সিরাজুর রহমানঃ রাশিয়ার পুতিন সরকার কোন এক অজানা কারণে চীনের কাছে পরবর্তী অত্যাধুনিক এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম সরবরাহ সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। আসলে ২০১৪ সালে চীন রাশিয়ার সাথে ৩.০০ বিলিয়ন ডলার মূল্যে এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের ৬টি ইউনিট ক্রয়ের চুক্তি করে। আর চুক্তি মোতাবেক ২০১৮ সালের ১০ই মে রাশিয়ার আলমার্জ এন্টি গ্রুপের প্রথম চালানে এস-৪০০ হাতে পায় চীনের সামরিক বাহিনী।
তাছাড়া ২০২০ এর মাঝামাঝি সময়ে এস-৪০০ এর পরবর্তী চালান চীনের হাতে হস্তান্তর করার কথা ছিল। আর খুব সম্ভবত ভারতের শক্তিশালী লবিং এবং লাখাদকে কেন্দ্র করে চীন-ভারত ভয়াবহ যুদ্ধে জড়িয়ে পরার প্রবল আশাঙ্খায় রাশিয়া আপাতত সাময়িকভাবে চীনের কাছে এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম সরবরাহ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
আবার বানিজ্য যুদ্ধ এবং দক্ষিণ চীন সাগরের মালিকানাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সময়ে চীন-মার্কিন সামরিক উত্তেজনা এবং বিরোধ চরম আকার ধারণ করায় হয়ত রাশিয়ার পুতিন সরকার ঝামেলা এড়াতে কিংবা কৌশলগত কারণে চীনের কাছে এস-৪০০ সরবরাহ করতে আরো কিছুটা সময় নিতে চাচ্ছে।
তবে চীন খুব সম্ভবত অত্যন্ত গোপনে রাশিয়ার এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের ক্লোন কপি তৈরির চেষ্টা করছে এমনটি সন্দেহ করা হলেও রাশিয়া হঠাৎ কেন চীনকে এর সরবরাহ স্থগিত করেছে তার মূল কারণ এখনো প্রকাশ করেনি।
বর্তমানে রাশিয়া, চীন, বেলারুশ এবং তুরস্কের সামরিক বাহিনীর কাছে এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম এক্টিভ রয়েছে। তাছাড়া ভারত ২০১৮ সালে একটি ৫.৩২ বিলিয়ন ডলার মূল্যে ৫ রেজিমেন্ট এস-৪০০ ক্রয়ের চুক্তি সম্পন্ন করেছে। যা কিনা প্রথম ব্যাচে আগামী ২০২১ সালের মধ্যে সরবরাহ পেতে পারে। এর পাশাপাশি সৌদি আরব, কাতার, মিশর, ইরান ইরাক, ভিয়েতনাম এবং মরক্কোসহ বেশ কিছু দেশ রাশিয়ার এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ক্রয়ের প্রবল আগ্রহ দেখিয়েছে।
এখানে সবচেয়ে আশ্চর্যের একটি বিষয় হলো যে, সারা বিশ্বে এখনো পর্যন্ত চলমান সক্রিয় কোন যুদ্ধেক্ষেত্রে রাশিয়ার এস-৪০০ সন্দেহতীতভাবে ব্যাটল প্রুভ না হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র রাশিয়ার ব্যাপক প্রচার এবং কৌশলের কারণে বৈশ্বিক অস্ত্র বাজারে হট কেকের মতো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। তবে সিরিয়ার মোতায়েন থাকা রাশিয়ার এস-৪০০/৩০০ আজ অব্ধি ইসরাইল কিংবা মার্কিন বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রতিরোধে একটি মিসাইল পর্যন্ত ফায়ার করে দেখাতে পারেনি। এস-৪০০ নিয়ে ইউটিউবে যে ভিডিওগুলো দেখা যায়, তা আসলে পূর্ব পরিকল্পিত সামরিক মহড়া, প্রশিক্ষণ কিংবা এ্যানিমেটেড ভিডিও ক্লীপ ছাড়া আর কিছুই নয়।
তাছাড়া যুদ্ধরত দুটি দেশকে একই সময়ে প্রাণঘাতী যুদ্ধাস্ত্র এবং সামরিক সাজ সরঞ্জাম সরবরাহ এবং বিক্রয়ের মতো ডাবল গেম প্লে রোল করার মতো অভ্যাস এবং দীর্ঘ দিনের রেকর্ড রয়েছে রাশিয়া বা আগের সভিয়েত ইউনিয়নের। যেমন ১৯৮০-১৯৮৮ সালের দিকে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধরত ইরাক ও ইরান উভয়ের কাছে নির্বিচারে অস্ত্র বিক্রয় এবং সরবরাহ করে গেছে দেশটি।