দারবানদিখান এবং দুকান অঞ্চলের সিরওয়ান এবং লিটল জ্যাব নদী দুটিতে বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। কুর্দিস্তানের পানির চাহিদা মেটানোর অন্যতম উৎস এ নদী দুটি। ইরান অব্যাহতভাবে পানি সরবরাহ কমাতে থাকালে চলমান ভয়াবতাহ আরো প্রকট রূপ নেবে।গেলো কয়েক দশক ধরে পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ইরাকের কুর্দিস্তানের নাগরিকেরা। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, তাদের ভোগান্তি এখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। কুর্দিস্তানে পানি সরবরাহের প্রধান দুটি নদীতেই বাঁধ তৈরি করেছে ইরান।
পানি সরবরাহ বন্ধের পাশাপাশি পরিবর্তন হয়ে গেছে নদীর গতিপথ। বিপাকে পড়েছে ওই অঞ্চলের ২০ লাখ মানুষের জীবনজীবিকা।থমকে যাবে জনজীবন এবং পরিবেশের ভারসাম্য। মিডল ইস্ট আইকে এ তথ্য জানান দারবানদিখানের পরিচালক রাহমান খানি।
গেলো তিন বছর ধরে ইরাকে পানি সরবরাহ অব্যাহতভাবে কমিয়ে আসছে ইরান। ফলে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষিখাত, তৈরি হচ্ছে তীব্র পানি সংকট।
গেলো মাসে ইরাকি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সিরওয়ান এবং লিটল জ্যাব নদীতে থেকে ইরাকের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় পানি সরবরাহ উল্লেখযোগ্য হারিয়ে কমিয়ে দিয়েছে তেহরান।খানি বলেন, হালাবজা, সুলাইমানিয়াহ, গার্মিয়া জেলা এবং দিয়ালা প্রদেশের ২০ লাখ মানুষের কৃষিখাত, মৎস প্রকল্প, পানীয়জল, পর্যটন এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ওই দুটি নদীর উপর নির্ভর করে।
গেলো কয়েক বছর ধরে নদীর বাঁধ প্রকল্প শুধু মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করেনি; হাজার হাজার মানুষকে অন্যত্র পাড়ি জমাতে বাধ্য করেছে। এছাড়া, কৃষি, জীববৈচিত্র্য এবং পর্যটনের ওপর তো প্রভাব আছেই। বলেন খানি। গেলো মাসে ইরান ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ পানি কম দিয়েছে। প্রতিদিন ১৫ কিউবিক মিটার করে পানি কমিয়ে দিচ্ছে। যা গেলো বছরের এ সময় থেকে ৬ মিটারের কম। সিরওয়ান নদীর ওপর ১৬টি বাঁধ নির্মাণের কারণে পানির প্রবাহ নিচে নেমে যায়। বৃহত্তর এ বাঁধ প্রকল্প কেরমানশাহ প্রদেশের দরিয়ানে ২০১৮ সালে এটি নির্মাণ করা হয়। যা ইরাকের সীমান্ত থেকে ২৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
২০১৬ সালে সেভ দি টাইগ্রেস ক্যাম্পেইন এক গবেষণায় জানায়, দরিয়ান বাঁধ ৩৪ কোটি কিউবিক পানি ধারণ করতে পারবে। যা ইরাকসহ পুরো অঞ্চলের জন্য হুমকি বলে সতর্ক করা হয়। দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলীয় সুলাইমানিয়াহ থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে সিরওয়ান নদীর ওপর দারবানদিখান বাঁধ অবস্থিত। যা ইরানের জাগেরোস পাহাড় থেকে উৎপত্তি হয়ে বাগদাদের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় টাইগ্রেস নদীতে শেষ হয়েছে। ওই বাঁধের পানি ধারণ ক্ষমতা ৩০ লাখ কিউবিক মিটার। যা কৃষি, জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার হতো।
ইরান বলেছে, তাদের এসব বাঁধ নির্মাণের উদ্দেশ্য হলো দেশটির দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকায় জলবিদ্যুৎ এবং কৃষিখাতের উন্নয়ন। গেলো বছর ইরানের ওয়াটার রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি জানিয়েছে ২০২১ সালের মধ্যে ১০৯টি নতুন বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা তাদের।