খুলনার দৌলতপুরে একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে রওনাকুল ইসলাম বাবরের জন্ম। পিতা মরহুম মোঃ হানিফ দৌলতপুর মহসিন স্কুলের কৃতি শিক্ষক ছিলেন। স্কুলে পড়াকালীন তিনি ছাত্র ইউনিয়নের সাথে যুক্ত হন। পরে এস. এস. সি পাশ করে ব্রজলাল কলেজে ভর্তি হলে নিজেকে ছাত্র রাজনীতিতে নিবেদন করেন। ১৯৬৮ সালে সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন এবং ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে একজন প্রথম সারির ছাত্র নেতা হিসেবে শুধু ব্রজলাল কলেজে নয় সারা খুলনা জেলার ছাত্রসমাজের কাছে পরিচিত হন।
১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা হওয়ার পর অন্যদের সাথে তিনিও দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন। শুরুতে তৎকালীন ছাত্রনেতা শেখ মনিরুজ্জামানের সাথে সংগঠনের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা কর্মীদের ভারতে ট্রেনিং এর জন্য পাঠিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করতে থাকেন।
দীর্ঘ কয়েকমাস এভাবে বাড়ি ছেড়ে কাজ করার পর ২৯ জুলাই তিনি তার অসুস্থ পিতার সাথে দেখা করতে দৌলতপুরের বাড়িতে আসেন। এলাকার রাজাকার বাহিনী খবর পেয়ে হানাদারদের দিয়ে আটক করিয়ে দৌলতপুরের বিখ্যাত পানচাষীর বিল্ডিংয়ে আটকে রাখে। তার সঙ্গে আটক করে তার ছোট ভাই জাকির হোসেন ও ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী তপন দাসকে।
সারাদিন নির্যাতনের পর সেদিন সন্ধ্যায় স্থানীয় মহেশ্বরপাশা বিলে অর্থাৎ কৃষি বিভাগের নার্সারি (বর্তমান প্রস্তাবিত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়) তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। অনেক জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে একবার বলা হয় – “তুমি একবার পাকিস্তান জিন্দাবাদ বল, তোমাকে ছেড়ে দেব”। বাবর উত্তরে চিৎকার করে উঠলো জয় বাংলা বলে।
তারপর প্রথম তার দুই হাত কেটে ফেলা হয় এবং এরপর দু’পা। পরে বেয়নেট দিয়ে চোখ উপড়ে ফেলা হয়। অবশেষে তাকে নির্মমভাবে জবাই করে হত্যা করা হয়।
দেশ স্বাধীন হলে ঐ স্থানে তার কঙ্কাল পাওয়া যায় এবং সেখানেই তাকে সমাহিত করা হয়।
এমন স্বাচ্ছা দেশপ্রেমিক শহীদ মুক্তিযুদ্ধার সন্মানে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভবন বা আবাসিক হল “রওনাকুল ইসলাম বাবর” ভাইয়ের নামে রাখার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
লেখকঃ শমিত জামান, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।