বেইজিং-নয়াদিল্লি কূটনৈতিক সম্পর্কে আস্থার ঘাটতি ছিলই। তাকে পাশে রেখেই সমান্তরালে চলছিল দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য। কিন্তু লাদাখ সংঘাতের পর কমিউনিস্ট চীনের মুখের কথায় আর কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে চায় না নয়াদিল্লি।
তাই উত্তেজনা কমাতে কোনো রকম পদক্ষেপের আগে অন্তত ৭২ ঘণ্টা সময় নিয়ে চাইছে সাউথ ব্লক। অর্থাৎ সীমান্তে চীন কোনো ব্যবস্থা নিলে তা তিন দিন ধরে পর্যবেক্ষণ করে নিশ্চিত হওয়ার পর ভারত সমতুল কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ করবে।
বরং সীমান্তে স্থিতাবস্থা ও শান্তি কায়েমের লক্ষ্যে বেইজিং সাদা কালোয় কী করছে তা পুরোপুরি দেখে নিতে চায় ভারত।
সাউথ ব্লকের কূটনীতিকরা বুঝতে পারছেন লাদাখের দু’ছটাক জমি দখল করে নেওয়া বেইজিংয়ের লক্ষ্য নয়। ভারতের উপর চাপ তৈরিই উদ্দেশ্য। তাই পাল্টা চাপের কৌশল নিয়ে চীনের উদ্দেশে যেমন সামরিক চোখ রাঙানি চলছে, তেমনই অর্থনৈতিক দিক থেকে বেইজিংকে চাপে ফেলার কৌশলও নিয়েছে নয়াদিল্লি। সমস্ত চীনা অ্যাপের উপর নিষেধাজ্ঞা আসলে প্রতীকী পদক্ষেপ। নয়াদিল্লির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি হলে ভারত মহাসাগর দিয়ে চীনা বাণিজ্যও যে ঝুঁকির মধ্যে পড়বে-সেই বার্তাও দিতে শুরু করেছে সাউথ ব্লক।
১৫ জুন লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় চীনা সেনাদের সঙ্গে সংঘাতের পর সীমান্তে উত্তেজনার পারা অনেকটাই চড়ে গিয়েছে। কৌশলগত কারণেই হোক বা ঘরোয়া রাজনীতির চাপে সেক্ষেত্রে কট্টরপন্থা নিয়ে চলছে নয়াদিল্লি ‘তুমি চোখ রাঙালে আমিও চোখ রাঙাব’।
সীমান্তে উত্তেজনা যদি সত্যিই কমে তা হলে তা ধাপে ধাপে কমবে। সমঝোতা অনুযায়ী চীন সত্যি কোনো পদক্ষেপ করছে কিনা তা দেখা হবে। তার ধারাবাহিকতা থাকছে কিনা তা কম করে ৭২ ঘণ্টা ধরে পর্যবেক্ষণ করা হবে। সে ব্যাপারে নিশ্চিত হলে তবেই ভারত উত্তেজনা কমানোর ব্যাপারে সদর্থক পদক্ষেপ করা শুরু করবে। কারণ এ সব ব্যাপারে কমিউনিস্ট ও তার লাল ফৌজের বিশ্বাসযোগ্যতার বড় ঘাটতি রয়েছে।
কিন্তু তা যেমন ঠিক তেমনই এও ঠিক যে সার্বিক পরিস্থিতিতে সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমিত করা গেলে দু’দেশের পক্ষেই তা ভাল। তাই লাদাখ সীমান্তে ভারত-চীন কোর কমান্ডার স্তরে বৈঠক চলছে। তৃতীয় দফার বৈঠকে স্থির হয়েছে উত্তেজনা প্রশমনে দুই দেশ কী অবস্থান নেবে। কীভাবে সীমান্তে সেনা উপস্থিতি কমাবে এবং উত্তেজনা কমিয়ে শান্তি স্থাপন করবে।
দু’দেশের সেনাবাহিনীর কোর কম্যান্ডার স্তরে বৈঠক হয়েছে গত মঙ্গলবার। দুই দেশের বাহিনী নিজেদের মধ্যে অন্তত ১০০ মিটারের তফাৎ রেখে টহলদারি চালাবে। প্যাংগং লেকে দুই দেশের টহলদারি বাহিনীর নৌকো পরস্পরকে ধাক্কা মারবে না কিংবা একজনের টহলদারি জিপ অন্য বাহিনীর জিপকে ধাক্কা দেবে না ইত্যাদি।