মহামারী আতঙ্কে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে আগ্রহী নন, এমন ব্যক্তিরা ডাকযোগে আগাম ভোট দিলে কারচুপির শিকার হবেন বলে অভিযোগ তুলেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এরই পরিপ্রক্ষিতে নিজের সমর্থক পোস্ট মাস্টার জেনারেলের মাধ্যমে নানা ফন্দি করেছিলেন তিনি। এরপর বাজেট সংকটের অজুহাত দেখিয়ে ব্যালট বিতরণে ধীরে চলার নীতি অবলম্বন করার ঘোষণা দেন পোস্ট মাস্টার।
নির্বাচন কমিশনে ব্যালট জমা না হলে সেগুলো গণনার আওতায় আসবে না অর্থাৎ ট্রাম্পের ধারণা যে, আগাম ভোট না পেলেই তার বিজয় নিশ্চিত।
কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের বিশেষ জরুরি অধিবেশন ডেকে ২৫৭-১৫০ ভোটে ডাক বিভাগের সংকট কাটিয়ে উঠতে ২৫ বিলিয়ন ডলার প্রদানের একটি বিল পাশ করেছে।
এতে ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টির ২৬ কংগ্রেসম্যানও সমর্থন দিয়েছেন।
বিল পাশের পরিপ্রেক্ষিতে ডেমোক্র্যাটে স্বস্তি এলেও রিপাবলিকান শাসিত ইউএস সিনেটে এমন বিল পাশ দূরের কথা, উত্থাপনেও আগ্রহী নন সিনেট-লিডার সিনেটর মিচ ম্যাককনেল।
ডাক বিভাগের স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে তহবিলের কোনো ঘাটতি নেই। অপরদিকে, পোস্ট মাস্টার জেনারেল লুইস দ্য জয় কয়েকদিন আগেই বাজেট সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে অনেক কর্মচারীর কর্মঘণ্টা কমানোর তথ্য প্রকাশ করেছেন। তার ফলে স্বাভাবিক কাজে বিলম্ব ঘটছে।
ট্রাম্পও আগাম ঘোষণা দিয়েছেন, তেমন বিল তার টেবিলে গেলে, তিনি ভেটো দেবেন।
১৮ কোটি ভোটারের ব্যালট নির্দিষ্ট সময়ে বিলি করা কীভাবে সম্ভব-এমন শঙ্কা প্রকাশ করেন লুইস দ্য জয়।
বাজেটের এই সংকট পুষিয়ে নিতে করোনা রিলিফ বিলের সাথে ২৫ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দের অনুরোধ জানিয়েছিলেন পোস্ট মাস্টার জেনারেল। কিন্তু ট্রাম্প অস্বীকার করেছেন সেই ভর্তুকির ব্যাপারে।
গ্রীষ্মের ছুটিতে থাকা কংগ্রেসের সদস্যরা বিচলিত বোধ করেন এবং প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাট স্পিকার ন্যান্সী পেলসি সকলকে জরুরিভাবে ক্যাপিটল হিলে তলব করেন। সে অনুযায়ী কংগ্রেসম্যানরা শুক্রবারের মধ্যেই ওয়াশিংটন ডিসিতে জড়ো হন এবং শনিবার উপরোক্ত বিল পাশ হয়।
পরিস্থিতির সুষ্ঠু সমাধানে ডেমোক্র্যাটরা যথাসময়ে পদক্ষেপ নিলেও রিপাবলিকানদের সমর্থন না থাকায় ২৫ বিলিয়ন ডলারের ভর্তুকি প্রদানের বিধিটিও মুখ থুবড়ে পড়ে থাকবে বলে অনেকের আশঙ্কা।
সিনেটের এক শুনানিতে শুক্রবার তিনি দাবি করেন, বাজেট সংকট থাকলেও চিঠিপত্র বিলির কাজ সুষ্ঠুভাবেই চলছে। তার এই দাবির পরই ডেমোক্র্যাটরা সরেজমিনে নাজুক অবস্থার তথ্য প্রকাশ করেন শনিবার সকালে। সে সময় জানানো হয়, গত কয়েক মাস ধরেই খুবই বিলম্বে গন্তব্যে পৌঁছেছে চিঠিপত্র।
সাম্প্রতিক বিভিন্ন স্টেটের দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের নির্বাচনে ডাকযোগের ব্যালট যথাসময়ে নির্বাচন কমিশনে না পৌঁছায় অনেক ভোট গণনার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।
১৫ মে করোনায় বেকারদের সাপ্তাহিক ভাতা ৩১ জুলাইয়ের পর অব্যাহত রাখতে প্রতিনিধি পরিষদে একটি বিল (হিরোজ অ্যাক্ট) পাশ হয়েছে।
সেই বিলের পরিপূরক কোনো বিল রিপাবলিকানরা সিনেটে উত্থাপন করেননি। শেষ মুহূর্তে তারা মাত্র এক ট্রিলয়ন ডলারের একটি প্যাকেজের প্রস্তাব পেশ করেন সিনেটে। সেখানে সপ্তাহে ২০০ ডলার করে প্রদানের কথা রয়েছে।
ডেমোক্র্যাটদের পাশ করা প্যাকেজে ৩.৪ ট্রিলিয়ন ডলার বরাদ্দের প্রস্তাব রয়েছে। যেখানে বেকার ভাতা সপ্তাহে ৬০০ ডলার করেই ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত রাখার কথা রয়েছে।
দুই পার্টির মধ্যে সমঝোতার একটি চেষ্টা ট্রাম্পের পক্ষ থেকে চালানো হলেও রিপাবলিকানরা কোনোভাবেই ২০০ ডলারের বেশি বেকার ভাতা প্রদানে রাজি হননি।
এককালীন ১ হাজর ২০০ ডলার করে প্রদানেও সম্মত হয়নি রিপাবলিকানরা। করোনায় বাজেট সংকটে পড়া স্টেট ও সিটি প্রশাসনকেও ভর্তুকি প্রদানে আগ্রহী নন রিপাবলিকানরা।
হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, নার্সিং হোমের জন্যেও অতিরিক্ত বরাদ্দ দিতে রাজি নয় ট্রাম্পের রিপাবলিকান দল। এ অবস্থায় বেকার ভাতা বন্ধ রয়েছে।
ট্রাম্প গত ৮ আগস্ট একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন বেকার ভাতা প্রসঙ্গে। সে অনুযায়ী সপ্তাহে ৪০০ ডলার করে পাবার কথা। তবে সেটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। কারণ ৪০০ ডলারের মধ্যে ৩০০ ডলার ব্যয়ের কথা ‘ফেমা’র (ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি) জন্যে করোনা রিলিফ প্যাকেজের অর্থ থেকে।
অবশিষ্ট ১০০ ডলার করে দেবে স্টেটগুলো-এমন আহ্বান ট্রাম্পের। কিন্তু অধিকাংশ স্টেটই অপারগতা প্রকাশ করেছে ১০০ ডলার করে প্রদানে। কারণ, করোনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিটি স্টেটই আর্থিকভাবে বড় ধরনের সংকটে পতিত হয়েছে। এভাবেই ট্রাম্পের বিশেষ নির্বাহী আদেশটি এখন পর্যন্ত প্রহসন হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের কাছে।
৩ কোটি বেকার আমেরিকান ১ আগস্ট থেকেই নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন। ডাক বিভাগ উদ্ধারের ২৫ বিলিয়ন ডলারের বিল পাশের সাথে বেকার ভাতার প্রসঙ্গটি যুক্ত করা হলো না কেন-জানতে চাইলে প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সী পেলসি শনিবার গণমাধ্যমকে বলেন, ১৫ মে আমরা হাউজে ‘হিরোজ অ্যাকক্ট’ নামে একটি বিল পাশ করেছি।
সেখানে বিস্তারিত প্রস্তাবনা রয়েছে। কিন্তু রিপাবলিকানরা তা আমলে নিচ্ছে না। আমরা সর্বাত্মকভাবে সচেষ্ট রয়েছি ওই ব্যাপারে সন্তোষজনক সমঝোতার জন্যে। কারণ, অনেক মানুষ নিদারুন কষ্টে দিনযাপন করছেন।