ভারত ও চীন সেনার কোর কমান্ডার পর্যায়ের তৃতীয় বৈঠকের নির্যাস বলতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা। সেনা সমাবেশ সরানো নিয়ে কথাবার্তা।
বরং বিভিন্ন উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সেনা, রসদ ও অস্ত্রশস্ত্র মজুদ বাড়িয়েই চলেছে বেইজিং। তৈরি করছে সেনা ছাউনির মতো নানা কাঠামোও।
কিন্তু এর বাইরে গালওয়ান উপত্যকা বা প্যাংগং লেকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে চীন সেনা সরাবে, এমন কোনো প্রতিশ্রুতি বা আশ্বাস মেলেনি বলেই ভারতীয় সেনা সূত্রে খবর।
স্থিতাবস্থা ফেরানো এবং বেইজিংয়ের তরফে কোনো রকম আগ্রাসন হলে তার উপযুক্ত জবাব দিতে নিজেদের প্রস্তুত রাখার কৌশলেই এগোচ্ছে নয়াদিল্লি।
প্যাংগং লেক এবং গালওয়ান উপত্যকা সমস্যা সমাধানে ভারত বা চীন কেউই সেনা সরাতে রাজি হয়নি।
ভারত বলছে, প্যাংগং লেকে তিন কিলোমিটার পিছু হটা কিছুতেই সম্ভব নয়। কারণ তাহলে ফিংগার-৪ থেকে সরে আসতে হবে। ফিংগার-৪ সবসময় ভারতের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
ইতোমধ্যেই ফিংগার ৪-এর ভেতরে স্থায়ীভাবে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে চীন। ভারতকে চাপে রাখতে আরও এক ধাপ এগিয়েছে বেইজিং।
ভারতের ওপর নজরদারি বাড়াতে বর্তমানে সেখানে ঘাঁটি তৈরি করেছে পিপলস লিবারেশন আর্মি। সেখানেই বাঙ্কার এবং নজরদারি ব্যবস্থা করে পোস্ট তৈরি করেছে চীন।
ডেপসাং এবং ডেমচকেও একইরকম অবস্থান চীনের। দেশটি লাদাখ সীমান্তের কাছে সেনা বাড়িয়েছে।
চীন প্রায় ২০ হাজার সৈন্য সমাবেশ করেছে। এছাড়া জিনজিয়াং প্রদেশে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন রেখেছে, যাদের ভারতীয় সীমান্তে পৌঁছাতে ৪৮ ঘণ্টা লাগবে।
ফিংগার-৪ থেকে ফিংগার ৮-এর মাঝে ৮ কিলোমিটার দূরত্বে মূলত এ কাজ টানা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। একইভাবে, গালওয়ান পেট্রল পয়েন্ট ১৪-তে দুই থেকে তিন কিলোমিটার পিছু হটতে রাজি নয় চীন।
মঙ্গলবারের বৈঠকে সব বিতর্কিত অঞ্চলগুলো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। চীন আলোচনা শেষে জানিয়েছে, গত ২২ জুন গালওয়ানের ‘ক্লেমড লাইন’ থেকে ৮০০ মিটার দূরে ছিল তারা।
গালওয়ান উপত্যকার পিপি ১৪-তে চীনা সেনারা প্রায় ১০০-১৫০ মিটার সরে গেছে। লাইন অফ কন্ট্রোলে পিপি-১৪ থেকে শেষ পর্যন্ত সব পেট্রল পয়েন্ট নিজেদের বলে দাবি জানিয়েছে ভারত।
জরুরি ভিত্তিতে সি-৭ হেভি লিফ্টার বোয়িং বিমানের মাধ্যমে ভেসেলগুলো লেহ-তে নিয়ে যাওয়া হবে। তবে আকাশপথে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে। সেগুলো কাটিয়ে দ্রুত পাঠানোর চেষ্টা চলছে।
অন্য কোনোভাবে বোটগুলো পাঠানো যায় কিনা, তাও খতিয়ে দেখছেন সেনা কর্মকর্তারা।প্যাংগং লেকে টহলদারির জন্য চীন সেনার রয়েছে ৯২৮বি ভেসেল। এর সঙ্গে সমানতালে টক্কর দিতে চাইছে ভারত। দেশটির সেনা সূত্রে জানা গেছে, তিন বাহিনী যৌথভাবে ভেসেল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ভারত উঁচু পাহাড়ে ঘেরা দুর্গম সংঘাতের ক্ষেত্রগুলোতে দ্রুত পৌঁছাতে মোতায়েন করেছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেনা ও কমান্ডোকে। কাশ্মীর থেকে লাদাখে পাঠানো হয়েছে দুটি প্যারা কমান্ডো ইউনিটকে।
পাঠানো হয়েছে অতিরিক্ত সাত ব্যাটালিয়ন সেনাও। এবার পাঠানো হচ্ছে ভারতীয় সেনার ঘাতক বাহিনীর কমান্ডোদের।
কর্নাটকের বেলগামে ৪০ দিনের বেশি সময় ধরে ট্রেনিং দেয়া হয় কমান্ডোদের।
দুর্গম এলাকায় অভিযানের জন্য শারীরিক ক্ষমতা ও ক্ষিপ্রতা বাড়াতে প্রশিক্ষণের সময় ৩৫ কিলো ওজন কাঁধে নিয়ে ৪০ কিলোমিটার দৌড়তে হয় তাদের। মার্শাল আর্টেও তারা দক্ষ।
ইসরাইলের বিশেষ কমান্ডোদের আদলে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে এ বাহিনীকে। কোনো আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়াই খালি হাতে শত্রু নিধনের ক্ষমতা রাখেন এ বাহিনীর কমান্ডোরা।