ছোটবেলা একটি গল্প পড়ে ছিলাম। গল্পটা এরকম-‘জমিদারকে জানানো হলো, তাঁর প্রতিপক্ষের এক ছেলে সন্তান হয়েছে। শুনে জমিদার বললেন, ছেলে হলে কী হবে ও লেখাপড়া শিখে মানুষ হবেনা। বেশ কয়েক বছর পর জানানো হলো সে বিএ পরীক্ষা দিচ্ছে। শুনে জমিদার বললেন, পরীক্ষা দিলে কী হবে ও পাশ করতে পারবে না। পরে যখন জানানো হলো বিএ পরীক্ষায় পাশ করেছে। তখন জমিদার বললেন, পাশ করলে কী হবে ওবেটা চাকুরী পাবে না….।
আমাদের দেশেও এরকম কিছু মানুষ রয়েছেন যা কেবল নেগেটিভ চিন্তা করেন এবং গুজব রটনা করে এক ধরনের পরিতৃপ্তি পান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ঘোষণা দিলেন আমাদের নিজস্ব অর্থ দিয়ে আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করবো। তখন তারা বলেছিলেন এটা অসম্ভব ব্যাপার। যখন কাজ শুরু হলো তখন বললো শুরু হলে কী হবে এটা শেষ হবে না।
বর্তমানে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে পদ্মা সেতুর কাজ। ইতোমধ্যে সেতুর প্রায় ৮৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী বছরের মধ্যে সবকটি স্প্যান বসিয়ে সেতুটি দৃশ্যমান করে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর পর তারা কী বলবেন জানি না। হয়তো বলবেন সেতুটি ত্রুটিযুক্ত।
একই অবস্থা ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার পর। কত ধরণের টিপ্পনী কাটলেন তারা কত সমালোচনা করলেন শেখ হাসিনার। অথচ আজ তারা এর সুফল ভোগ করছেন। লাইভে আসছেন, কথা বলছেন। জুমে মিটিং করছেন। বিকাশে বিল পরিশোধ করছেন। করছেন আরো কত কী।
এই পক্ষটি এবার পিছু নিয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল এবং অর্থনৈতিক কূটনীতির জনক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের বিরুদ্ধে। ড. মোমেন যার হৃদয়জুড়ে রয়েছে বাংলাদেশ,বঙ্গবন্ধু এবং জননেত্রী শেখ হাসিনা। উন্নয়নশীল কিংবা তৃতীয়বিশ্বের কোন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা চাট্টিখানি কথা নয়। এইসব দেশের মুরব্বী এবং পরামর্শদাতারও অভাব নেই। তার পরও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সফলতার পাল্লা অনেক ভারী। গত প্রায় দেড় বছরে তিনি বাংলাদেশের ভাবমূর্তির উন্নয়ন, বৈদেশিক বিনোয়োগ,অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শ্রমবাজারসহ নানা ক্ষেত্রে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছেন।
আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্বাধীনচেতা এবং শক্ত মেরুদন্ডের অধিকারী একজন মানুষ। তিনি দেশের স্বার্থে সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষায় যখন যা বলা দরকার তখন তা খুবই বলিষ্ঠভাবে বলে থাকেন। একজন অর্থনীতিবিদ এবং কূটনীতিবিদ হিসেবে দীর্ঘ দিন ইউরোপ আমেরিকায় বসবাস করার ফলে ড. মোমেন শক্তিধর রাষ্ট্রসমূহের পালস ভালোভাবে রপ্ত করেছেন।
এইতো কয়েকদিন আগের কথা। সাগরে ভাসমান কিছু রোহিঙ্গাকে নতুন করে আশ্রয় দেবার জন্য ইউরোপের একজন রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলেন। রাষ্ট্রদূত হয়তো ভেবে ছিলেন বাংলাদেশকে চাপ দিলে বাংলাদেশ রাজি হয়ে যাবে।
ইউরোপের এই রাষ্ট্রদূতের কথা শুনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বললেন,- ‘বাংলাদেশ ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে, আমাদের পক্ষে আর বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় দেয়া সম্ভব নয়।
আমার দেশের মাথাপিছু আয় দুই হাজার ডলার, আর আপনার দেশের মাথাপিছু আয় ৫৬ হাজার ডলার। আমার দেশে প্রতি বর্গমাইলে ১২০০ লোক থাকেন, আর আপনার দেশে প্রতি বর্গমাইলে ১৫ জন লোক থাকেন। আপনারা কিছু রোহিঙ্গা নিয়ে যান। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন স্বাধীনচেতা বক্তব্য শুনে রাষ্ট্রদূত একেবারে লা-জওয়াব।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর ক্যারিশমেটিক ডেপ্লোমেসির মাধ্যমে এটা প্রমান করেছেন রোহিঙ্গা সমস্যা শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয় এটা সারা বিশ্বের একটি অন্যতম সমস্যা।
গত ৮ মে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা সাত রাষ্ট্রদূতের আপত্তিকর বক্তব্যকে ‘দুর্ভাগ্যজনক, হতাশাজনক ও অগ্রহণযোগ্য’ মন্তব্য বলে অভিহত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সব সময় সোজাসাপ্টা কথা বলেন। করোনা ভাইরাস যখন বাংলাদেশী ছড়িয়ে পড়ার আশংকা তৈরী হলো তখন প্রবাসীদেরকে কোয়ারেন্টাইনে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলো সরকার। এসময় ইতালি প্রবাসী কিছু যুবক উশৃঙ্খল আচরণ শুরু করে,গাজীপুরে কোয়ারেন্টিনে থাকা অবস্থায় বিক্ষোভ করে। একপর্যায়ে ফটকের তালা ভেঙে বাইরে বেরিয়ে আসে। ‘ফাক বাংলাদেশ’ বলে গালি দেয়। এর প্রতিক্রিয়াতে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছিলেন- আমাদের প্রবাসীরা আসলে নবাবজাদা! তারা সবকিছু ফাইভস্টার মানের চান, কিন্তু আমাদেরতো সে রকম সক্ষমতা নেই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এখানে সকল প্রবাসীকে মিন করেননি। তাঁর এই বক্তব্যকে নিয়ে একটি মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় তুললো।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন মনে করেন, দেশের উন্নয়নে প্রবাসীরা সবচেয়ে বড় অংশীদার তাদের কল্যাণ করা মানেই দেশের উন্নয়নের চাঁকাকে সচল করা। আর সে লক্ষে ইতোমধ্যে তিনি চালু করেছেন ‘দূতাবাস ’ নামক অ্যাপস। বিদেশস্থ বাংলাদেশের মিশন প্রধানদের বরাবরে লেখা অভিন্ন চিঠিতে মিশনসমূহকে আরও প্রবাসীবান্ধব হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন । বাংলাদেশের ইতিহাসে ড. মোমেনই এক মাত্র পররাষ্ট্রমন্ত্রী যিনি কোন প্রবাসীর সমস্যা জানা মাত্র সেটা সমাধান করেন।
গত বছরের নভেম্বরে মধ্যপ্রাচ্য সফরে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন প্রথম বারের মতো মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশী প্রবাসীদের জন্য ‘প্রবাসে কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ নামে এক বিশেষ প্রকল্পের উদ্ভোধন করেছেন।
মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু দেশে এই প্রকল্পের আওতায় খোলা হচ্ছে এই বিশেষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, যেখানে বাংলাদেশী নাগরিকদের বিনামূল্য কারিগরী কাজ যেমন- ড্রাইভিং এবং আইসিটি সংক্রান্ত কাজ কর্ম পাশাপাশি বিদেশী ভাষা শিখতে পারবেন।এর ফলে প্রবাসীরা আরো ভালো চাকরী করে দেশে আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতি এবং নিজেদের জীবন যাত্রার মানোন্নয়ন করতে সক্ষম হবেন।প্রথমে মধ্যপ্রাচ্যের তিনটি দেশে এই সুবিধা চালু করা হলেও ক্রমান্বয়ে অন্য সকল দেশে ও এ ধরণের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলার দূরদর্শী পরিকল্পনা রয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ।
অথচ প্রবাসীবান্ধব এই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুষ্টচক্রটি সুযোগ পেলেই অপপ্রচার শুরু করে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘প্রবাসীরা দেশে চলে আসলে আনএমপ্লয়মেন্ট (বেকারত্ব) বাড়বে, এমনিতেই আমাদের আনএমপ্লয়মেন্ট বেশি। এর মধ্যে যদি ১৫ লাখের মত লোক চলে আসে তাহলে আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি হবে, চুরি-চামারি বেড়ে যাবে।’
দুষ্টচক্রটি এই বক্তব্যের ব্যাখ্যা করলো এভাবে-পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাকি প্রবাসীদের চোর বলেছেন।
বেকারত্ব বাড়লে চুরি-ডাকাতি বাড়বেই, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটবেই এটাতো স্বাভাবিক কথা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের আরো একটি বক্তব্য নিয়ে দুষ্টচক্রটি হাসিঠাট্টা করেছিলো। অথচ আজ তাদের মুখে চুনকালি পড়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন- ‘আমেরিকা, ইউরোপের দেশগুলো আমাদের কাছে মেডিকেল ইকুইপমেন্ট চেয়েছে’। তিনি মাস্ক এবং পিপিই মিন করে কথাটি বলেছিলেন। শেষ পর্যন্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথাই সত্য হলো। ঈদের দিন বেক্সিমকো ৬৫ লাখ পিপিই যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করলো।
বাংলাদেশের এই সফলতায় কিছু মানুষ সবসময় নারাজ থাকে। যারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে এটি পছন্দ করেনা, যারা নতজানু পররাষ্ট্রনীতির পক্ষে তারাই সব সময় সরকার এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ট্রল করে, গুজব ছড়ায়।
পরিশেষে যে কথাটি বলতে চাই সেটা হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে নিয়ে এসেছেন এবং তাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন। কথায় আছে না- ‘রতনে রতন চিনে’।
লেখকঃ মুহিত চৌধুরী, সভাপতি সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাব।