স্টুডেন্টদের অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগের নির্দেশ জারি করেছে সেদেশের সরকার। সারাবিশ্বের বহুদেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আগত ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ১১ লাখের বেশি। এই আদেশের ফলে বিপুল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীর ভবিষ্যত তছনছ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
৬ জুলাইর যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন দফতরের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ‘ইমিগ্রেশন এ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট’ তথা আইস এ নির্দেশ জারি করেছে। তারা জানিয়েছে, ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট হিসেবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরতরা এ নির্দেশ অমান্য করলে তাদেরকে গ্রেফতারের মুখোমুখি হতে হবে।
প্রচলিত রীতি অনুযায়ী গ্রেফতারের পর সকলকে নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে।
ওই ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, করোনার কারণে প্রতিটি ইউনিভার্সিটির ক্লাস অনলাইনে করা হবে। তাই সশরীরে ক্লাসে থাকার কোনই প্রয়োজন নেই।
আইসের এই পদক্ষেপের ভিকটিম হবেন নিয়মিত ছাত্র-ছাত্রীসহ যারা স্বল্প মেয়াদি ট্রেনিং কোর্স (নন-একাডেমিক অথবা ভকেশনাল) নিতে এসেছেন তারাও।
এ সিদ্ধান্তকে একেবারেই অমানবিক, অবিবেচনাপ্রসূত এবং যুক্তরাষ্ট্রের নীতি-নৈতিকতার পরিপন্থী হিসেবে মন্তব্য করেছেন আমেরিকান ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. গোলাম মাতবর।
যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের মেধাবি শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বিশেষ ইস্যুতে উচ্চতর কোর্স অথবা গবেষণার জন্যে দু’দেশ ভ্রমণের প্রক্রিয়ায় প্রশাসনের সমন্বয়কারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই সংস্থা।
নিউ জার্সির মনমাউথ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট ড. গোলাম মাতবর ৬ জুলাই বলেন, আমরা ভেবেছিলাম, সেপ্টেম্বরে শুরু হতে যাওয়া নতুন শিক্ষাবর্ষে যারা আসার কথা তাদেরকে আপাতত: আসতে মানা করা হবে।
তবে যারা ইতিমধ্যেই কয়েক বছর কাটিয়েছেন ক্যাম্পাসে থেকেই তাদেরকে অবস্থানের সুযোগ দেয়া হবে। কিন্তু যে ধরনের নির্দেশ জারি করা হলো, সেটি কারোর জন্যেই সুখকর হবে না।
ভবিষ্যতে মেধাবিরা আর যুক্তরাষ্ট্রে আসতে চাইবেন না।
ড. মাতবর উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের ৭৮০০ ছাত্র-ছাত্রী রয়েছেন আন্তর্জাতিক স্টুডেন্ট হিসেবে।
তাদেরকে চলে যেতে হবে কোর্স অপূর্ণ রেখেই। ভারত, চীন, জাপান, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশের ১২ লাখের মত ছাত্র-ছাত্রী রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাথে অধিকাংশ দেশেরই সময়ের ব্যবধান অনেক বেশি।
তাই অনলাইন কোর্সে অংশগ্রহণ করতে সকলকেই কঠিন একটি পরিস্থিতির ধকল সইতে হবে।
যেমন, বিকেল ৩ টার ক্লাসের জন্যে বাংলাদেশ, ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ছাত্র-ছাত্রীকে মধ্যরাত থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। সন্ধ্যার ক্লাসের জন্যে ভোর বেলার ঘুম হারাম করতে হবে।
এছাড়া, অনেক দেশেই ইন্টারনেট তেমন মানসম্পন্ন নয়। বিদ্যুতের নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ না থাকলে সবকিছুই পণ্ড হয়ে যাবে।
এজন্যে, যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করে অনলাইনে ক্লাস করতে পারলে সবার জন্যেই তা মঙ্গলের হবে বলে মনে করেন ড. মাতবর।
যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন এ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) এর বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, যে সব ইউনিভার্সিটি অথবা ইন্সটিটিউটের কোর্স অনলাইনে যাবে, সেগুলোর জন্যে আর কোন ভিসা ইস্যু করা হবে না। আগে থেকেই যদি কারো ভিসা থেকে থাকে, তাহলে ইউএস কাস্টমস এ্যান্ড বোর্ডার প্রটেকশন কর্মকর্তারা সে সব শিক্ষার্থীকে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দেবে না।