‘ইটস টাইম ফোর নেচার ”সময় এখন প্রকৃতির” স্লোগান কে সামনে রেখে এক রকম নিভৃতেই ইতি টানলো এবারের পরিবেশ দিবসের! মানুষ যদি নীল গ্রহের সবচেয়ে দামি সম্পদ হয়, তাহলে পরিবেশ হলো নীল গ্রহের মূল পুঁজি ! যার উপর ভর দিয়ে শতাব্দীর পর শতাব্দী টিকে আছে মানবসভ্যতা!
১৯৭৪ সালে প্রথম ৫ জুন কে বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। প্রতি বছর পৃথিবীর প্রায় ১৫০টি দেশ একযোগে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করে। পরিবেশ ও মানুষ একে অপরের সঙ্গে অতি নিবিড়ভাবে যুক্ত। পরিবেশের সামান্য একটা জীবের বিলুপ্তিতে জীব-বৈচিত্রের বিশাল পরিবর্তন সাধিত হয়! অথচ ইন্টারন্যাশনা ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচারের (আইইউসিএন) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী সারা বিশ্বে প্রায় ৩১ হাজার জীববৈচিত্র্য বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে, যা মোট প্রজাতির শতকরা ২৭ ভাগ। তবুও প্রতি ক্ষণে মানুষের আক্রমণের লক্ষ্য এই প্রকৃতিই!
নাগরিক জীবনে অভ্যস্ত মানুষগুলো পরিবেশের উপরে এখন বাড়তি চাপ ফেলছে! কলকারখানার কালো বিষাক্ত ধোঁয়া যেমন ওজোনস্তর হালকা দিচ্ছে তেমনি তার বর্জ্য নদী-নালাকে দূষিত করছে!ক্রমাগত বেড়ে চলা মানুষ বাসস্থানের জন্য বিলুপ্ত করছে বনাঞ্চল, নদী-নালা, খাল-বিল। সেই সঙ্গে বিলুপ্ত হচ্ছে এসব স্থানে বসবাস করা বিভিন্ন ধরণের ছোট বড় বন্যপ্রাণী!
এই তো গত কয়েকদিন পূর্বে ভারতের কেরালায় হাতি হত্যার খবর পাওয়া যায়। বহু জনের ভাষ্য মতে এটা লোকালয়ে ঢুকে পরেছে। কিন্তু খোঁজ নিলে দেখা যায় বরং মানুষই হাতিদের বাসস্থান উজার করে বাড়ি বানিয়েছে!
পৃথিবীর ফুসফুস যদি আমাজন হয়, বাংলাদেশের ফুসফুস হলো সুন্দরবন! চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট (আইএফইএসসিইউ) একটি সমীক্ষা আসে সুন্দরবনের সুরক্ষায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আর্থিক অবদান হল পাঁচ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা। পর্যটন, দুর্যোগ থেকে রক্ষা ও জীবিকার মাধ্যমে এই অবদান রাখছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন।
এবং বন বিভাগের এক গবেষণায় জানা যায়, সুন্দরবন বছরে ১৬ কোটি মেট্রিক টন কার্বন ধরে রাখে। আন্তর্জাতিক কার্বন বাজার অনুসারে এর মূল্য পাঁচ থেকে ছয় বিলিয়ন ডলার। গত ১০০ বছরে এই বঙ্গোপসাগরের উপকূলে গড়ে উঠা এদেশে প্রায় ৫০৮টি সাইক্লোন আঘাত হেনেছে। এর সব গুলোর সাথে বুক চিতে লড়ে গেছে সুন্দরবন ! ২০০৭ সালের সিডরে উপকূলে তিন হাজার চারশ’ লোক মারা যায়। সুন্দরবন না থাকলে এর ক্ষতি বহুদূর যাওয়ার অসম্ভাবন ছিলো না#
পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখতে হলে অবশ্যই আমাদের প্রকৃতি প্রতি সচেতন হতে হবে! ভুলে গেলে চলবেনা প্রকৃতির ক্ষতি হলো মূলত পৃথিবীরই ক্ষতি। আর এই ক্ষতি তে সবচেয়ে বেশি ভুগবে নিঃসন্দেহে মানবজাতি! তাই চলুন প্রকৃতি বাঁচাই, বাঁচাই এই ধরনী!
মতামতঃ আবু জাফর, শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ।