চীনের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের লাগাতার অবনতি ঘটে চললেও ট্রাম্প প্রশাসন এতকাল ‘এক চীন নীতি’ বর্জন করেনি। বিশ্বের প্রায় সব দেশের মতো তাইওয়ানের বদলে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনকেই স্বীকৃতি দিয়ে এসেছে ওয়াশিংটন।
তাইওয়ানের ওপর চীনের অধিকারের দাবি মেনে চলা হয়েছে। বৃহত্তর স্বার্থে ১৯৭৯ সাল থেকে বেইজিংয়ের সঙ্গেই কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ফলে বিগত দশকগুলিলোতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে সম্পর্ক এবং বেশ কিছু ক্ষেত্রে পারস্পরিক নির্ভরতা বেড়েই চলেছে।
বর্তমানে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অভূতপূর্ব চাপের মুখে রয়েছে বলে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত মনে করছেন।
ট্রাম্প প্রশাসন সেই নীতি শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে মার্কিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আলেক্স আজারের নেতৃত্বে এক উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল তাইওয়ান সফর করবে। শুধু তাই নয়, আজার তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং ওয়েনের সঙ্গেও প্রকাশ্যে সাক্ষাৎ করবেন বলে সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এত উচ্চপদস্থ কোনো প্রতিনিধি তাইওয়ান সফর করেননি। তাইওয়ান এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও চীন এই ঘোষণার কড়া সমালোচনা করবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। মহামারির সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তার ক্ষেত্রে ওয়াশিংটনের ভূমিকার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে তাইওয়ান।
ঠিক এই মুহূর্তে বেইজিংকে চটিয়ে তাইওয়ানের সঙ্গে প্রকাশ্য সখ্যতার কারণ কী? প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প করোনা প্রসারের জন্য বার বার সরাসরি চীনকে দায়ী করে চলেছেন। তিনি করোনার বদলে ‘চায়না ভাইরাস’ বলতেই ভালোবাসেন। মঙ্গলবার মার্কিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আলেক্স আজার এক বিবৃতিতে করোনা সংকট মোকাবেলার ক্ষেত্রে তাইওয়ানের ভূয়সী প্রশংসা করেন। মহামারির সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য কাঠামোয় স্বচ্ছতা ও সহযোগিতার মডেল হিসেবে সে দেশকে তুলে ধরেন তিনি। গণস্বাস্থ্যের সুরক্ষা ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে মুক্ত ও গণতান্ত্রিক সমাজই সেরা মডেল, বলেন আজার।
তাইওয়ানের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সখ্যতা ততই বেড়ে চলেছে। এপ্রিল মাসেই মার্কিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আজার তাইওয়ানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী চেন শি চুং-এর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। মার্চ মাসে নতুন আইনে স্বাক্ষর করে ট্রাম্প তাইওয়ানের বেড়ে চলা আন্তর্জাতিক ভূমিকার প্রতি মার্কিন সমর্থন প্রকাশ করেন।
কার্যভার গ্রহণের পর তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে ট্রাম্প আন্তর্জাতিক মঞ্চে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। ১৯৭৯ সালের পর মার্কিন কোনো প্রেসিডেন্ট এমনটা করেননি। ট্রাম্প তাইওয়ানকে বোমারু বিমানসহ অনেক সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহের ছাড়পত্র দিয়েছেন। বেইজিংকে চটানোর ভয়ে অনেক সতর্ক ছিলেন। তবে বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুই রাজনৈতিক শিবিরই তাইওয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নতির পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে। বিশেষ করে সম্প্রতি হংকং সম্পর্কে চীনের বিতর্কিত নীতির প্রেক্ষাপটে এই মনোভাব আরো জোরালো হচ্ছে।