ভারত-চীন সীমান্ত পরিস্থিতি কোনোক্রমেই শান্ত হচ্ছে না। এবার উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্তেও রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।
এক সপ্তাহে পর পর দুইবার মুখোমুখি সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ভারত এবং চীনের সেনাদের মাঝে। প্রথম দিন উভয় পক্ষের সামান্য সংঘাত হলেও দ্বিতীয় দিন সংঘর্ষ এড়ানো গেছে বলেই জানা গেছে।
তবে লাদাখে পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে আছে যে, যে কোনও সময় ফের সংঘাতের জোর সম্ভাবনা রয়েছে।
চীন সীমান্তবর্তী প্রতিটি অঞ্চলে হাই অ্যালার্ট জারি করেছে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। পাঠানো হয়েছে অতিরিক্ত সেনা।
ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্র জানাচ্ছে, পূর্ব লাদাখে প্যাংগং লেকের দক্ষিণ প্রান্তে ভারতীয় সেনাদের ব্যস্ত রেখে উত্তর-পূর্ব ভারতের চীন সীমান্তে বড়সড় আক্রমণ চালাতে পারে চীন।
২৯ আগস্ট রাত থেকে ৩০ আগস্ট ভোর পর্যন্ত প্যাংগং লেকের দক্ষিণ প্রান্তে সংঘাত হয়েছিল ভারত এবং চীনের সেনাদের। ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে ৩১ আগস্টও একই ঘটনা ঘটেছে।
তবে এবারে হাতাহাতি হয়নি। ৩১ আগস্ট ভারতীয় সেনাদের প্যাংগংয়ের দক্ষিণ প্রান্তে ঘিরে ধরেছিল চীনের সেনারা। উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পরে হাতাহাতির পরিস্থিতি তৈরি হলেও কমান্ডারদের নির্দেশে দুই পক্ষই সরে যায়।
চীন অন্যায্য ভাবে দক্ষিণ প্যাংগং এলাকায় ভারতীয় এলাকায় ঢোকার চেষ্টা করছে। কিন্তু দিল্লিতে চীনের দূতাবাস অত্যন্ত কড়া ভাষায় যে বিবৃতি দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, ভারতীয় সেনারা চীনের এলাকা দখল করে বসে আছে।
যা ভারত এবং চীনের সীমান্ত চুক্তির বিরোধী। অবিলম্বে ভারতীয় সেনাদের ওই এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার দাবি করেছে চীন।
প্যাংগংয়ের দক্ষিণ প্রান্তে একটি পাহাড়ের দখল নিয়েছে ভারতীয় সেনারা। নতুন সংঘাতের উৎস এ পাহাড়। স্ট্র্যাটেজিক দিক থেকে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় সেনারা ওই পাহাড়ের দখল নেওয়ার পর থেকেই চীনের সেনারা বারবার সেখান থেকে ভারতীয় সেনাদের সরানোর চেষ্টা করছে।
কিন্তু উচ্চতার সুযোগ নিচ্ছে ভারতীয় সেনারা। এ নিয়েই আপাতত বিতর্ক চলছে। বস্তুত, ৩১ অগাস্ট চীনের সেনারা যখন ভারতীয় সেনাদের ঘিরে ফেলে, অদূরেই চুসুল সেক্টরে কম্যান্ডার স্তরের বৈঠক চলছিল দুই দেশের সেনাদের। তারই মধ্যে নতুন সংঘাতের খবর পৌঁছায়।
কম্যান্ডাররা সেনাদের সরে যাওয়ার কথা বলেন। ফলে বড়সড় সংঘর্ষ হয়নি।
প্যাংগংয়ের উত্তর প্রান্তের আটটি ফিঙ্গার পয়েন্ট নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিতর্ক ছিল। ভারতীয় এনএসএ অজিত ডোভালের সঙ্গে গোয়েন্দা এবং রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিক্স উইংয়ের প্রধানের সাম্প্রতিক বৈঠকে এনএসএ কে জানানো হয়েছে, উত্তর পূর্ব ভারতে চীন সীমান্তে প্রভূত পরিমাণ সৈন্য জমায়েত করেছে পিপলস লিবারেশন আর্মি। মনে করা হচ্ছে, অরুণাচল এবং সিকিম সীমান্তে আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে চীন।
লাদাখ সীমান্তে সেনাদের ব্যস্ত রাখার জন্যই কার্যত অনালোচিত একটি জায়গায় বার বার সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে।
৩১ অগাস্ট ডোভালের বৈঠকের পরেই সিকিম, উত্তরাখণ্ড এবং অরুণাচল সীমান্তে সেনা বাড়ানো হয়েছে। জারি হয়েছে হাই অ্যালার্ট। শুধু তাই নয়, গুরুত্বপূর্ণ অফিসারদের ওই সব অঞ্চলে পাঠানো হচ্ছে।
সীমান্তেও আগের চেয়ে সেনাসংখ্যা অনেকটাই বাড়িয়েছে চীন। মাঝে সেনারা খানিকটা পিছিয়ে গেলেও ২৯ অগাস্টের ঘটনার পরে প্রকৃত সীমান্তরেখার খুব কাছে মর্টার, ট্যাঙ্ক নিয়ে এসেছে চীন। ভারতও সেনাসংখ্যা বাড়িয়েছে লাদাখে।
নেপালের ওলি সরকারকেও সঙ্গে রাখছে চীন। তাই উত্তরাখণ্ডেরকালাপানি অঞ্চলে বিশেষ সতর্কতা জারি হয়েছে। এই অঞ্চলকেই সম্প্রতি নিজেদের মানচিত্রে দেখিয়েছে নেপাল। কালাপানি অঞ্চলে ভারত, চীন এবং নেপালের ত্রিমুখী সীমান্ত আছে। অন্য দিকে সিকিমে ভারত, চীন এবং তিব্বতের সীমান্তেও অতিরিক্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে।