যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের নিয়ে বিশ্বব্যাপী মানুষের আগ্রহের কোনো কমতি নেই। তারা কখন কী করছেন, কোন পোশাক পরছেন, কী খাচ্ছেন, তাদের পছন্দের জিনিসগুলো কী- এমন সব বিচিত্র খবরে সবসময়ই পরিপূর্ণ থাকে পত্রপত্রিকার পাতাগুলো। এগুলো তো গেলো বিচিত্র জিনিসের খবর। পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতেও তাদের মতামত সবসময়ই গুরুত্বের সাথে দেখা হয়ে থাকে। এত গুরুত্বপূর্ণ যে প্রেসিডেন্ট, তার জীবনের উপর যেকোনো সময় যেকোনো দিক থেকে যে আঘাত আসতে পারে, তা তো সহজেই অনুমেয়।
সমাজের আর আট-দশজন সাধারণ মানুষের মতো তিনি অবশ্যই রাস্তায় একলা একলা ঘুরে বেড়াবেন না। তার আশেপাশে সবসময়ই থাকে স্পেশাল সিকিউরিটি ফো’র্সের সদস্যরা। কিন্তু যখন তিনি গাড়িতে চড়ে কোথাও যান কিংবা এরোপ্লেনে চড়ে দূরবর্তী কোনো অঞ্চলে যান, তখন পুরো ব্যাপারটিই পেয়ে বসে ভিন্ন এক মাত্রা। কারণ তখন প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা বিধানের পাশাপাশি দরকার পড়ে তার বাহনটিরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার। এজন্য সেগুলো এতসব উচ্চপ্রযুক্তি ব্যবহার করে বানানো হয়ে থাকে, যা জানলে বিস্মিত না হয়ে উপায় নেই।
আমেরিকার প্রেসিডেন্টের ব্যবহৃত গাড়িটির নাম ক্যাডিলাক ওয়ান। অবশ্য দ্য বিস্ট, লিমুজিন ওয়ান, স্টেজকোচ, ফার্স্ট কার প্রভৃতি নামেও সমধিক পরিচিতি রয়েছে এ গাড়িটির। তবে শুরুর দিকে কিন্তু এমন ছিলো না। তখন প্রেসিডেন্টের বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হতো আসলে ঘোড়ার গাড়ি। এটা একজন প্রেসিডেন্টকে তার সমর্থকদের আরো কাছাকাছি নিয়ে আসলেও নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা থেকেই যেত। অবশেষে প্রেসিডেন্ট জন এফ. কেনেডি আততায়ীর গু’লিতে নি’হত হবার পর নড়েচড়ে বসে দেশটির সিক্রেট সার্ভিস।
সময়ের সাথে সাথে আসতে থাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে বহনের জন্য নানা গাড়ি। এগুলোর মাঝে রয়েছে লিঙ্কন মডেল কে (১৯৩৯), লিঙ্কন কাস্টম (১৯৪২), লিঙ্কন কসমোপলিটান (১৯৫০), লিঙ্কন কন্টিনেন্টাল এসএস-১০০-এক্স (১৯৬১), লিঙ্কন কন্টিনেন্টাল (১৯৬৫), লিঙ্কন কন্টিনেন্টাল (১৯৬৯), লিঙ্কন কন্টিনেন্টাল (১৯৭২), ক্যাডিলাক ফ্লিটউড (১৯৮৩), লিঙ্কন টাউন কার (১৯৮৯), ক্যাডিলাক ফ্লিটউড (১৯৯৩), ক্যাডিলাক ডাভিল (২০০১), ক্যাডিলাক ডিটিএস (২০০৫) ও ক্যাডিলাক ওয়ান (২০০৯)। গাড়িটি লম্বায় ১৮ ফুট এবং এর উচ্চতা ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি।চলমান এ দুর্গ নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে স্টিল, সিরামিক, টাইটেনিয়াম ও অ্যালুমিনিয়াম।
বো’মা হা’মলা থেকে প্রেসিডেন্টকে রক্ষার জন্য এর নিচে দিয়ে চলে গেছে একটি স্টিলের প্লেট। বায়োকে’মিক্যাল আ’ক্রমণ সামলানোর জন্য এর কেবিনটি পুরোপুরিই সীল করে রাখা। শ’ত্রুপক্ষের হা’মলায় যেন টায়ার পাংচার না হয় সেজন্য এতে ব্যবহার করা হয়েছে কেভলার। ড্রাইভারের জানালা ছাড়া আর কোনো জানালাই খোলা যায় না, আর সেটাও কেবলমাত্র ৩ ইঞ্চি পরিমাণ। যদি কোনো কারণে টায়ার পাংচার হয়েও যায়, তবে স্টিলের রিমটিই গাড়িটিকে এগিয়ে নিতে যথেষ্ট।ফোমের সাহায্যে ফুয়েল ট্যাঙ্কটি এমনভাবে বন্ধ করে রাখা আছে যে, সরাসরি আ’ঘাত হানলেও তাতে বি’ষ্ফোরণ ঘটবে না।
অ’গ্নিনির্বা’পক য’ন্ত্রপাতি, অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং প্রেসিডেন্টের র’ক্তের গ্রুপের রক্ত রাখা থাকে পেছনের ট্যাঙ্কে। ভিড় এড়িয়ে প্রেসিডেন্টকে জায়গামতো সঠিক সময়ে পৌঁছে দেয়ার কাজটি নিষ্ঠার সাথেই করে যায় বিস্ট। এর পাঁচ ইঞ্চি পুরু বু’লেটপ্রুফ গ্লাস কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে বানানো তা অত্যন্ত গোপনীয়। গাড়িটির প্রকৃত ভর কত তা কেউই জানে না। ইন্টারনেটে এ সংক্রান্ত যত তথ্য পাওয়া যায় তার সবই অনুমান। গাড়ির সামনের দিকে রয়েছে কাঁদানে গ্যাস ও নাইট ভিশন ক্যামেরা। আট ইঞ্চি পুরুত্বের দরজাগুলো বোয়িং ৭৫৭ এর দরজার মতোই ভারী।
দরকারে ব্যবহারের জন্য ভেতরে আছে রেমিংটন শটগা’ন। বু’লেটপ্রুফ গ্লাসের প্রথম কয়েকটি স্তর সহজেই আগত বু’লেটকে ঠেকিয়ে দিতে সক্ষম। ভেতরে থাকা প্লাস্টিকের স্তরটি আরো কার্যকরভাবে বু’লেটকে ঠেকাতে সক্ষম।