মিয়ানমারে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখল করাকে ‘ক্যু’ হিসেবে অভিহিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এর মধ্য দিয়ে কার্যত যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি সহযোগিতা পর্যালোচনা করার পথে অগ্রসর হচ্ছে।
মঙ্গলবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক ব্রিফিংয়ে দুজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ওই ইঙ্গিত দেন। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের নিন্দা জানানোর পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দেন।
মিয়ানমারের ঘটনাকে সামরিক অভ্যুত্থান হিসেবে মূল্যায়ন করতেই রাজি নয় বেইজিং। তাদের ভাষায়, এটি ‘মন্ত্রিসভার রদবদল’ ছাড়া আর কিছুই নয়।
চীনের এই অবস্থান সত্ত্বেও গতকাল রাতে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমার ইস্যুতে জরুরি বৈঠকে বসে। সেখানে মিয়ানমারবিষয়ক জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত ক্রিস্টিন শ্রেনার বার্গনার পরিস্থিতি তুলে ধরেন।
বৈঠকে সামরিক অভ্যুত্থানের তীব্র নিন্দা জানানোর কথা উল্লেখ করে টুইট বার্তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, নরওয়ে ও আয়ারল্যান্ড।
বৈঠক শেষে যুক্তরাজ্য নিরাপত্তা পরিষদের পক্ষে একটি বিবৃতির খসড়া নিয়ে আলোচনা করলেও চীন এ বিষয়ে আগ্রহ দেখায়নি।
নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত বলেন, মিয়ানমার ইস্যুতে বিশ্বজুড়ে ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ আছে।
আমি আজ সকালে (বাংলাদেশ সময় গত মধ্যরাতে) আমার সহকর্মীদের মধ্যে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে সেই উদ্বেগের কথা শুনেছি। পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা ঠিক করতে নিরাপত্তা পরিষদের সহকর্মীরা আলোচনা চালিয়ে যাব।
সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলের নিন্দা অব্যাহত আছে। আনুষ্ঠানিকভাবে নিন্দা জানাতে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে ব্রিটিশ সরকার।
নিন্দা জানানোর তালিকায় যুক্ত হয়েছে অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ)। এ ছাড়া মিয়ানমারে ব্যাপক হারে ধরপাকড় শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিশন।
অন্যদিকে অং সান সু চির মুক্তির দাবি জানিয়েছে তাঁর দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)। অভ্যুত্থানের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে অনেক দেশ ও সংস্থা। মিয়ানমার ইস্যুতে জরুরি বৈঠক ডেকেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ।
তবে এত কিছুর পরও নিজেদের মতো করে’ সব কিছু ঢেলে সাজানো অব্যাহত রেখেছে দেশটির সামরিক বাহিনী। তারা বেশির ভাগ এমপিকে কার্যত বন্দি করে রেখেছে।
জো বাইডেন বলেছেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী যাতে অবিলম্বে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়, সে জন্য তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার এক প্রতিবেদনে অভ্যুত্থানের ঘটনাকে মূল্যায়ন করা হয়েছে ‘মন্ত্রিসভার রদবদল’ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর ‘মতবিরোধ’ হিসেবে।
সিনহুয়া লিখেছে, আশা করছি দলগুলো নিজেদের মতবিরোধ দূর করতে পারবে।
অন্যদিকে ক্ষমতার পালাবদলের কারণ হিসেবে চীনের আরেক পত্রিকা গ্লোবাল টাইমস লিখেছে, মিয়ানমারের ক্ষমতা-কাঠামোতে অসংগতি রয়েছে। পত্রিকাটি আরো লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প পরাজয় মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।
তাঁর উসকানিতেই মার্কিন কংগ্রেসে হামলা হয়েছে। কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ট্রাম্পের এমন কর্মকাণ্ড মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তাদের উৎসাহ জুগিয়েছে।
মিয়ানমার পরিস্থিতি : গত নভেম্বরের নির্বাচন নিয়ে সু চি সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর টানাপড়েন চলছিল।
এর মধ্যে গত সোমবার ভোরে রাজধানী নেপিডোতে অভিযান চালিয়ে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর সু চি ও প্রেসিডেন্ট উয়িন মিন্টসহ এনএলডির শীর্ষ নেতাদের আটক করে সেনাবাহিনী।
এই দুজনকে কোথায় বন্দি করে রাখা হয়েছে, তা গতকাল পর্যন্ত জানা যায়নি। সু চিসহ দলের সব নেতার মুক্তির দাবিতে গতকাল বিবৃতি দিয়েছে এনএলডি।
অনেক পার্লামেন্ট সদস্যকে তাঁদের ডরমিটরিতে কার্যত গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। এনএলডি থেকে নির্বাচিত এক এমপি গতকাল বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, বাইরে সেনারা টহল দিচ্ছে। আমরা বাইরে যেতে পারছি না।