৭১- পাবনা-৪ আসনের মাননীয় সাংসদের মৃত্যুজনিত কারনে আসনটি শুন্য হয় বিধায় সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারনে আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে হয়ত এই আসনে উপ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
আসন্ন উপনির্বাচনের আবহাওয়া এলাকায় পরিলক্ষিত হচ্ছে এই আসনে। অন্য কোন দলের কোন প্রার্থীর নড়াচড়া না থাকলেও শাষক দল আওয়ামী লীগের প্রায় ৮/১০ জন প্রার্থীর নির্বাচনে অংশ গ্রহনের বিষয়টা বিভিন্ন পত্রিকায় এবং সোশাল মিডিয়ায় কৌশলে প্রচার হচ্ছে।
অবশ্য এই সমস্ত প্রার্থীগন কোভিড ১৯ সংক্রমনের সাধারন ছুটির সময় কিছু কিছু এলাকায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ত্রান সামগ্রী বিতরন করে আলোচনায় থাকার চেষ্টা করেছেন।
উপ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ ধরনের কর্মসুচী প্রতিপালনের উদ্দেশ্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন পুর্বক দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতার প্রচেষ্টা বলেই জনগন মনে করে।
দ্বিতীয়ত অনেকেই ত্রান বিতরন এবং উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করার ঘোষনা দিয়েছেন।
এ ধরনের প্রচারনায় সাধারন মানুষের মধ্যে বার্তা যেতে পারে যে দেশের উন্নয়নের এত ঢাক ঢোল পিটিয়েও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত সবল হয় নাই বিধায় উপ নির্বাচনের প্রার্থীগনের শক্তি দিয়েই প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করতে হবে।
আমাদের দেশে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করতে হলে দুইটা পদ্ধতি অনুসরন করতে হয়।
প্রথমতঃ দলীয় মনোনয়ন যা পেতে প্রার্থীকে তার রাজনৈতিক জীবনে দলীয় রাজনীতির কর্মসুচী কতটুকু অংশ গ্রহন করেছেন বা বিভিন্ন কারনে কতটুকু ত্যাগ স্বীকার করেছেন তার একটা ফিরিস্তি দিতে হয়।
কিন্তু অন্য অংশ জনগনের ভোট চাইতে তার রাজনৈতিক জীবনে জনগনের কল্যানে কি কি কাজ করেছেন তার ফিরিস্তি দিতে হয় না বরং নির্বাচিত হলে কি কি করবেন তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন।
আবার নির্বাচিত হওয়ার পরে সে সব প্রতিশ্রুতি ভুলে যাওয়ার বহু নজির আছে। বর্তমান বিশ্বে প্রতিশ্রুতি দেওয়া এবং তা প্রতিপালন না করার সংস্কৃতি জনগনের কাছে কতটুকু গ্রহনযোগ্য সে বিষয় পর্যালোচনার দাবী রাখে।
রাজনৈতিক দল সমুহের মনোনয়ন পেতে দলীয় কর্মকান্ডের সংগে তৃনমুলের নেতা কর্মিদের নিকট তাঁর গ্রহনযোগ্যতা, আস্থা, বিশ্বাস মানদন্ড হিসাবে অবশ্যই বিবেচনায় রাখা দরকার।
এই পদ্ধতির কিছু ব্যাত্যয় হচ্ছে বিধায় নির্বাচনের পুর্বে এবং পরে প্রার্থী, কর্মী, দল এবং জনগন সবাইকেই বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়।
আবার দলের তৃনমুলকে উপেক্ষা করার কারনেই হয়ত দলের কেন্দ্রে অসৎ এবং রাজনৈতিক টাউটদের অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তাদের কর্মকান্ডেই দল, রাজনীতি এমন কি স্বয়ং দেশ চরম ভাবে বিপর্যস্ত এবং ভাবমুর্তির সংকটে পড়ছে।
সুতরাং দলের প্রার্থী মনোনয়নের সময় তৃনমুলের সংগে প্রার্থীর সম্পর্ক এবং জনগনের কল্যানে কে কতটুকু কাজ করেছেন, ভুমিকা রেখেছেন তার একটা ফিরিস্তি পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।
এতে নির্বাচিত গনপ্রতিনিধিদের তৃনমুলের নেতাকর্মি এবং জনগনের নিকট জবাবদিহিতার প্রচলন শুরু হলে দুর্নীতি এবং স্বজনপ্রীতির মাত্রাটা অনেকাংশে কমে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।
পাবনা-৪ আসনের নির্বাচনে যারা প্রার্থী হবেন তাঁদের জিজ্ঞাসিত হওয়া দরকার যে ঈশ্বরদীর বহু সমস্যা যেমন ঈশ্বরদী হাসপাতালে দীর্ঘদিন যাবত জনগন কোন স্বাস্থ্য সেবা পায় না।
হাসপাতালটিকে কয়েক জন ডাক্তার নিজেদের ক্লিনিক ব্যবসার অভ্যর্থনা কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার করে থাকেন।
এই নিয়ে প্রিন্ট, অনলাইন পত্রিকায়, ফেসবুকে বিস্তর লেখালেখি হয়েছে। কেউ কি বলতে পারবেন যে হাসপাতালের সমস্যা সমাধানে বা সরকার কর্তৃক প্রদত্ত চিকিৎসা সেবার নুন্যতম অংশ জনগনের ভোগ করার নিশ্চয়তা বিধানে ভুমিকা রেখেছেন।
ঈশ্বরদীর শিক্ষাঙ্গনে ( করোনা সংক্রমনের পুর্বে) লেখাপড়ার মানের কি অবস্থা ছিল কিংবা নিয়ম বহির্ভুত ভাবে ছাত্রছাত্রীদের নিকট থেকে অনৈতিক চাঁদা আদায়ের যে মহোৎসব চলেছে তা কোন রাজনৈতিক নেতা বা প্রার্থী কোন সময় আমলে নিয়েছেন।
কয়েকদিন আগে একজন ফেসবুক বন্ধু একজন প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি অনুষ্ঠানের ব্যানারে উপজেলা চেয়ারম্যান সাহেবের উপরে জনাব ইউএনও সাহেবের নাম লেখার ঘটনা প্রকাশ করেছেন।
এ ঘটনায় রাজনৈতিক নেতাদের চিন্তা চেতনায় আঘাত না করলেও জনগনের কাছে পরিস্কার যে, কি মানের শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে ঈশ্বরদীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমুহ পরিচালিত হচ্ছে।
ঈশ্বরদীতে মাদকের বিস্তার এবং সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধে অন্য অনেকের ভুমিকা থাকলেও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কোন ভুমিকা কিন্তু নজরে পড়ে না।
রুপপুর মোড়ের উচ্ছেদকৃত ব্যবসায়িকদের ন্যায়সঙ্গত ক্ষতিপুরনের দাবীর প্রতি কোন রাজনৈতিক নেতার সহমর্মিতা প্রকাশের ঘটনাও নজরে আসে নাই।
প্রেসক্লাবটি হতে পারত ঈশ্বরদীর সাংবাদিক, কবি, সাহিত্যিক, সুশীল এবং শিক্ষিত সমাজের মিলন কেন্দ্র অথচ সেই চরম স্পর্শকাতর জায়গাটিরও দলীয়করনের বিভৎস চেহারা সাধারন মানুষ অবলোকন করছে।
তাহলে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বলুন দলীয় কর্মকান্ডের কারনে দলীয় মনোনয়ন পেলেও জনগনের নিকট ভোট চাওয়ার নৈতিক অধিকার কি আপনাদের আছে? যদিও জনগনের ভোট দেওয়া এবং ভোট নেওয়ার সংস্কৃতি নির্বাচন ব্যবস্থায় অনেকটাই কমে গেছে যা সমগ্র জাতীর জন্যই দুর্ভাগ্যজনক বটে।
আমার মনে হয় এ ব্যবস্থা গনতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার প্রধান হিসাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভাবমুর্তি যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বিধায় নির্বাচনি ব্যবস্থার মেরামত খুবই জরুরী।
তারপরেও আমার মনে হয় দেশের চলমান নির্বাচনী সংস্কৃতি পরিবর্তন সহ রাজনীতির গুনগত পরিবর্তন করে জনগনের কল্যানের জন্য কিছু করেই তবে জনগনের ভোট প্রাপ্তির প্রত্যাশার পদ্ধতি চালু সহ “জনগনের কল্যানেই হউক রাজনীতি” স্লোগান নির্ভর একটি কর্মসুচীর অনুশীলন শুরু করে রাজনীতির উৎকর্ষ সাধনের প্রচেষ্টা নেওয়া জরুরী।
লেখকঃ- শমিত জামান, সাংবাদিক কলামিস্ট।