় বা ক্লাস নির্ভর শিক্ষা কারিকুলাম প্রনয়ন করেছে। এর এসব ব্যবহারিক ক্লাস একেবারেই বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অত্যন্ত পরিকল্পনা মাফিক ও ধারাবাহিকভাবে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।

অথচ এক বিংশ শতাব্দীতে এসেও আমরা আজো প্রাথমিক স্তর থেকে একেবারে উচ্চ শিক্ষাস্তর পর্যন্ত একটি বাস্তব জীবন ভিত্তিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারিনি। আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা আজো সেই লেকচার ও মুখস্ত বিদ্যা নির্ভর হয়ে পড়ে রয়েছে। তবে বর্তমানে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চ শিক্ষাস্তরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে প্রাধান্য দিয়ে শিক্ষা কারিকুলাম প্রনয়ন করা হলেও তার বাস্তবায়ন ও প্রয়োগ মোটেও সন্তোষজনক নয় কিংবা আমরা এখনো কাঙ্খিত পর্যায়ে পৌছাতে পেরেছি বলে মনে হয় না। আবার বিজ্ঞান শিক্ষাকে সহজ এবং আনন্দজনক করে বাস্তবায়ন ও উপস্থাপন না করতে পারার জন্য দেশের শিক্ষার্থীর একটি বড় অংশের মনে বিজ্ঞান ও গণিত ভীতি কাজ করে এবং অনেকেই এটিকে যতটা সম্ভব এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তাছাড়া বিশেষ করে আমাদের বিজ্ঞান শিক্ষায় ব্যাবহারিক ক্লাস ও পরীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হলেও তার বাস্তবায় কিন্তু অনেকটাই কাগজে কলমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। যেখানে কিনা মধ্যপ্রচ্যের দেশ ইসরাইলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন শিক্ষার্থী যদি তাত্ত্বিক বিষয়ে খুব ভালো করে এবং ব্যবহারিক ক্লাসগুলোতে নিয়মিত কিংবা সক্রিয় অংশগ্রহন না করে সেক্ষেত্রে চূড়ান্ত মূল্যায়নে সেই শিক্ষার্থীর জিপিএ-৫.০০ বা সন্তোষজনক ফলাফল পাওয়ার কোন সুযোগ থাকে না।

এখানে লক্ষ্য করার মতো একটি বিষয় যে, আমাদের দেশে আজো কিন্তু ৮০% পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা পর্যাপ্ত জ্ঞান দক্ষতা এবং দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন না করেই পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫.০০ স্কোর অর্জন করে এবং এই শিক্ষাগত ঘাটতি বা দূর্বলতা নিয়েই সরাসরি উচ্চ শিক্ষায় প্রবেশ করছে। আবার উচ্চ শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রটাই কিন্তু যথেষ্ঠ জটিল এবং স্বেচ্ছাচারিতায় পরপূর্ণ বলা চলে। বর্তমানে বিষয়টি এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার্থী এক দিকে নিজে পরীক্ষার হলে পরীক্ষা দিচ্ছে। আবার সেই পরীক্ষার্থীর ছয় থেকে আটটি ব্যাবহারিক বা প্রাক্টিক্যাল খাতা অন্য কেউ হাজার টাকার বিনিময়ে এঁকে এবং লিখে দিচ্ছে। এদিকে সেই ব্যাবহারিক খাতার উপর ভিত্তি করে এবং লোক দেখানো কিম্বা অনেকটা দায় সারা গোছের মৌখিক পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থীকে দেয়া হচ্ছে ৯০% থেকে ৯৫% কিম্বা মুখ চেনা দেখে দেয়া হচ্ছে শতভাগ ফুল মার্কস। অথচ তারা আদৌ জানে না তাঁদের ব্যাবহারিক খাতায় কি লেখা রয়েছে। তাই এক্ষেত্রে শিক্ষার্থী কিন্তু বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ের ব্যবহারিক সংক্রান্ত পর্যাপ্ত জ্ঞান, দক্ষতা দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন না করেই পরীক্ষায় জিপিএ-৫.০০ নম্বর পেয়ে যাচ্ছে অনায়েসেই। আবার এখান থেকে তারা উঠে আসছে একেবারেই উচ্চ শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তরে।

তাছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের ভয়াবহ ফল বিপর্যয় এবং অপারগতা কিন্তু দেশের সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থার অবব্যস্থাপনা ও বেহাল দশাই আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। তাই এসব কথিত ভালো ফলাফল অর্জনকারী শিক্ষার্থীদের এই পরীক্ষায় নিজের যোগ্যতা সঠিকভাবে প্রমাণ করতে না পারাটাও কিন্তু আমাদের দেশের চলামান বিপর্যস্থ শিক্ষার করুণ চিত্রটি ফুটে উঠেছে, যা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে শহর অঞ্চলে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের আধুনিক ল্যাব বা ফ্যাসালিটিকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষার্থীর জ্ঞান, দক্ষতা এবং দৃষ্টিভঙ্গিকে কাঙ্খিত পর্যায়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হলেও সারা দেশের বিশেষ করে গ্রামীন পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠাগুলোতে বিজ্ঞান শিক্ষার মান একেবারেই তলানীতে এসে ঠেকেছে।

আমি গত বছরে আমার এলাকায় এক কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়েছিলাম। সেখানে মাধ্যমিক পর্যায়ে ভোকেশনাল শাখায় ইলেক্ট্রনিক্স, কম্পিউটার এবং অটোমোবাইলস এর মতো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ট্রেডে শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা করে। অথচ সেখানে আমি কোন ভালো মানের ট্রেড সংশ্লিষ্ঠ ল্যাব তো দূরের কথা হাতে কলমে কাজ করার মতো উপযুক্ত কোন ক্ষেত্রই খুজে পেলাম না। আবার তারা যে নিকটবর্তী কোন ফ্যাসালিটিতে কিংবা অটোমোবাইলস গ্যারেজে গিয়ে ধারাবাহিকভাবে বাস্তব জ্ঞান লাভ করছে বিষয়টি তাও কিন্তু নয়। আসলে আমাদের দেশের কারিগরি শিক্ষা পদ্ধিতিও কিন্তু ভয়ানকভাবে মুখস্ত বিদ্যার উপর নির্ভর করে টিকে আছে। এখানে বাস্তব জীবন নির্ভর কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থাটি হাতে কলমে না হয়ে কাগজে কলমের সুতোয় বাধা পড়ে রয়েছে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশের প্রাথমিক স্তর থেকে একেবারেই উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই শিক্ষার মূল ভিত্তি কিন্তু মুখস্ত বিদ্যা নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা। অর্থ্যাৎ আমাদের দেশের যে শিক্ষার্থী যত বেশি মুখস্ত করতে পারে, তাকে তত বেশী মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এখানে বাস্তব জীবন ভিত্তিক শিক্ষা অর্জন এবং জ্ঞান, দক্ষতা এবং দৃষ্টিভঙ্গির যথাযথ প্রয়োগের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো যেন একেবারেই অবাঞ্ছিত এবং হাস্যকর কোন বিষয় বটে। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশে শিক্ষা ব্যবস্থায় সৃজনশীল ধারা যেভাবে প্রয়োগ এবং বস্তবায়ব করা হচ্ছে তাতে করে আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা আরোও ভয়ঙ্কর মাত্রায় অদক্ষ হয়ে পড়ছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশের ৫০% পর্যন্ত শিক্ষকেরা নিজেই সৃজনশীল ভিত্তিক শিক্ষা সম্পর্কে নুন্যতম ধারনা রাখেন না। তাছাড়া সৃজনশীল নামে যে অবাস্তব শিক্ষা ব্যবস্থা পর্যায়ক্রমে আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে তা আদৌ সৃজনশীল কিনা তা আমাদের দেশের শিক্ষাবিদদের ভেবে দেখা উচিত। বিশেষ করে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থায় এর প্রয়োগ এবং যথাযথ ব্যবহারে শতভাগ নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে বলে মনে হয় না।

সর্বশেষ

পিটিয়ে হত্যা: ভিডিওতে শনাক্ত ছাত্রদলের ৫ নেতাকর্মী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে ছাত্রদলের যে পাঁচজনকে দেখা গেছে তারা হলেন- সাঈদ হোসেন...

২০২৩ এর সফল ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ড পেলেন সাইমন সাদিক

সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে কাজ করে আসছেন। এর মাঝে একটি এজেন্সিও দিয়েছেন নাম...

ডিআর কঙ্গোতে শান্তিরক্ষী মিশনে  সেনাবাহিনীর ‘আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ মোতায়েন

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে মোতায়েন হতে যাচ্ছে। জাতিসংঘ সদর দপ্তরের আহবানে সাড়া...

প্রধানমন্ত্রীকে পুতিনের অভিনন্দন

পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো এক পত্রে পুতিন বলেন ‘রাশিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্ক ঐতিহ্যগতভাবে বন্ধুত্বের...