সিরাজুর রহমান: পাকিস্তানের সরকারি ও বেসরকারি বিমান সংস্থায় কর্মরত পাইলট বা বিমান চালকদের ভূয়া বা জাল লাইসেন্স সংগ্রহের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসায় বড় ধরণের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে যাচ্ছে পাকিস্তানের জাতীয় বিমান সংস্থা পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস (পিআইএ)। তারই ধারাবাহিকতায় একের পর এক নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে যাচ্ছে পাকিস্তান এয়ারলাইন্সের বিমানগুলো।
পাকিস্তানের পাইলটদের জাল লাইসেন্স সংগ্রহের ইস্যুকে কেন্দ্র করে প্রথমে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এ্যাভিয়েশন সেইফটি এজেন্সি (ইএএসএ) ভুক্ত সদস্য দেশগুলো পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের (পিআইএ) ফ্লাইট পরিচালনার অনুমোদন বাতিল এবং তাদের আকাশে বিমান উড্ডয়ন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। আর তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে যুক্তরাজ্য ও ভিয়েতনামসহ বেশ কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যেই পাকিস্তানের বিমান উড্ডয়ন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
পাকিস্তানের জিও টিভি নিউজের প্রতিবেদনের প্রকাশের ভিত্তিতে পাকিস্তানী পাইলটদের জাল লাইসেন্স ইস্যুতে এবার দেশটির ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের (পিআইএ) ফ্লাইটের ওপর বড় ধরণের নিষেধাজ্ঞা আরোপ জারি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহন দফতরের পক্ষ থেকে এমনটি নিশ্চিত করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের বিমান পরিবহন দফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, মার্কিন ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের(এফএএ) পাকিস্তানের পাইলটদের সার্টিফিকেট জালিয়াতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর শঙ্কিত ছিলেন তারা। আর তাই তাদের আকাশ নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে পাকিস্তানের সরকারি ও বেসরকারি সকল ধরণের বিমান উড্ডয়ন আপাতত নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তাছাড়া পাকিস্তানের জিও নিউজের প্রতিবেদনেও পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স (পিআইএ) এর সকল ফ্লাইটের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
চলতি ২০২০ সালের মে মাসে পাকিস্তানের করাচিতে আবাসিক এলাকায় তাদের অভ্যন্তরীণ রুটের একটি এয়ারবাস-৩২০এ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ৯৭ জন নিহত হন। আর এই মর্মান্তিক বিমান দূর্ঘটনায় বিমানটির কারিগরি ত্রুটি জনিত কোন সমস্যা চিহ্নিত না হওয়ায় তদন্তে পাকিস্তানের পাইলটদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
পালিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের এই এয়ারবাস-৩২০ এ বিমান দূর্ঘটনার পর তদন্ত প্রতিবেদনে প্রকাশের সময় পাকিস্তানের বিমানমন্ত্রী গোলাম সারওয়ার পার্লামেন্টে জানান, বর্তমানে পাকিস্তানে সরকারি ও বেসরকারি বিমান সংস্থায় কর্মরত পাইলটের মধ্যে ৪০% (৮৬০ জনের মধ্যে ২৬২) পাইলটই জাল বা ভুয়া লাইসেন্স নিয়ে বিমান চালান। আর পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স (পিআইএ) এর কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই পাইলটদের লাইসেন্স জালিয়াতির ইস্যুতে বিমান সংস্থায় কর্মরত ৪৩৪ জন পাইলটের মধ্যে ১৫০ জনকে ভূয়া সনাক্ত করে তাদের ‘গ্রাউন্ডেড’ বা নিষিদ্ধ করেছে।
বর্তমানে পাকিস্তানে ৪০% অবৈধ পাইলট বিমান প্রশিক্ষণ পরীক্ষায় পাশ না করেই জাল সনদ এবং লাইসেন্স সংগ্রহ করে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর দেশী সরকারি ও বেসরকারি বিমান সংস্থাতে দীর্ঘ দিন ধরেই পাইলট হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। আর সাম্প্রতিক সময়ে এয়ারবাস এভিয়েশন কর্পোরেশনের সাথে যৌথভাবে করা এক গোপন তদন্তে বেড়িয়ে আসে অতি ভয়ঙ্কর জালিয়াতির এসব তথ্য।