বেইজিংয়ের চাপিয়ে দেয়া নতুন নিরাপত্তা আইনে গণতন্ত্রপন্থি বেশ ক’জন নেতাকর্মীকে আটকের মধ্যেই হংকংয়ের এক রাজনৈতিক নেতা চীননিয়ন্ত্রিত এ শহরটি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।
সাবেক এ ছাত্রনেতা ২০১৪ সালে হংকংয়ের ‘আমব্রেলা আন্দোলনের’ পর জেল খেটেছিলেন। এখন বাইরে থেকেই হংকংয়ের গণতন্ত্রের জন্য লড়বেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
এক বিবৃতিতে নাথান ল নিজেই তার হংকং ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার চীনের ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের স্ট্যান্ডিং কমিটির ১৬২ সদস্যের সম্মতিতে নতুন যে জাতীয় নিরাপত্তা আইন পাস হয়েছে, তাতে হংকংয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদ, কর্তৃপক্ষকে অবমাননা, সন্ত্রাসবাদ ও জাতীয় নিরাপত্তা বিপন্ন করতে বিদেশি বাহিনীর সঙ্গে আঁতাতের সর্বোচ্চ সাজা হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
“আমি বিশ্বাস করি, এই আন্দোলন এখনও সজীব। ঝুঁকি থাকলেও হংকংয়ের মানুষ হাল ছাড়বে না,”
আইনটি কার্যকরের প্রতিবাদে বুধবার শহরটির কয়েক হাজার বাসিন্দা বিক্ষোভও করে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকে কাঁদুনে গ্যাস, জলকামান ও পিপার স্প্রে ব্যবহার করতে হয়েছে।
হংকংয়ের সরকার মঙ্গলবার রাত থেকেই আইনটি কার্যকরের ঘোষণা দেয়। নতুন এ আইনটিকে হংকংয়ের বিশেষ স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতার জন্য হুমকি হিসেবে বর্ণনা করে আসছেন গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনকর্মীরা।
বিতর্কিত এই আইনের মাধ্যমে হংকংয়ের বাসিন্দাদের বাকস্বাধীনতা পুরোপুরি খর্ব হল বলেও অভিযোগ করছেন তারা।
সমালোচকদের এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে বেইজিং। তারা বলছে, হংকংয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদ ও বিদেশি হস্তক্ষেপ রুখতে নিরাপত্তা আইন কার্যকর জরুরি হয়ে পড়েছিল।
১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্য যখন চীনের কাছে হংকংকে হস্তান্তর করেছিল, তখন ‘এক দেশ দুই ব্যবস্থার’ চুক্তিতে পরবর্তী ৫০ বছরের জন্য শহরটির অধিক স্বায়ত্তশাসন অক্ষুণ্ন এবং বাসিন্দাদের সুনির্দিষ্ট কিছু অধিকার দেয়ার কথা বলা হলেও ২৩ বছরের মাথায় করা নতুন জাতীয় নিরাপত্তা আইন তার ‘সুস্পষ্ট লংঘন’।
বুধবার ভিডিওলিংকের মাধ্যমে মার্কিন কংগ্রেসে হংকং বিষয়ক এক শুনানিতে ল বলেন, চীননিয়ন্ত্রিত শহরটিতে ফিরলে তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে বলে ভয় পাচ্ছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তিনি হংকং ছেড়ে ‘আত্মগোপনে আছেন’ বলে জানান।
“ঝুঁকি বিবেচনায়, আমার অবস্থান এবং এখনকার পরিস্থিতি নিয়ে খুব বেশি বলা ঠিক হবে না,” বলেছেন তিনি।
চীনের পার্লামেন্টে পাস হওয়া নতুন এ জাতীয় নিরাপত্তা আইনে হংকংয়ে গণপরিবহনের কোনো স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতিকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ হিসেবে বিবেচনা করতে বলা হয়েছে।
শহরটিতে ২০১৯ সালে হওয়া টানা কয়েকমাসের আন্দোলনে বিক্ষোভকারীদের প্রায়ই গণপরিবহন ও সরকারি বিভিন্ন ভবন ভাংচুর করতে দেখা গেছে।
নতুন আইনে পুলিশকে ইন্টারনেট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তথ্য নেয়ার সুযোগ করে দেয়ায় হংকংয়ের বাসিন্দাদের অনলাইন স্বাধীনতাও খর্ব হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বুধবার থেকে কার্যকর হওয়া এ আইনে এরই মধ্যে অন্তত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ অসংখ্য দেশ চীনের চাপিয়ে দেয়া এ নিরাপত্তা আইনের সমালোচনা করলেও কিউবাসহ বেশ কয়েকটি দেশ বেইজিংয়ের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে।
“জাতিসংঘ সনদে থাকা অপরিহার্য নীতির মধ্যে কোনো সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার কথা সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে,” জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ৪৪তম অধিবেশনে এমনটাই বলেছে হাভানা।
চীনের নতুন এ জাতীয় নিরাপত্তা আইন নিয়ে যেসব দেশ সমালোচনা করেছে তাদেরকে সতর্ক করেছে বেইজিং।
“হংকং নিয়ে অন্য কারও মাথা ঘামাতে হবে না,” বলেছে তারা।